গণতান্ত্রিক সমাজবাদ বা ডেমোক্রেটিক সোশালিজম (প্রস্তাবনা) || ডঃ পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রস্তাবনা

(বহুদিন ধরে আমার ইচ্ছে ছিল বাংলায় এই বিষয়ে লেখার। শিলচরের কাগজ বার্তালিপির সমর্থনে সেই কাজটা শুরু করা গেছে। এই বিষয়ে একটা বই প্রকাশ করার ইচ্ছে থাকলো। 
অনেকেই আমাকে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছেন গণতান্ত্রিক সমাজবাদ বা ডেমোক্রেটিক সোশালিজম বিষয়টা সম্পর্কে কিছু লিখতে। আরো কয়েকজন বলেছেন নতুন যুগের নতুন রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে আমার মতামত কী, তা জানাতে। এর আগে আমি ইংরিজি ভাষায় সেসব নিয়ে লিখেছি, এবং বক্তৃতা-আলোচনা করেছি বিভিন্ন জায়গায়। তার মধ্যে স্পেন ও ইংল্যাণ্ডে আমার দুটি আলোচনার কথা মনে পড়ছে। কিন্তু বাংলাতে লেখার সুযোগ হয়নি তেমন। আজ, আসামের বরাক উপত্যকার একটি জনপ্রিয় কাগজ বার্তালিপিতে আমার একটি বিশদ আলোচনা বেরিয়েছে। যাঁরা ইচ্ছুক ও আগ্রহী, তাঁরা পড়তে পারেন। 
এই মডেল আমার নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাপ্রসূত। এই মডেলে আমি একদিকে মুনাফাকেন্দ্রিক ও অত্যাচারী শাসকশ্রেণী (অর্থাৎ ১%) এবং অন্যদিকে চরম দক্ষিণ ও চরম বাম -- এই দুইয়ের থেকে দূরে থেকে জনমুখী এক ৯৯%'এর কোয়ালিশন গড়ে তোলার কথা বলেছি। কারণ, আমার মতে পুরোনো দিনের বাম ও দক্ষিণ এই বিভাজন কৃত্রিম ও আজকের দিনে অচল। এই বিভাজন আমাদের ৯৯%'এর শুধুমাত্র ক্ষতিই করেছে। এই বাক্স থেকে বেরিয়ে এসে নতুন কোয়ালিশন গড়ে তোলা আজ অবশ্যপ্রয়োজনীয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তা গড়ে উঠেছে। আমাদের দেশেও তা দরকার এখনই। )

ধরা যাক একটা বৃত্ত বা নির্দিষ্টভাবে বললে, একটি গ্লোব। এর উপরিভাগে রয়েছেন কিছু মানুষ। শতকরা হিসেবে দশ শতাংশ।  বৃত্তের ঠিক মধ্যভাগ বা বলা ভালো, কেন্দ্রে রয়েছেন আরও কিছু মানুষ। শতকরা হিসেবে মেরেকেটে এক শতাংশ। আর পুরো বৃত্ত জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন বাকি ৮৯ শতাংশ মানুষ। এই বৃহৎ সংখ্যক মানুষকে নিয়েই গড়ে উঠেছে দ্বিতীয় বৃত্ত। দ্য সেকেন্ড সার্কল। বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু ও উপরিভাগ মিলিয়ে  অত্যল্প সংখ্যক যে নিয়ন্ত্রক অংশ বা শ্রেণি, এর সঙ্গে দ্বিতীয় বৃত্তের অবশিষ্ট যে বিপুল অংশ, এই দুই শ্রেণির মধ্যে আনুপাতিক যে নিরন্তর টানাপোড়েন চলছে , মূলত সেটাই একটি রাষ্ট্রের নীতি বা পলিসি মেকিং -এর গতিপথ নির্ধারণ করে। তবে সেকেন্ড সার্কলের এই ৮৯%-এর হিসেবটি একেক রাষ্ট্রে একেক রকম হতে পারে, সেটা নির্ভর করে শিক্ষা ও সমাজ ব্যবস্থার ওপর।

উত্তর কলকাতার এক নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। আমার বাবা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের একনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন। আমিও ছাত্রাবস্থায় সংঘের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম। পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় চলে আসি। বেশ কিছুদিন এই দেশে অধ্যাপনা করেছি। তারপর নিশ্চিন্ত প্রথাগত  জীবন থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকতার পাঠ নিই, হার্ডকোর জার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করেছি, এবং এখনও সাংবাদিকতার সঙ্গে পুরোপুরি জড়িয়ে আছি। তবে আজ বহু বছর ধরে আমি আমেরিকায় ব্ল্যাক, পরিযায়ী শ্রমিক, উদ্বাস্তু, এককথায় নিপীড়িত, অবহেলিত মানুষদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করছি। এই আন্দোলন পথের আন্দোলন। পথে নেমে আন্দোলন। 

নিজের সম্পর্কে এত কথা বললাম শুধু একটিই কারণে; কারণটা এই যে, গত পঁয়ত্রিশ বছর ধরে আমি আমেরিকার জনজীবনের বিত্তবান প্রভাবশালী মহলকে কাছ থেকে দেখেছি, আবার বৈভবের শেষ ঠিকানা সব-পেয়েছির-দেশ আমেরিকার নিপীড়িত শোষিত দলিত শ্রেণির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করেছি, তাঁদের না-পাওয়ার যন্ত্রণার শরিক হয়েছি। ভারতের মতো একটি দেশের চূড়ান্ত দক্ষিণপন্থী একটি রেজিমেন্টেড শিবির  থেকে আমার যাত্রা শুরু। এককথায়  রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতিটি বিত্তশ্রেণির বিশ্বাস, নীতি ও মানসিকতাকে আমি অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছি। আমার এই বহুমাত্রিক যাত্রাপথের নিবিড় অনুধাবনেরই ফলশ্রুতি এই থিয়োরি। দ্য সেকেন্ড সার্কল।

তা, এই সেকেন্ড সার্কল বা দ্বিতীয় বৃত্তকে ওপর থেকে আবৃত করে রেখেছে উপরিভাগের একটি পরত, যে-পরত প্রবলভাবে দৃশ্যমান এবং প্রভাববিস্তারকারী। এরাই হচ্ছে চরম দক্ষিণপন্থী ও চরম বামপন্থী। আল্ট্রা রাইট ও আল্ট্রালেফট। যে বিপুল সংখ্যক মানুষ, যাকে আমরা আম আদমি বলি, তারা মূলত যুযুধান এই দুই চরমপন্থী শিবির দ্বারা পরিচালিত, নিয়ন্ত্রিত, বা আরও নিদিষ্টভাবে বললে আদ্যন্ত বিপরীত মেরুর এই দুই চরমপন্থী শিবির কার্যত দ্বিতীয় বৃত্তের মগজ ধোলাই করে তাদের চালিত করে, এবং প্রয়োজনে দু'পক্ষকে লড়িয়ে দেয়। 


কিন্তু উপরিভাগের দৃশ্যমান এই দুই বিপরীত মেরুর টিকিটি কিন্তু বাঁধা বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুতে। দীর্ঘ ও নিবিড় অনুধাবনে আমি প্রত্যয়ের সঙ্গে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, মাত্র এক শতাংশ মানুষ নিয়ে এই যে নিরঙ্কুশ প্রভাবশালী কেন্দ্রবিন্দু, এরাই বিশ্বায়নের এই পৃথিবীতে চূড়ান্ত নিয়ন্তা। দ্য আলটিমেট ডিসাইডিং অ্যান্ড ডিভাইডিং ফোর্স।এবং আল্টিমেট কন্ট্রোলিং ফোর্সও বটে। প্রচন্ড শক্তিশালী ও নিষ্ঠুর। মানুষের জীবনের কোনো মূল্যই নেই এদের কাছে। মুনাফা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা দখলই এদের একমাত্র লক্ষ্য। 

এরা শুধু ভিন্ন মেরুর চরম দুই শিবিরের নিয়ন্ত্রক নয়, জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশের এই বিপুল পরাক্রমী কেন্দ্রবিন্দুই আসলে রাষ্ট্রের যাবতীয় ক্ষমতার গর্ভগৃহ। এই এক শতাংশের কেন্দ্রবিন্দুই হচ্ছে কর্পোরেট সেক্টর। বৃত্তের পৃষ্ঠভূমির যুযুধান দুই ভিন্ন মেরুর শক্তিকে এরাই ইন্ধন জোগায়। এবং চরমপন্থী দুই শিবিরের তথাকথিত আদর্শের সংঘাত দ্বিতীয় বৃত্তে মেরুকরণের প্রেক্ষাপট রচনা করে। আমেরিকার মতো আদ্যন্ত পুঁজিবাদী দেশ থেকে শুরু করে ভারতের মতো ওয়েলফেয়ার ও ওপেন মার্কেটের টাগ অব ওয়ারে বিভ্রান্ত গণতন্ত্রে এই বৃত্তেরই  উথালপাতাল খেলা চলছে। মুশকিলটা হচ্ছে, এই খেলায় ক্রীড়নক যারা, অর্থাৎ দ্বিতীয় বৃত্তের বিপুল সংখ্যক সাধারণ খেটে খাওয়া ছাপোষা মানুষ, তারা দুই চরমপন্থী শিবিরের তথাকথিত আদর্শের অন্তঃসারশূন্য সংঘাতের শিকার। 

বাস্তব হলো, চরম ডান বা চরম বাম, এই দুই শিবিরই কিন্তু আমজনতার জীবনধারণে কোনও গুণগত পরিবর্তন আনতে অপারগ। বরং তাদের তথাকথিত আদর্শের সংঘাত দ্বিতীয় বৃত্তে নিরন্তর এক অস্থিরতা জিইয়ে রাখে। এক্ষেত্রে চরম ডান ও বামপন্থীরা আসলে নিমিত্তমাত্র। মূল সংঘাতটা কার্যত এক শতাংশের ওই কেন্দ্রবিন্দু বনাম ৮৯% শতাংশের দ্বিতীয় বৃত্তের। আল্ট্রা রাইট ও আল্ট্রা লেফট আসলে এক বাহানা। আইওয়াশ। কারণ কোনও এক মোড়ে পৌঁছে রাইট ও লেফট একসময় মিলেমিশে যায়। হয়ে ওঠে একই মুদ্রার এ পিঠ আর ও পিঠ। নীতির ক্ষেত্রে না হলেও কার্যপদ্ধতির ক্ষেত্রে। উগ্র দক্ষিণপন্থা ফ্যাসিজমের মোড়কে কাজ করে, এবং উগ্র বামপন্থা উগ্র কম্যুনিজমের মোড়কে। মিল হল, দুদিকেই চলছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। হিটলার, মুসোলিনি একদিকে, অন্যদিকে  স্তালিন অথবা গ্যাং অব ফোর।

রাইট ও লেফট উইং রাজনীতির যে ঐতিহ্য, তা আপাতদৃষ্টিতে ইউরোপীয় ঘরানার হলেও এর শেকড় কিন্তু প্রোথিত রয়েছে ক্রিশ্চান ট্র্যাডিশনে। ট্র্যাডিশনটা এই যে, রাজার ডানদিকে বসবে রাজার সমর্থকরা, যারা বিশ্বাস করে যে রাজার কথার ওপর আর কোনও কথা বলা যায় না। আর বাঁদিকে বসবে তারাই যারা মনে করে রাজার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা থাকা উচিত নয়, রাজার আদেশকেও প্রশ্ন করার অধিকার তাদের রয়েছে। ১৭৮৯ সালে ফ্রান্সে নতুন বিপ্লবের পর থেকে শিবিরকরণের এই রাজনৈতিক পরম্পরা স্বীকৃতি পেতে শুরু করে। কিন্তু নির্মোহ বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, রাজনীতিকে এভাবে আড়াআড়ি ডান-বামে বিভাজিত করা বাস্তবসম্মত নয়।

১৯৮০ সালে আমেরিকায় রোনাল্ড রেগন ও ব্রিটেনে মার্গারেট থ্যাচারের সময় থেকে মুনাফাসর্বস্ব পুঁজিবাদ দ্রুত জাল বিস্তার করতে শুরু করে। এই জাল সর্বগ্রাসী। লাগামছাড়া। এই বিকৃত পুঁজিবাদ যত ডালপালা ছড়িয়েছে, ততই দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সাধারণ মানুষের। তবে ক্ষমতার চাবিকাঠি যেহেতু এক শতাংশের ওই কেন্দ্রবিন্দুর হাতে, তাই নানা প্রক্রিয়ায় উপরিভাগের দুই ভিন্ন মেরুর আদর্শগত সংঘাতকে  সামনে রেখে দ্বিতীয় বৃত্তকে নিজেদের মধ্যে লাগাতার লড়িয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে।   

এই কৌশলের নানা উপকরণ উপচার রয়েছে। পরিতাপ ও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, জনমতকে প্রভাবিত করে যে মাধ্যম, সেই মিডিয়াও এখন ওই এক শতাংশের কুক্ষিগত। তার ওপর এখন সোশ্যাল মিডিয়া। দ্বিতীয় বৃত্তে সাম্প্রদায়িক বা গোষ্ঠীগত উত্তেজনা নিরন্তর থেকেই যায়। এক কথায়, বৃত্তের কেন্দ্রে রয়েছে যে প্রতাপশালী এক শতাংশ, তাদেরই কুক্ষিগত রাষ্ট্রের যাবতীয় মেশিনারি। মিলিটারি থেকে মিডিয়ায় নিরঙ্কুশ প্রভাব এই এক শতাংশেরই।

বৃত্তের উপরিভাগে দশ শতাংশ মানুষের যে পাতলা আস্তরণ, এরাই চরমপন্থী। আল্ট্রা রাইট ও আল্ট্রা লেফট। এরা হিংসায় বিশ্বাসী, তারা হিংসার অস্ত্রে ক্ষমতা দখল করে রাখতে চায়। এক কথায় তারা ফ্যাসিস্ট, অথবা চরমপন্থী কমিউনিস্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি চরম দক্ষিণপন্থার মুখ হন, তাহলে নকশালরা হচ্ছে চরম বামপন্থার ধ্বজাধারী। কিংবা ধরুন ইসলামী উগ্রপন্থা। অথবা ভায়োলেন্ট কাস্ট বা কালার পলিটিক্স। এই দুই শিবিরই কখনও ধর্ম, কখনও ভাষা, কখনও জাতপাতের জিগির তুলে তাদের ফ্যাসিস্ট অ্যাজেন্ডা টিকিয়ে রাখতে চায়। 

এক শতাংশের প্রভাবশালী নিয়ন্তা ও দশ শতাংশের চরমপন্থী শিবিরের বাইরে যে দ্বিতীয় বৃত্ত, যেখানে অবস্থান একটি রাষ্ট্রের উননব্বই শতাংশ আমআদমির, তারা নিজেদের  অজান্তেই অর্থগৃধ্নু কর্পোরেট ও চরমপন্থী-ফ্যাসিস্ট শিবিরের হাতের ক্রীড়নক। কখনও ধর্ম কখনও ভাষা কখনও জাতপাতের দোহাই দিয়ে এই সাধারণ মানুষকে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়িয়ে  দেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণ সৃষ্টি করছে ধর্ম অথবা জাতের লড়াই। বাম সৃষ্টি করছে অনেক সময় কৃত্রিম এক শ্রেণিসংগ্রাম। যা ভারতের মতো দেশে ইউরোপ আমেরিকা থেকে অনেক বেশি জটিল। ধর্ম বা ভাষার নামে তারা একে অপরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করছে, এবং নিয়ন্ত্রক শ্রেণির সুপরিকল্পিত এজেন্ডা ওই বিদ্বেষের রক্তক্ষয়ী বিস্ফোরণও ঘটাচ্ছে। অথচ দ্বিতীয় বৃত্তের এই মানুষগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থান মূলত অভিন্ন। তাদের সংকট, তাদের আশা আকাঙ্ক্ষা অভিন্ন, রাষ্ট্রের কাছে তাদের প্রত্যাশাও একই।

ঠিক এই বিন্দু থেকেই আমার সেকেন্ড সার্কল থিয়োরির যাত্রা শুরু। আমি দেখেছি, দ্বিতীয় বৃত্তের এই গরিষ্ঠসংখ্যক মানুষের মধ্যে ধর্ম ভাষা জাতপাত বা তথাকথিত রাজনৈতিক আদর্শের নামে যে বিভাজন বা দূরত্ব, তা আদৌ অলঙ্ঘনীয়  নয়। নিরন্তর ও সদর্থক ডায়ালগের মাধ্যমে এই বিভাজন বা দূরত্বকে অতিক্রম  করা সম্ভব। আজ সরকার যদি ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার ওপর সুদ কমিয়ে দেয়, এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ মানুষ, সে তারা দক্ষিণপন্থা বা বামপন্থা যে-আদর্শেই আস্থাশীল হোন না কেন। মুক্ত অর্থনীতির নামে ভারতের মতো গরিব দেশে যে লাগামহীন বেসরকারিকরণ হচ্ছে, এর শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, সে তিনি হিন্দু হোন বা মুসলিম বা দলিত। চাকরির কোনও স্থিরতা নেই। স্বাস্থ্য পরিষেবা আমআদমির নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে একই চিত্র। সরকারি স্কুলের মানে পরিকল্পিতভাবে অবনমন ঘটানো হচ্ছে, অথচ প্রাইভেট স্কুলে মাশুল আকাশছোঁয়া। বিকৃত পুঁজিবাদে আচ্ছন্ন, আই এম এফ ও বিশ্বব্যাংকের কাছে বিক্রীত সরকারের এই লাগামহীন বেসরকারিকরণের শিকার হচ্ছেন যে আম আদমি, তাদের কাছে দক্ষিণপন্থা আর বামপন্থার ঠিক কী মূল্য আছে, বা থাকতে পারে বা থাকা উচিত? এই প্রশ্ন তাদের নিজেদেরই নিজেদের করতে হবে এবং ডায়ালগের মাধ্যমে এ থেকে উত্তরণের দিশা বের করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে তারা যদি অনড় অবস্থান নিয়ে নিজেদের দক্ষিণ বা বামপন্থাকে আঁকড়ে বসে থাকে, তাহলে আখেরে সেকেন্ড সার্কলের বিপুল সংখ্যক এই মানুষের নিজেদেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি। চরম বাম বা চরম দক্ষিণের মধ্যে রিকন্সিলিয়েশন সম্ভব নয়। তাদের মধ্যে বিভাজনরেখা স্থায়ী, এবং অলঙ্ঘ্যনীয়। কিন্তু মডারেট বাম ও দক্ষিণের মধ্যে, এবং যারা কোনদিকেই দৃঢ়ভাবে অবস্থান করেনা, তাদের মধ্যে বহু বিষয়ে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করা সম্ভব। আমি দেখেছি, আলোচনা বা ডায়ালগের মাধ্যমে দ্বিতীয় বৃত্তের সাধারণ মানুষেরা যদি গণতান্ত্রিক সাম্যাবস্থা বা ডেমোক্রেটিক সোশালিজম প্রতিষ্ঠা করতে পারে, একমাত্র তাহলেই আজকের এই সর্বগ্রাসী বিশ্বায়নের মধ্যেও তারা নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থানকে সুদৃঢ় রাখতে পারবে। ডেমোক্রেটিক সোশালিজম কখনই পুঁজিবাদকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করছে না, মুক্ত অর্থনীতির এই শতাব্দীতে তা আর সম্ভবও নয়। কিন্তু একই সঙ্গে রাষ্ট্রের ভূমিকা বা বলা ভালো দায়িত্বকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। 

এক কথায় পুঁজিবাদ ও সাম্যাবস্থার মধ্যে একটি ব্যালেন্সিং অ্যাক্টই হচ্ছে দ্য সেকেন্ড সার্কল থিয়োরির নির্যাস ও উপসংহার। এটা কোনও ইউটোপিয়ান অ্যাডভেঞ্চারিজম নয়, প্রথম বিশ্বেরই অনেক উন্নত দেশ এই নীতি অনুসরণ করছে। যেমন কানাডা, ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, এবং জার্মানি। ব্রেজিল অথবা বলিভিয়াতে লুলা ডি'সিলভা অথবা ইভো মোরালিস এই ব্যবস্থা কায়েম করতে কিছুটা সক্ষম হয়েছিলেন। অথবা, মালয়েশিয়াতে মহাথির বিন মোহাম্মেদ। 

(বার্তালিপি কাগজে অরিজিৎ আদিত্যর অনুলিখন। লেখক কর্তৃক সংশোধিত।)
ডঃ পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রুকলিন, নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 
২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

sabinvadnais বলেছেন…
The Wizard of Oz Casino & Resort | Jobs | MJH
The Wizard of 통영 출장안마 Oz Casino & Resort. Located 계룡 출장안마 in Hollywood, the 정읍 출장마사지 award-winning 의왕 출장안마 Casino 강릉 출장샵 at Hollywood, FL. Click to see what it's like to play at Hollywood, FL.