কুরআনে বিজ্ঞানের উৎস সন্ধানে।। সুষুপ্ত পাঠক


হযরত মুহাম্মদের সমসাময়িক মক্কায় শুধু যে উট আর দুম্মা চড়ানো রাখালই ছিল এমনটা আমাদের অনেকেরই ধারণা। এমন কি “সেই ১৪০০০ বছর আগে” এইরকম একটি বিস্ময় প্রকাশ করে আরবের সামাজিক অবস্থাকে আদিম বানানোর যে প্রয়াস তা সঠিক নয়। কারণ ততদিনে আরবরা অন্যান্য প্রতিভাবাণ জাতির সংস্পর্শে এসে জ্ঞান লাভ করেছিল। তবে হ্যা, আরবদের মধ্যে এই চিন্তা ও জ্ঞানের আলোতে আসা লোকজন খুব কম ছিল। তার মানে এই না তখন আরবদের মধ্যে কেউ চিকিৎসা বিজ্ঞান যেমন ভ্রুণ, মানুষের জন্ম রহস্য, মহাকাশ বিদ্যা, সূর্য, চাঁদ, পৃথিবী সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। আরবদের মধ্যে সীমিত আকারে কিছু চিন্তাশীল মানুষদের মধ্যে এসবের চর্চা ছিল। তবে সেই সব জ্ঞান এরিস্টটলদের (খ্রিস্টের জন্মের ৩৫০ বছর আগে উনি পৃথিবীতে ছিলেন) মত জ্ঞানী যাদের জন্ম মুহাম্মদের জন্মের বহু বহু বছর আগে তাদের দ্বারা চালিত। এর আগে হিপোক্রেটাস ৪০০ খ্রিস্টপূর্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে বিপুল সমৃদ্ধ করে ফেলেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করে ছিলেন কেমন করে সন্তান জন্ম নেয়। এরিস্টটল ৩৫০ খ্রিস্টপূর্বে মানব শিশুর জন্ম রহস্য ব্যাখ্যা করেছিলেন। এছাড়া ভারতীয় চিকিৎসাবিদ চরক খ্রিস্টপূর্ব ১২৩ সময়ে ভ্রণ সম্পর্কে বিস্তারিত আবিষ্কার করেছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা হযরত মুহাম্মদের চাচাতো ভাই হারিস ইবনে কালাদা ছিলেন একজন সুচিকিৎসক। তিনি এরিস্টটল, হিপোক্রেটাস ও গেলেন লিখিত চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যায়ন করেছিলেন। উনার চিকিৎসাবিদ্যা এতই সুখ্যাতি হয়েছিল যে পারস্য সম্রাট খসরু তাকে রাজ দরবারে ডেকে নিয়ে যান। হারিস থেকে হযরত মুহাম্মদ কুরআনে ভ্রুণ, মানব শিশুর জন্ম রহস্য ও মহাকাশ জ্ঞান বিষয়ে অনেকটাই গ্রহণ করেছিলেন। যেমন কুরআন বলছে-
//৯৬:২ - সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।
৭৫:৩৬-৩৯ মানুষ কি মনে করে যে, তাকে এমনি ছেড়ে দেয়া হবে? সে কি স্খলিত বীর্য ছিল না? অতঃপর সে ছিল রক্তপিন্ড, অতঃপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন। অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন যুগল নর ও নারী।//
গেলেন, হিপোক্রেটাস, এরিস্টটল প্রমুখদের ধারণা ছিল এরকমই। হারিসের মত মক্কার প্রসিদ্ধ চিকিৎসকরা যে মেডিকেল সাইয়েন্স তখনকার যুগে পড়েছিলেন সেখানে গেলেনের ২৬টি বই ছিল তাদের পাঠ্য। কুরআনের বিজ্ঞান বিষয়ে আল্লার সমস্ত জ্ঞান এই হারিসদের মত বিদেশ থেকে লেখাপড়া করে আসা মানুষদের কাছ থেকে ধার করা। তবে হারিস হযরত মুহাম্মদের কুরআনের আয়াত নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতেন। তিনি এসবকে মুহাম্মদের নিজস্ব কবিতা বলতেন। হারিসের মত শিক্ষিত জ্ঞানী লোকের হাসিরপাত্র হয়ে মুহাম্মদ কতখানি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন বুঝা যায় যখন বদরের যুদ্ধে পর হারিসকে বন্দি করে মুহাম্মদ হত্যা করার আদেশ দেন! (সুত্র: সীরাত ইবনে হিশাম)।
কুরআনে মহাকাশ ও চিকিৎসা সম্পর্কে যত আয়াত আছে সবই এরিস্টল ও টলেমির সময়কার জ্ঞান। বলাই বাহুল্য কুপারনিকাসের থিউরীর পর পূর্বাদের থিউরীর মৃত্যু ঘটেছিল। চিকিৎসা বিজ্ঞানের তখনকার সীমাবন্ধ যন্ত্রপাতির দরুণ তখন পর্যন্ত নারী-পুরুষের মিলন থেকে শিশু ভূমিস্ট হওয়া পর্যন্ত ধাপটি সম্পূর্ণ ছিল না। কুরআনে সেই অসম্পূর্ণটিই রয়ে গেছে। কুরআনে তাই রক্তপিন্ড থেকে মানুষের জন্মের দাবী আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের আবিস্কারে বাতিল হয়ে গেছে। রক্তপিন্ডে থেকে ভ্রণ সৃষ্টির ধারণা এরিস্টল, গেলেন, হিপোক্রেটাসদের সময় পর্যন্ত প্রচলিত ছিল।
হারিসদের মত উচ্চ শিক্ষিত জ্ঞানী মানুষ যারা প্রাচীন গ্রীক জ্ঞানীদের রচনার সংম্পর্শে এসেছিলেন তারা জুয়ারী আর মদখোরদের ভাষা আরবীতে ধুবই দুর্বল ও ব্যাকরণগতভাবে ভুল কুরআনের বাণী শুনে হাসাহাসি করবে এটা খুবই স্বাভাবিক। এই জন্যই কুরআনে কাফেরদের কুরআন নিয়ে হাসাহাসিকে বার বার সাবধান করা হয়েছে ভবিষ্যতে দেখে নেয়া হবে বলে। আল্লাহ তাদের উপযুক্ত সাজা দিবেন। আল্লাহ উপরন্তু তাদের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে তার সঙ্গে কাব্য প্রতিভার প্রতিযোগিতায় নামার জন্য! আরবের সামান্য কবিদের আল্লাহ খুবই শিশুসুলভ ভাষায় চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন এভাবে-
//এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মতো একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও-এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো। (সুরা বাকারা-২৩)//
আরো-
//তারা কি বলে? কোরআন তুমি তৈরী করেছ? তুমি বল, তবে তোমরাও অনুরূপ দশটি সূরা তৈরী করে নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পার ডেকে নাও, যদি তোমাদের কথা সত্য হয়ে থাকে।(১১:১৩)//
শেক্সপিয়রের কোন লাইনকে যদি দেখিয়ে বলা হয়- যাও, অনুরূপ একটি লাইন লিখে নিয়ে এসো, যাদের পারো সাহায্য নিয়ে- এর অর্থ কি দাঁড়াবে? শ্রেক্সপিয়রের কাব্যগুণ কিভাবে বিচার করা হবে? কবিতার কি কোন সর্বচ্চ বিচারালয় আছে যেখানে লিখিত বৈশিষ্ট ও গুণ থেকে মিলিয়ে নিয়ে কাব্য গুণ কত মার্ক পেলো ঠিক করা হবে? নিঃসন্দেহে শ্রেক্সপিয়র অনেক বড় কবি, কিন্তু তার কোন একটি লাইনের অনুরূপ লিখে আনার চ্যালেঞ্জ কি শ্রেক্সপিয়র যে সব কারণে “বড় কবি” সেরকম কোন নির্ধারিত বৈশিষ্টের সঙ্গে বিচার করে রায় দেয়া যাবে? কুরআন নিয়ে হাসাহাসি কি আরবের লোকেরা এর দুর্বল কাব্য ভাষার জন্য করেছিল? তাহলে এই চ্যালেঞ্জ দিয়ে কি বুঝানো হয়েছে? কুরআন যদি এইরকম বোকা বোকা দাবী করে তার কাব্য গুণ নিয়ে তাহলে অবশ্যই কুরআনকেও বলা যায়- যাও গীতাঞ্জলীর অনুরূপ কোন কবিতা লিখে এনে দেখাও! গীতাঞ্জলীর অনুরূপ লিখতে তোমরা ব্যর্থ হবে!... কি হাস্যকর দাবী! অথচ সারা দুনিয়ার মুসলিমরা না বুঝে আজো দাবী করে, কুরআনের কোন সুরা মানুষ হাজার চেষ্টা করেও লিথতে পারবো না! এটি একটি বোকা বিশ্বাস। আরবী ভাষা জানা যে কেউ কুরআনের সুরার অনুরূপ সুরা লিখতে পারবে। শুধু তাই নয়, একজন ভাল আরবী ব্যাকরণ জানা লোক এক্ষেত্রে কোন রকম ব্যাকরণ ভুল করবে না।
কুরআন বার বার এই আকাশ, এই খেজুর গাছ, জয়তুনের ডাল, মধু ইত্যাদি দেখিয়ে বলছেন, তোমরা কি এসব দেখেও বিশ্বাস করতে পারো না আমিই মুহাম্মদের উপর কুরআন নাযিল করেছি?
//وَجَعَلْنَا فِيهَا جَنَّاتٍ مِن نَّخِيلٍ وَأَعْنَابٍ وَفَجَّرْنَا فِيهَا مِنْ الْعُيُونِ- আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং প্রবাহিত করি তাতে নির্ঝরিণী
//لِيَأْكُلُوا مِن ثَمَرِهِ وَمَا عَمِلَتْهُ أَيْدِيهِمْ أَفَلَا يَشْكُرُونَ- যাতে তারা তার ফল খায়। তাদের হাত একে সৃষ্টি করে না। অতঃপর তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না কেন?// [সুরা ইয়াসিন-৩৪-৩৫]
এটা কি কোন ধর্মীয় গ্রন্থের ঐশ্বরিকতা প্রমাণ করে? কোন নবী ও তার দাবীকৃত ঈশ্বরের প্রমাণ এতে কিভাবে প্রমাণ হয়? ইহুদী-খ্রিস্টান মায় আরবের পৌত্তলিকরাও তো খেজুর, আঙ্গুর একজন ঈশ্বর তাদের জন্য তৈরি করেছেন বলে তারা বিশ্বাস করত। আবু জাহেল, আবু লাহাবও তো এই সমস্ত ফল তাদের জন্য আল্লাহর নিয়ামত বলে দাবী করতো। যখন হযরত মুহাম্মদকে নবী হিসেবে আল্লাহর তরফ থেকে কোন প্রমাণ হাজির করতে বলা হতো তখনই তিনি এইসব ছেলেভুলানো গান গাইতেন। আর এই জন্যই তথাকথিত কাফেররা কুরআন শুনে হাসাহাসি করতো।
কুরআন দাবী করেছে-
//وَإِنَّهُ لَكِتَابٌ عَزِيزٌ. لَا يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِ تَنْزِيلٌ مِنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ.
আর এটি নিশ্চয় এক সম্মানিত গ্রন্থ। বাতিল এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না, না সামনে থেকে, না পিছন থেকে। এটি প্রজ্ঞাময়, সপ্রশংসিতের পক্ষ থেকে নাজিলকৃত’-(সূরা ফুস্সিলাত , ৪১-৪২)।//
অথচ নিচের হাদিস বলছে কুরআনে বাতিল অনুপ্রবেশ করেছে খুবই প্রমাণ সাপেক্ষে!
//আয়শা বর্ণিতঃ পাথর ছুড়ে হত্যার এবং প্রাপ্ত-বয়স্ক পুরুষদেরকে স্তনের দুধ খাওয়ানোর আয়াত নাজিল হয়েছিল এবং একটা টুকরো কাগজে লিখে আমার বালিশের নীচে রাখা হয়েছিল। আল্লাহর নবী যখন মারা যান, তখন আমরা তাঁকে নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ি এবং তখন একটা ছাগল ঘরে ঢুকে কাগজটি খেয়ে ফেলে। (সুনন ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৯৪৪)//
ইবনে ইসহাক ছাগলে খাওয়া আয়াতটি সম্পর্কে লিখেছেন (The Life of Muhammad, Karachi, p. 684): //আল্লাহ মুহাম্মদকে প্রেরণ করেন এবং তাঁর কাছে আসমানী কিতাব পাঠান। আল্লাহর প্রেরিত বাণীর অংশ ছিল পাথর ছুড়ে হত্যার আয়াত। ওমর বলতেন, “আমরা তা পড়েছি, আমাদেরকে তা শেখানো হয়েছিল, এবং আমরা তা শুনেছি। আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ পাথর ছুড়ে হত্যা করেছেন, এবং তাঁর মৃত্যুর পর আমরা পাথর ছুড়ে হত্যা করেছি।//
আয়াতটি সম্পর্কে সহিহ বুখারি ৮/৮১৭ বলছেঃ
//(ওমর বর্ণিত) ...আল্লাহ মুহাম্মদকে সত্যবাণী ও আসমানী কিতাব সহকারে প্রেরণ করেন, এবং আল্লাহর নাজিলকৃত বাণীর মাঝে ছিল বিবাহিত নারী ও পুরুষের জন্য পাথর ছুড়ে হত্যার আয়াত... আমার আশঙ্কা দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কেউ কেউ বলবে, ‘আল্লাহর কসম আমরা আল্লাহর পবিত্র গ্রন্থে পাথর ছুড়ে হত্যার আয়াত খুঁজে পাই নি, এবং এভাবে তারা আল্লাহর নাজিলকৃত একটা বিশেষ বিধান পরিহার করে বিপথে যাবে। পাথর ছুড়ার শাস্তি আরোপিত হবে বিবাহিত নারী ও পুরুষের উপর, যারা অবৈধ যৌনকর্মের লিপ্ত হয়..//
কুরআনের মধ্যে কোন ভুল নেই, বা সেই ১৪০০ বছর আগে কেমন করে কুরআনের মধ্যে বিজ্ঞান, চিকিৎসা, ভ্রুণ সম্পর্কে তথ্য থাকতে পারে- আশা করি এরপর আর কোন দম্ভ বা বিস্ময় থাকবে না এ বিষয়ে। পৃথিবীর আর সব ধর্মীয় গ্রন্থের মত কুরআনেরও প্রচুর ভুল ও অসংগতি আছে- এই সত্যটি মুসলিম শিক্ষিত সমাজে প্রসার লাভ করুক-এটিই কাম্য।
https://m.facebook.com/notes/susupto-pathok/কুরআনে-বিজ্ঞানের-উৎস-সন্ধানে/450509255154483/

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ