"পার্টি নয়, প্রার্থী" ।। ডঃ পার্থ বন্দোপাধ্যায়


আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করেন, কোন নতুন রাস্তা আমি দেখাতে চাই, দেখাতে চলেছি? কারণ, শুধু সমালোচনা করলেই তো হবে না, একটা অল্টারনেটিভ রাস্তা কোথায়? মানুষ যদি বিজেপির ঘৃণা, হিংসা ও ধর্মান্ধতার রাজনীতিকে বর্জন করতে চায়, তাহলে সে কোথায় যাবে? তৃণমূল? সিপিএম? কংগ্রেস?
না। এরা সবাই ব্যর্থ। এবং পশ্চিমবঙ্গ দ্রুত তলিয়ে যাচ্ছে চোরাবালিতে। কী করে বাঁচবে লোকে কেউ যদি বলে দিতো, অথবা মগজে কারফিউ ভাবতে ভয় হয় -- এসব কথা যারা বলেছিলো, তাদের হিপোক্রিসিও সবাই দেখছে। তাহলে মানুষ কোথায় যাবে? বিশ্বাস কাকে করবে? কোন ব্যক্তিকে, কোন আদর্শকে?
হ্যাঁ, বামপন্থী আদর্শ, বিশ্বাসকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আমি মার্ক্সবাদী নই। আমি পুঁজিবাদ বা প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজের বিরোধী নই। কিন্তু আমি তাদের এক্সসেস বা আউট অফ কন্ট্রোল অত্যাচারের ও লুঠপাটের বিরোধী। তাদের প্রোপাগাণ্ডা মিডিয়ার বিরোধী। বিশেষ করে আমি মনে করি, আজকে পশ্চিমবঙ্গের এই দুর্দশার জন্যে সিপিএম ও কংগ্রেস অনেকাংশে দায়ী। তাদের অপশাসন, পার্টিবাজি ও দুর্নীতির জন্যেই আজ এই গুণ্ডামির, দুর্নীতির এবং আজকের এই ঘৃণার ও ধর্মান্ধতার রাজনীতি এতো বেশি মাথা চাড়া দিয়েছে।

আমি জীবনকে বামপন্থী অথবা দক্ষিণপন্থী -- এই বাইনারি বা দ্বিধাবিভক্ত সমাজের চোখে দেখি না। আমি সারা জীবন অনেক সৎ, আদর্শবাদী, সর্বত্যাগী মানুষ দেখেছি। তারা কেউ বামপন্থী, কেউ দক্ষিণপন্থী, আবার কেউ মধ্যপন্থী কংগ্রেসি। এদের আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি, এবং অনেক মিল খুঁজে পেয়েছি।

আমার থিওরি হলো, আসল লড়াইটা বাম ও দক্ষিণের মধ্যে নয়। আসল শত্রু হলো ওই একেবারে ওপরের ওয়ান পার্সেন্ট, যা এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে ০.০১% -- প্রতি দশ হাজারে একজন অতি, অতি ধনী ব্যক্তি ও কর্পোরেশন -- যারা তাদের রাজনৈতিক দল ও মিডিয়াকে ব্যবহার করে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তারা স্ফীত হচ্ছে, আর বাকি আমরা সবাই তলিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের বলা হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আর আমরা সেই স্বপ্ন দেখছি -- সারা জীবন ধরে, মৃত্যু পর্যন্ত।
সুতরাং, লড়াইটা তাদের সঙ্গে, এবং এই লড়াইতে বাম, দক্ষিণ ও মধ্য -- সবাইকেই চাই -- কতগুলো অর্থনৈতিক ও সামাজিক মিলের ভিত্তিতে। যাকে বলে কমন গ্রাউন্ড।
এই কারণে আমি পার্টির বাইরে গিয়ে শুধুমাত্র ব্যক্তি দেখে প্রার্থীকে ভোট দিতে বলছি। কারণ, দলগুলো ব্যর্থ, এবং তাদের ম্যানিফেস্টো আমরা চ্যালেঞ্জ করতে পারি না। তারা দল হিসেবে নির্বাচিত হলে সে সুযোগ আমাদের দেবে না।
সুতরাং, দল নয়, ব্যক্তি। সৎ, পরিশ্রমী, বিজ্ঞানমনস্ক, সমানাধিকারে বিশ্বাসী, ও সাধারণ মানুষের পাশে থাকার ইতিহাস -- এই পাঁচটা পয়েন্টে প্রার্থীর নির্বাচন হওয়া দরকার। এরা পার্টি ব্যতিরেকে মানুষ হিসেবে আমাদের পাশে থাকবেন। তাঁদের কাছে আমরা যেতে পারবো নির্বাচনের পরে। ঘুষ দিতে হবে না। তাঁদের গুণ্ডাদের ও আমলাদের তেল দিতে হবে না। তাঁরা আমাদের পাশে থাকবেন, কারণ তাঁরা পার্টির ওপরে গিয়ে আমাদের একজন হয়ে থাকবেন সংসদে, বা যে কোনো নির্বাচনে।
আমার এই "পার্টি নয়, প্রার্থী" ইলেকশন মডেল একেবারে নতুন কিছু নয়। কিন্তু আমাদের এসব কথা মিডিয়া ও দলগুলো জানতে দেয় না। আমি জানি, কারণ আমি আমেরিকায় বহুকাল রাজনীতি করার সুবাদে এবং পাৰ্টিলেস শ্রমিক ইউনিয়ন কলেজে অধ্যাপনা করার সুবাদে এসব জেনেছি। নানা দেশের লোকের সঙ্গে কথা বলেছি এসব ব্যাপারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

X

Never Miss an Update!

Join my newsletter to get the latest posts from littlemag.in directly to your inbox.