বঙ্কিম শিক্ষা - বঙ্কিমচন্দ্রের ছাত্রজীবনের অজানা কথা।। রানা চক্রবর্তী



১৮৩৮ সালের ২৬শে জুন (১২৪৫ বঙ্গাব্দের ১৩ই আষাঢ়) রাত্রি নয়টার সময়ে কাঁটালপাড়ায় বঙ্কিমচন্দ্রের জন্ম হয়। তাঁর অগ্রজ শ্রী সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচনা সংগ্রহ 'সঞ্জীবনী সুধা' গ্রন্থের ভূমিকায় বঙ্কিমচন্দ্র নিজেই তাঁদের বংশ-পরিচয় লিপিবদ্ধ করেছেন এভাবে - "অবসতি গঙ্গানন্দ চট্টোপাধ্যায় একশ্রেণীর ফুলিয়া কুলীনদিগের পূর্ব্বপুরুষ। তাঁহার বাস ছিল হুগলী জেলার আন্তঃপাতি দেশমুখো। তাঁহার বংশীয় রামজীবন চট্টোপাধ্যায় গঙ্গার পূর্ব্বতীরস্থ কাঁটালপাড়া গ্রামবাসী রঘুদেব ঘোষালের কন্যা বিবাহ করিয়াছিলেন। তাঁহার পুত্র রামহরি চট্টোপাধ্যায় মাতামহের বিষয়প্রাপ্ত হইয়া কাঁটালপাড়ায় বাস করিতে লাগিলেন। সেই অবধি রামহরি চট্টোপাধ্যায়ের বংশীয় সকলেই কাঁটালপাড়ায় বাস করিতেছেন।" বঙ্কিমচন্দ্র রামহরি চট্টোপাধ্যায়ের প্রপৌত্র ও যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের তৃতীয় পুত্র এবং বিখ্যাত পণ্ডিত ভবানীচরণ বিদ্যাভূষণের দৌহিত্র। তাঁর দুই দাদা - শ্যামাচরণ ও সঞ্জীবচন্দ্র এবং এক ভাই - পূর্ণচন্দ্র। এঁরা সকলেই কৃতবিদ্য ছিলেন। 'বঙ্গদর্শন' পত্রিকার দ্বিতীয় সম্পাদক এবং 'পালামৌ', 'জাল প্রতাপচাঁদ', 'কণ্ঠমালা' ও 'মাধবীলতা'র লেখক সঞ্জীবচন্দ্র বঙ্গসাহিত্যে খ্যাতি রেখে গিয়েছেন। 

বঙ্কিমচন্দ্র কেবল ঔপন্যাসিক বা প্রাবন্ধিক নন, এক গভীর চিন্তক। ধর্ম, রাজনীতি, সমাজনীতি এবং ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর একটি নিজস্ব দর্শন ছিল। হিন্দুত্বে আস্থা রেখেও, সে দর্শন গভীর ও ব্যাপক। বঙ্কিমচন্দ্রের সেই হিন্দুত্বও নিছক কোনও দেবতার জয়ধ্বনি নয়, কোনও সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ‘আনন্দ মঠ’ উপন্যাসটির কারণে বঙ্কিমচন্দ্রকে সঙ্কীর্ণ হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রকট মূর্তি হিসেবে দেখার একটা ‘ট্র্যাডিশন’ আজও সমানে চলছে। বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তা তার চেয়েও বড় কিছু। বস্তুত, ভারতীয় ইতিহাসে বঙ্কিমচন্দ্র জাতীয়তার অন্যতম স্রষ্টা। সে জাতীয়তার বোধ যতটা হিন্দু, তার চেয়েও বেশি আর্য। যে কোনও জাতীয়তারই মূলে থাকে গোষ্ঠীচেতনা, বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তারও ছিল। আর তার প্রধান নির্ভর ছিল বাঙালি ও বাংলা ভাষা। আরও বিশদে বললে, মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালির গোষ্ঠীকে ভর এবং লক্ষ করেই ভারতবাসীর মধ্যে জাতীয়তার বোধ তৈরি করতে চেয়েছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র। সফল কতটা হয়েছিলেন, সে বিচার ইতিহাস করবে। কিন্তু এ কথা মনে রাখা ভাল, যে ঊনবিংশ শতাব্দীর সেই দ্বিতীয়ার্ধে ভারতবর্ষে বাঙালির এই কোণঠাসা অবস্থা হয়নি। তখনও বাংলার ভাবনা আর সমগ্র ভারতের ভাবনার মধ্যে আজ আর কালের তফাত ছিল। বঙ্কিমের ইতিহাস-চিন্তা তাই রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের ‘প্রথমশিক্ষা বাঙ্গালার ইতিহাস’ (১২৮১) বইটির সমালোচনা-সূত্রে প্রকাশিত হয় বঙ্কিম সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায়। ওই সমালোচনায় বঙ্কিম লিখেছিলেন, "সাহেবেরা যদি পাখী মারিতে যান, তাহারও ইতিহাস লিখিত হয়, কিন্তু বাঙ্গালার ইতিহাস নাই। গ্রীন্‌লণ্ডের ইতিহাস লিখিত হইয়াছে, মাওরি জাতির ইতিহাসও আছে, কিন্তু যে দেশে গৌড়, তাম্রলিপ্তি, সপ্তগ্রামাদি নগর ছিল, যেখানে নৈষধচরিত, গীতগোবিন্দ লিখিত হইয়াছে, যে দেশ উদয়নাচার্য্য, রঘুনাথ শিরোমণি ও চৈতন্যদেবের জন্মভূমি, সে দেশের ইতিহাস নাই। মার্শমান্, স্টুয়ার্ট্ প্রভৃতি প্রণীত পুস্তকগুলিকে আমরা সাধ করিয়া ইতিহাস বলি; সে কেবল সাধ-পুরাণ মাত্র।" কিন্তু শুধু ইতিহাসের জন্য ইতিহাস নয়, "অহঙ্কার অনেক স্থলে মনুষ্যের উপকারী; এখানেও তাই। জাতীয় গর্ব্বের কারণ লৌকিক ইতিহাসের সৃষ্টি বা উন্নতি; ইতিহাস সামাজিক বিজ্ঞানের এবং সামাজিক উচ্চাশয়ের একটি মূল। ইতিহাসবিহীন জাতির দুঃখ অসীম। এমন দুই একজন হতভাগ্য আছে যে, পিতৃপিতামহের নাম জানে না; এবং এমন দুই এক হতভাগ্য জাতি আছে যে, কীর্ত্তিমন্ত পূর্ব্বপুরুষগণের কীর্ত্তি অবগত নহে। সেই হতভাগ্য জাতিদিগের মধ্যে অগ্রগণ্য বাঙ্গালী।"
                             
বাংলা ভাষার যে দীপ্তি বঙ্কিমচন্দ্র ছড়িয়ে দিয়ে গিয়েছেন, নিছক উপন্যাস লেখার জন্য উপন্যাস লিখলে তা সম্ভব হত বলে মনে হয় না। বঙ্কিমচন্দ্র সে পথে যাননি।  বাংলা ভাষাকে তিনি গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, তার প্রকাশযোগ্যতাকে বিস্তার দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই বিস্তারকে আমরা মনে রাখিনি। ‘সাহিত্যসম্রাট’ তকমা লাগিয়ে আদর করে শিকেয় তুলে রেখেছি বঙ্কিম রচনাবলিকে। আর, প্রয়োজনমতো ব্যবহার করেছি তাঁকে। ব্যবহার করার সময়, নিজেদের স্বার্থেই মনে রাখিনি সমগ্র বঙ্কিমকে। ‘আনন্দ মঠ’-এর প্রথম দিককার সংস্করণগুলি উল্টে দেখিনি, দেখলে চোখে পড়ত, সেখানে সন্তানদলের প্রতিপক্ষ ইংরেজ। ভাল করে তাঁর প্রবন্ধগুলি পড়িনি। পড়লে খুঁজে পেতাম এই বঙ্কিমকেও, যিনি বলছেন, ‘মনুষ্যজাতিমধ্যে কাহারই বহুবিবাহে অধিকার নীতিসঙ্গত হইতে পারে না’। এর সঙ্গে যোগ করছেন পাদটীকা, "কদাচিৎ হইতে পারে বোধ হয়। যথা অপুত্রক রাজা, অথবা যাহার ভার্যা কুষ্ঠাদি রোগগ্রস্ত। বোধ হয় বলিতেছি, কেন না, ইহা স্বীকার করিলে পুরুষের বিপক্ষেও সেইরূপ ব্যবস্থা করিতে হয়।"

আর যেহেতু আমরা বঙ্কিমচন্দ্র কে জানার বা বোঝার কোনও চেষ্টাই করি নি, তাই তাঁর সম্বন্ধে সিংহভাগ তথ্যই আমাদের অজানা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন সম্পর্কে আমরা যতটা আগ্রহী, তার সিকি ভাগও আমরা বঙ্কিমচন্দ্রের জীবন সম্পর্কে নয়, তাঁকে আমরা 'সাহিত্য সম্রাটের' শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছি আর সেই ভাবেই রেখে দিয়েছি। অথচ তাঁর জীবনও কম বর্নময় নয়।

অদ্ভুত এক ছেলেবেলা ছিল তাঁর। তাঁর ছিল প্রখর স্মৃতিশক্তি। শোনা যায়, বার্ষিক পরীক্ষার আগে পাঠ্যপুস্তকের খোঁজ পড়ত। এক দিনে এক একটা গোটা বই পড়ে ফেলতে পারতেন! কাঁটালপাড়ার বাড়ির কাছেই ছিল তাঁর পিতা যাদবচন্দ্রের পাঠশালা। বঙ্কিম অবশ্য পাঠশালায় যেতেন না, গুরুমশাই আসতেন বাড়িতে। পাঁচ বছর বয়েসে বঙ্কিমের হাতেখড়ি হয় গুরুমশাই রামপ্রাণ সরকারের কাছে। গুরুমশাই বুঝেছিলেন, মেধাবী ছাত্র বঙ্কিম যে দ্রুততার সঙ্গে পাঠ নিচ্ছে, তাতে তাঁরর কাজ আর বেশি দিন থাকবে না। এ’ও শোনা যায়, শিশু বঙ্কিম নাকি একদিনেই আস্ত বর্ণপরিচয় শেষ করে ফেলেছিল! পড়াশুনোয় ভাল তো বটেই, সঙ্গে তাঁর আত্মসম্মানবোধও ছিল প্রখর। এহেন ছোটবেলা যাঁর, তাঁর ছাত্রজীবনের দিকে অবশ্যই নজর দিতে হয়। প্রশ্ন জাগে, কারা ছিলেন তাঁর শিক্ষক? কারাই বা তাঁর পরীক্ষা নিয়েছিলেন? কি কি বিষয় নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেছিলেন? কতই বা তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ছিল? উত্তর খোঁজা যাক।
                              
কুলপুরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্টাচার্যের কাছে তাঁর হাতেখড়ি হয় পাঁচ বছর বয়সে। পরে গ্রাম্য পাঠশালার গুরুমশাই বামপ্রাণ সরকার বাড়িতে তাঁর শিক্ষার ভার গ্রহণ করেন। আগেই লিখেছি, বঙ্কিমচন্দ্র শৈশবেই মেধাবী বলে পরিচিত হয়েছিলেন। গ্রামের পাঠ শেষ করে বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর পিতার কর্মস্থল মেদিনীপুরে আগমন করেন। ১৮৪৪ সালে ছয় বছর বয়সে তিনি সেখানকার স্কুলে ভর্তি হন। এই সময়ে এফ.টিড নামে একজন সাহেব মেদিনীপুর ইংরেজি স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন। ১৮৭৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনি ঢাকায় বদলি হয়ে গেলে, তাঁর জায়গায় সিনক্লেয়ার নামে এক সাহেব হেডমাস্টার পদে নিযুক্ত হন। বঙ্কিমচন্দ্রের বাল্যশিক্ষা সম্বন্ধে তাঁর সহোদর ও প্রায়-সহাধ্যায়ী পূর্ণচন্দ্র লিখেছেন - 

"বঙ্কিমচন্দ্র কখনও পাঠশালায় পড়েন নাই, আমার জ্ঞানে তো নহে। ... তাঁহাকে একজন private tutor সকালে ও সন্ধ্যার পর পড়াইয়া যাইত।" (বঙ্কিম-প্রসঙ্গ, সুরেশচন্দ্র সমাজপতি, পৃষ্ঠা: ৪২)

"বঙ্কিমচন্দ্র ভাগ্যক্রমে বাল্যকাল হইতে বিদ্যোৎসাহী ও সুশিক্ষিত ব্যক্তিগণের সহবাসেই থাকিতেন। পিতৃদেব তাঁহার অসামান্য প্রতিভা বুঝতে পারিয়া তাঁহার শিক্ষা সম্বন্ধে বিশেষ যত্নবান ও সতর্ক ছিলেন। শৈশবে বঙ্কিমচন্দ্র মেদিনীপুরে শিক্ষা পান। ... শুনিয়াছি, বঙ্কিমচন্দ্র একদিনে বাঙ্গলা বর্ণমালা আয়ত্ব করিয়াছিলেন। মেদিনীপুরে একটা হাইস্কুল ছিল। টিড নামে একজন বিলাতী সাহেব উহার হেডমাস্টার ছিলেন। তাঁহার অনুরোধেই অতি শৈশবে ইংরাজি শিক্ষার জন্য পিতৃদেব বঙ্কিমচন্দ্রকে ঐ স্কুলে ভর্তি করিয়া দেন। বৎসরান্তে পরীক্ষার ফলে সাহেব তাঁহাকে ডবল প্রমোশন দিতে চাহিলেন, কিন্তু পিতৃদেবের আপত্তিতে তাহা ঘটিল না। ... মেদিনীপুর হইতে আসিয়া আমরা কাঁটালপাড়ায় বাস করিতে লাগিলাম। বঙ্কিমচন্দ্র হুগলী কলেজের নূতন Session খুলিলে, তথায় ভর্তি হইবেন, স্থির হইল। তাঁহার জন্য গৃহে একজন প্রাইভেট টিউটর নিযুক্ত হইল।" (বঙ্কিম-প্রসঙ্গ, সুরেশচন্দ্র সমাজপতি, পৃষ্ঠা: ৩৪-৩৬)

সৌভাগ্যক্রমে সঞ্জীবচন্দ্রের প্রসঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র নিজেই শৈশব-শিক্ষার সামান্য বর্ণনা দিয়েছেন - "আমাদিগকে কাঁটালপাড়ায় আসিতে হইল। এবার সঞ্জীবচন্দ্র হুগলী কলেজে প্রেরিত হইলেন। তিনি কিছুদিন সেখানে অধ্যয়ন করিলে আবার একজন 'গুরু মহাশয়' নিযুক্ত হইলেন। আমার ভাগ্যোদয়ক্রমেই এই মহাশয়ের শুভাগমন; কেন না, আমাকে ক, খ শিখিতে হইবে, কিন্তু বিপদ অনেক সময়েই সংক্রামক। সঞ্জীবচন্দ্রও বামপ্রাণ সরকারের হস্তে সমর্পিত হইলেন। সৌভাগ্যক্রমে আমরা আট দশ মাসে এই মহাত্মার হস্ত হইতে মুক্তিলাভ করিয়া মেদিনীপুরে গেলাম। সেখানে তিন চারি বৎসর কাটিল। ... পরীক্ষার (জুনিয়র স্কলারশিপ, সঞ্জীবচন্দ্রের) অল্পকাল পূর্ব্বেই আমাদিগকে মেদিনীপুর পরিত্যাগ করিয়া আসিতে হইল। আবার কাঁটালপাড়ায় আসিলাম।"

এরপরের ঘটনা সম্পর্কে সুরেশচন্দ্র সমাজপতির সঙ্কলিত 'বঙ্কিম-প্রসঙ্গ' গ্রন্থের ৩৬ নং পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে - "কাঁটালপাড়ায় আসিয়া বঙ্কিমচন্দ্র অনেকগুলি সংস্কৃত শ্লোক ও বাংলা কবিতা শিখিলেন"। কাঁটালপাড়া নিবাসী শ্রীরাম ন্যায়বাগীশ নামে একজন খ্যাতনামা পণ্ডিতের কাছে তিনি পাঠ নিতেন। এই প্রসঙ্গে 'অক্ষয় দত্তগুপ্ত' তাঁর 'বঙ্কিমচন্দ্র' গ্রন্থের ৩৩ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন - "বাঙ্গালা কবিতাগুলি - যাহা সর্বদা আবৃত্তি করিতেন, তাহা কবি ঈশ্বর গুপ্তের রচিত।" বঙ্কিমচন্দ্র খুব ভালো আবৃত্তি করতে পারতেন। 'প্রভাকর' ও 'সাধুরঞ্জনের' অনেক কবিতা তিনি কণ্ঠস্থ করেছিলেন। বিখ্যাত পণ্ডিত হলধর তর্কচূড়ামণি তাঁর সংস্কৃত আবৃত্তি শুনে প্রীত হয়ে মাঝেমধ্যে তাঁর ঘরে আসতেন ও তাঁকে মহাভারতের কথা শোনাতেন। ভারতচন্দ্রের বিদ্যার রূপবর্ণন ও গীতগোবিন্দের 'ধীর সমীরে যমুনাতীরে' কবিতাটি তিনি প্রায়ই আওড়াতেন। শৈশবে হলধর চূড়ামণির কাছে তিনি প্রথম শুনেছিলেন যে - "শ্রীকৃষ্ণ আদর্শ পুরুষ ও আদর্শ চরিত্র।" (বঙ্কিম-প্রসঙ্গ, সুরেশচন্দ্র সমাজপতি, পৃষ্ঠা: ৪১-৪৫) এই বীজ হয়ত উত্তরকালে 'কৃষ্ণচরিত্র'-রূপ মহীরুহে পরিণত হয়েছিল।
                               ©️রানা©️
শৈশবে বঙ্কিমচন্দ্র খেলাধুলা বিশেষ ভালোবাসতেন না। তাঁর শরীর এই কারণে অপটু ছিল। তিনি তাসখেলা পছন্দ করতেন। সুরেশচন্দ্র সমাজপতির 'বঙ্কিম-প্রসঙ্গ' গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে - "বঙ্কিমচন্দ্র চিরকালই ষাঁড়গরু ইত্যাদি দেখিলে দূরে সরিয়া যাইতেন, মই দিয়া ছাদে উঠিতে পারিতেন না, সাঁতার জানিতেন না ... কখনও ঘোড়ায় চড়িতে পারিতেন না।" 'বঙ্গদর্শন' পত্রিকার ১৩১৮ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ সংখ্যায় দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি প্রবন্ধ থেকে জানা যায় - "... অথচ মাঝে মাঝে বৃহৎ ব্যাপারে অসম সাহস দেখাইতেন। ইতিহাস-অধ্যয়নে বাল্যকাল হইতেই তাঁহার ঝোঁক ছিল।"

২৩শে অক্টোবর ১৯৭৯ সালে বঙ্কিমচন্দ্র হুগলী কলেজে (তৎকালীন 'মহম্মদ মহসিনের কলেজ') প্রবেশ করেন। তখন তাঁর বয়স সাড়ে এগারো বছর। আজও হুগলী কলেজে রক্ষিত থাকা পুরানো দস্তাবেজের মধ্যে তখনকার সময়ের হাতে লেখা (১৮৬২ সালের) একটা বিপুল আয়তনের 'এডমিশন বুক' আছে, তার ১০১ সংখ্যক লিপিপংক্তি তে লেখা রয়েছে -

SL NO. 101 ... Bankim Chunder Chatterjee ... Age: 11 & 1/2 years ... Date of Admission: 23 October 1849 ... Date of Withdrawal: 12 July 1856 - Transferred to Presidency College.

সেই সময়ে ঐ কলেজে 'সম্বৎসর' বা 'session' গণনা হত ১লা অক্টোবর থেকে ৩৯শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এবং সেপ্টেম্বর মাসেই 'বৃত্তি-পরীক্ষা' ও বাৎসরিক পরীক্ষা শেষ হয়ে 'দশহরা'র দীর্ঘ ছুটির পরে নতুন পড়া আরম্ভ হত। ১৮৪৭ সালের যে ছুটির তালিকা পাওয়া যায়, সেই সেশনে মোট ছুটি ছিল মাত্র ৬১ দিন, এরমধ্যে ৩৫ দিনের টানা পূজার ছুটি মহালয়া থেকে আরম্ভ হয়েছিল। তখনও গ্রীষ্মকালের ছুটি বলে কোন ছুটি ছিল না। ১৮৪৯ সালে মহালয়া পড়েছিল ১৬ই সেপ্টেম্বর তারিখে, সুতরাং বৎসরম্ভেই বঙ্কিমচন্দ্র কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৮৪৯ সালে, অর্থাৎ যে বছর বঙ্কিমচন্দ্র কলেজে ভর্তি হন, হুগলী কলেজের ইংরেজি বিভাগ - কলেজ ও স্কুলে বিভক্ত ছিল। স্কুল বিভাগের উচ্চ ভাগে (Senior Division) ছিল তিনটি শ্রেণী - প্রত্যেক শ্রেণীতে আবার দুটো করে section ছিল। ওদিকে নিম্ন ভাগে (Junior Division) ছিল চারটি শ্রেণী, প্রথম তিনটি শ্রেণীতে দুটি করে section ছিল। বঙ্কিমচন্দ্র Junior Division-এর প্রথম শ্রেণীর 'এ' সেকশনে ভর্তি হয়েছিলেন। তখন জুনিয়র ও সিনিয়র ডিভিশনের ছাত্রদের মাসিক বেতন হিসাবে যথাক্রমে দু টাকা ও তিন টাকা দিতে হত। বলা বাহুল্য বঙ্কিমচন্দ্র বৈতনিক ছাত্র ছিলেন।
                              
স্কুলের প্রত্যেক সেকশন একজন মাত্র শিক্ষকের অধীনে থাকত এবং তিনি বাংলা ভিন্ন সমস্ত বিষয়েই অধ্যাপনা করতেন। যাঁর হাতে বঙ্কিমচন্দ্রের ইংরেজি শিক্ষা আরম্ভ হয় তাঁর নাম ছিল নবীনচন্দ্র দাস (১লা মে ১৮৫০ সালের হিসাবে তাঁর বয়স ছিল সাতাশ বছর ও বেতন ছিল ১০০ টাকা)। তিনি ও তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা অল্পায়ু যদুনাথ দাস হুগলী কলেজেরই অতিপ্রসিদ্ধ কৃতি ছাত্র ছিলেন। ১৮৫১ সালের নভেম্বর মাসে নবীনচন্দ্র দেড়শো টাকা বেতনে নব-প্রতিষ্ঠিত বীরভূম স্কুলের হেডমাস্টার নিযুক্ত হন ও পরবর্তীকালে তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকতা করে যশস্বী হয়েছিলেন। ইনি তন্তুবায়-জাতীয় ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র যে শ্রেণীতে ভর্তি হন তা বহু কৃতি ছাত্রে পরিপূর্ণ ছিল। 'General Report on Public Instruction in the Lower Provinces of the Bengal Presidency for the year 1 Oct. 1949 to 30 Sept. 1850' রিপোর্টের ১০১-১০৫ নম্বর পৃষ্ঠায় ঐ বছরের বার্ষিক পরীক্ষার সম্পূর্ণ মুদ্রিত বিবরণ পাওয়া যায়। 'এ' সেকশনে দু'জন সাধারণ পারদর্শীতার পুরষ্কার পেয়েছিলেন - উমেশচন্দ্র শূর ও বঙ্কিমচন্দ্র। স্বভাবতই তখন ঐ শ্রেণীর পাঠ্যতালিকা কি ছিল ও বঙ্কিমচন্দ্র কি নিয়ে পড়েছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। ঐ বছরে ওই শ্রেণীর পাঠ্যতালিকা ছিল নিম্নরূপ -

Literature: Azamghur Reader, 2nd Poetical Reader, Pinnock's Catechism of English.
Grammar: Lennie's Grammar (to 20th Rule of Syantax), Writing.
Arithmetic: Extraction of the Square Root, Vulgar Fraction.
Geography: Stewart's Geography (Europe, Asia and Africa).
Bengali: History of Bengal (বঙ্গেতিহাস), Gynarnub (জ্ঞানার্ণব).

১৮৫০-৫১ সালে বঙ্কিমচন্দ্র সিনিয়র ডিভিশনে তৃতীয় শ্রেণীর 'এ' সেকশনে পড়েছিলেন এবং সেবারেও বছরের শেষে সাধারণ পারদর্শীতার পুরষ্কার লাভ করেছিলেন। তাঁর পূর্বতন প্রতিদ্বন্দ্বী উমেশচন্দ্র শূরও 'বি' সেকশন থেকে অনুরূপ পুরষ্কার পেয়েছিলেন। 'এ' সেকশনের শিক্ষক ছিলেন মহেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (১লা মে ১৮৫০ সালের হিসাবে তাঁর বয়স ছিল তেত্রিশ বছর ও বেতন ছিল ১৩০ টাকা) - ইনি প্রথিতনামা ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনিষ্ঠ ভ্রাতা ছিলেন। 'বি' সেকশনের শিক্ষক ছিলেন 'উরে' (Ure) সাহেব, তাঁর কাছে বঙ্কিমচন্দ্র কখনও পড়েননি।

পরের বছর ১৮৫১-৫২ সালে, দ্বিতীয় শ্রেণীর 'এ' সেকশনে বিখ্যাত শিক্ষক ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বঙ্কিমচন্দ্র পড়েন (Hooghly College Register, page: 158)। ওদিকে তখন 'বি' সেকশনের দায়িত্ব ছিল 'ক্লারমন্ট' (F. W. Clermont) সাহেবের হাতে। তখন শিক্ষাবিভাগে বহু সাহেব শিক্ষকতা করতেন। বন্দ্যোপাধ্যায়-ভাতৃযুগল দেশীয় শিক্ষকদের শীর্ষস্থানীয় ছিলেন, কিন্তু সাহেবদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় তাঁদের পদোন্নতি যে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। ১৮৫০ সালে কাশীপ্রসাদ ঘোষ সম্পাদিত 'হিন্দু ইন্টেলিজেন্সার' পত্রিকায় হুগলী কলেজের প্রধান শিক্ষক 'গ্রেভস' (Graves) ও নবনিযুক্ত 'ব্রেন্যাণ্ড' (Brennand) সাহেবদের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনাপূর্ণ কয়েকটি চিঠি প্রকাশিত হয় এবং প্রকাশ্যে অস্বীকৃত হলেও হুগলী কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ 'কার' (Kerr) সাহেব তাঁর ১৯/০৯/১৯৫০ সালের সুদীর্ঘ একটি চিঠিতে ওগুলো বন্দ্যোপাধ্যায়-ভাইদেরই লেখা বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন (History of Hooghly College, Zachariah, page: 59)। দ্বিতীয় শ্রেণীতে বঙ্কিমচন্দ্র কোন পুরষ্কার পাননি। ১৮৫২ সালে এই শ্রেণীর থেকে পুরষ্কার প্রাপ্ত ছাত্র ছিলেন - যাদবচন্দ্র রায় (সেকশন বি) ও যদুনাথ মিত্র (সেকশন এ)।
                               
১৮৫২ সালের নভেম্বর মাসে তিনি প্রথম শ্রেণীর 'বি' সেকশনে উন্নীত হন। পরের বছর থেকে বিদ্যালয়ের সেশন পরিবর্তিত হয়ে ১লা মে থেকে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারিত হয় ও কলেজ বিভাগে দেড় মাসের গ্রীষ্মের ছুটি (১৬ই এপ্রিল থেকে ৩১শে মে) নতুন করে চালু হয়। সুতরাং ১৮৫৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পরীক্ষা না হয়ে ১৮ মাসের শেষে ১৮৫৪ সালের এপ্রিল মাসে সব শ্রেণীর পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রথম শ্রেণীতে বঙ্কিমচন্দ্র যে সকল শিক্ষকের কাছে পড়েছিলেন তাঁরা হলেন -

Headmaster: J. Graves (B.A) - Literature & History.
Second Master: W. Brennand - Mathematics & Geography.

এঁরা উভয়ে কলেজেও পড়াতেন। ১৮৫৩ সালের মার্চ মাসে ব্রেন্যাণ্ড সাহেব ঢাকায় বদলি হয়ে যান। তাঁর জায়গায় প্রায় একবছর পরে (১৮/০২/১৯৫৪) 'ফোগো' (D. Foggo, B.A) নিযুক্ত হন। ইতিমধ্যে ব্রেন্যাণ্ড সাহেবের কাজের ভার অধস্তন ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও ক্লারমন্ট সাহেব ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন। ১৮৫৩ সালের নভেম্বর মাসে ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বদলি হয়ে যান ও তাঁর জায়গায় 'বীনল্যান্ড' (J. G. Beanlad) সাহেব আসেন। সুতরাং বঙ্কিমচন্দ্রের অঙ্ক ও ভূগোল শিক্ষা অল্পবিস্তর উক্ত পাঁচজন শিক্ষকের কাছেই ঘটেছিল।

তখনও এন্ট্রান্স ও বি.এ পরীক্ষা চালু হয়নি; ছাত্ররা জুনিয়র ও সিনিয়র বৃত্তি-পরীক্ষা দিত। ১৮৫৪ সালের এপ্রিল মাসে বঙ্কিমচন্দ্র ১৮৫৩ সালের জুনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষা দিয়েছিলেন। জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা তখন প্রত্যেক জায়গায় আলাদা আলাদা করে নেওয়া হত। হুগলী কলেজ ও তার অধীনে থাকা স্কুলগুলো থেকে মোট ৭৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর আগেকার প্রতিদ্বন্দ্বীদের বহু পিছনে ফেলে শীর্ষস্থান অধিকার করেছিলেন। ১৮৫২-৫৫ সালের জেনারেল রিপোর্টে এই পরীক্ষার বিস্তৃত ফলাফল পাওয়া যায়। বাংলা ছাড়া মোট সাতটি বিষয়ের মধ্যে ছয়টি বিষয়েই তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন, কেবলমাত্র 'অনুবাদ' বিষয়ে তিনি দ্বিতীয় হন। বৃত্তি-পরীক্ষার সৃষ্টি অবধি, মফস্বলের দুই-তিনজন পরীক্ষার্থীর কথা ছেড়ে দিলে, বঙ্কিমচন্দ্র ছাড়া আর কেউই বেশি কৃতিত্ব দেখাতে পারেননি। যাঁরা বৃত্তি পেয়েছিলেন তাঁরা হলেন -

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়: ব্যাকরণ-৪৫, ইতিহাস-৪১, গণিত-৩০, ভূগোল-৪৬, সাহিত্য-৪০, অনুবাদ-৩৪.৫, মৌখিক পরীক্ষা-৩৯, মোট-২৭৫.৫।

যাদবচন্দ্র রায়: ব্যাকরণ-৪১, ইতিহাস-৩১, গণিত-৩০, ভূগোল-২১.৫, সাহিত্য-৩৭, অনুবাদ-৩৬.৭৫, মৌখিক পরীক্ষা-৩২, মোট-২২৯.২৫।

রসিকলাল দত্ত: ব্যাকরণ-৪৩, ইতিহাস-২৯, গণিত-১৫, ভূগোল-৪০.৫, সাহিত্য-৪০, অনুবাদ-২৬.৭৫, মৌখিক পরীক্ষা-৩৪, মোট-২২৮.২৫।

শ্রীকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়: ব্যাকরণ-৪৩, ইতিহাস-৩৩, গণিত-২৪, ভূগোল-২৯, সাহিত্য-৩৫, অনুবাদ-৩৩.৭৫, মৌখিক পরীক্ষা-২৮, মোট-২২৫.৭৫।

কুমুদচরণ বসু: ব্যাকরণ-৩৬, ইতিহাস-৩৮, গণিত-১৬.৫, ভূগোল-৩৪, সাহিত্য-৩৯, অনুবাদ-২৭, মৌখিক পরীক্ষা-৩২, মোট-২২২.৫।

উমেশচন্দ্র শূর: ব্যাকরণ-৪২, ইতিহাস-২২, গণিত-২৩, ভূগোল-৩৫, সাহিত্য-৩৭, অনুবাদ-৩১, মৌখিক পরীক্ষা-২৭, মোট-২১৭।

নবকৃষ্ণ রায়: ব্যাকরণ-৪৩, ইতিহাস-৩০, গণিত-১৫.৫, ভূগোল-২৯.৫, সাহিত্য-২৫, অনুবাদ-৩১.২৫, মৌখিক পরীক্ষা-৩৬, মোট-২১০.২৫।
                              
প্রথম শ্রেণীর 'বি' সেকশনে বঙ্কিমচন্দ্রের সহপাঠী ছিলেন মোট ৩৫ জন, এঁদের মধ্যে ২৩ জন বৃত্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এঁদের গড় বয়স ছিল ১৭, 'এ' সেকশনের ছাত্রদের গড় বয়স ছিল ১৮, ওদিকে বঙ্কিমচন্দ্র পরীক্ষার সময় ১৬ বছর বয়স পার করেননি। ১৮৫৩ সালের জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার পাঠ্যতালিকা ছিল নিম্নরূপ -

Prose: Selections from Goldsmith's Essays, Cal. Ed.
Poetry: Selections from Pope, Prior and Akenside Poetical Reader No. III pt. II (last ed.).
History: Keightley's History of England, Vol. I.
Grammar: Crombie, part II.
Geography and Map Drawing.
Mathematics: Euelid Books VI & XI, Algebra to the end of simple Equations, Arithmetic.
Bengali: বেতালপঞ্চবিংশতি (2nd Ed.), Bengali Grammar.

পরীক্ষা পাঁচমাস পিছিয়ে যাওয়ার জন্য সেই বছর অতিরিক্ত পাঠ্যও (Supplementary) নির্দিষ্ট হয়েছিল। সেগুলি ছিল -

Prose: Moral Tales, Encyclopaedia Bengalensis No. X.
Poetry: Poetical Reader Part I, No. III (Cal. Ed.); Crombie's Etymology & Syntax, Part I.

এছাড়া বাংলা পাঠ্যেও নতুন সার্কুলার করে 'বেতালপঞ্চবিংশতি' ছাড়া 'তত্ববোধনী পত্রিকা' (১৭৭৪ শকাব্দা, ১০৫-১১৬ সংখ্যা) নির্দিষ্ট করা হয়েছিল।
                             
ঐ বছর (১৮৫৩ সাল) বঙ্কিমচন্দ্র সংবাদ প্রভাকরের কবিতা প্রতিযোগিতায় যোগদান করে পারিতোষিক পেয়েছিলেন। তাঁর লেখা কবিতাটির নাম ছিল 'কামিনীর প্রতি উক্তি। তোমাতে লো ষড়ঋতু'। কবিতাটি সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় ১৮৫৩ সালের ১৮ই মার্চ প্রকাশিত হয়েছিল। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, হুগলী কলেজে পড়তে পড়তেই ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের রচনার আদর্শে বঙ্কিমচন্দ্র সংবাদ প্রভাকরে গদ্য-পদ্য রচনা শুরু করেছিলেন। দুই বছর ধরে বঙ্কিমচন্দ্রের রচিত অনেক গদ্য-পদ্য সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের প্রশস্তি সমেত প্রকাশিত হয়েছিল।

জুনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় মাসিক আট টাকা বৃত্তি পেয়ে বঙ্কিমচন্দ্র এরপরে কলেজ বিভাগের চতুর্থ শ্রেণী অর্থাৎ ফার্স্ট ইয়ারে উন্নীত হন। কলেজে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পাঠ্য একই ছিল কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পাঠ্যতালিকা আলাদা আলাদা ছিল। চতুর্থ শ্রেণীর পাঠ্যতালিকায় ছিল -

English: Addison, (pp. 1-382) as far as No. 265; Pope, as contained in Richardson's Selections.
Moral Philosophy: A bercrombie's Moral Feelings.
History: Keightley's History of England, Vol. II.
Physical Geography: Hughes' Physical Geography.
Mathematics: Euclid I-VI & XI (up to 21st proposition); Algebra and Plane Trigonometry.
Surveying and Plan Drawing.
Bengali: নির্দিষ্ট পুস্তক কোন শ্রেণীতেই ছিল না, কেবলমাত্র Translation & Grammar.

এই শ্রেণীতে বঙ্কিমচন্দ্র নিম্নলিখিত অধ্যাপকদের কাছে পড়তেন -

Literature: Principal J. Kerr, M.A (সপ্তাহে দুইদিন), J. Graves, B.A (Headmaster).
History: J. Graves.
Mathematics: R. Thwaytes, B.A ও D. Foggo, B.A এবং E. Lodge (ফোগোর পরিবর্তে ৮ই ডিসেম্বর ১৯৫৪ সাল থেকে)।
                               
১৮৫৫ সালের এপ্রিল মাসে চতুর্থ শ্রেণীতে ছাত্রদের যে পরীক্ষা হয়েছিল, তার নাম 'Senior Scholarship Examination' হলেও তা উচ্চতর শ্রেণীর পরীক্ষা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা পরীক্ষা ছিল এবং এর প্রশ্নপত্রও ছিল আলাদা। এই পরীক্ষায় বঙ্কিমচন্দ্র শীর্ষস্থান অধিকার করেছিলেন এবং তাঁকে আট টাকা বৃত্তি দ্বিতীয় বছরের জন্য পুনরায় দেওয়া হয়েছিল। এই পরীক্ষায় বঙ্কিমচন্দ্রের ফলাফল ছিল নিম্নরূপ -

Literature Proper- 39/70, Moral Philosophy and Political Economy- 48/60, History- 56.5/70, Pure Mathematics- 49.5/100, Mixed Mathematics- 84/100, English Essay- 30/50, Translation- 24/50, Total- 276/560.

তৃতীয় শ্রেণীতে বঙ্কিমচন্দ্র পূর্বে উল্লেখিত 'কার' (Literature), 'থোয়েটস' (Physics and Mathematics) ও 'গ্রেভস' (History) সাহেবদের কাছেই পড়েছিলেন। 'লজ' সাহেব বদলি হয়ে যান এবং তাঁর জায়গায় ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৫৬ সালের ১০ই জানুয়ারি পুনরায় বদলি হয়ে আসেন। ঈশানচন্দ্র তৃতীয় শ্রেণীতে 'Sheodler's Book of Nature' পড়াতেন। ১৮৫৬ সালের এপ্রিল মাসে এই শ্রেণী থেকে ১৩ জন সিনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা দেন - একমাত্র বঙ্কিমচন্দ্রই বৃত্তি পান এবং তিনি একাই হুগলী কলেজ থেকে সেই বছর 'Highest Proficiency in all the subjects' দেখিয়ে দুই বছরের জন্য মাসিক কুড়ি টাকা বৃত্তি লাভ করে দ্বিতীয় শ্রেণী অর্থাৎ থার্ড ইয়ারে উন্নীত হন। পরীক্ষায় তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ছিল নিম্নরূপ -

Literature: 55, History: 82, Mathematics: 67.5, Natural Philosophy: 74.8, Translation: 76, Total: 355.30.

গরমের ছুটির পরে প্রায় একমাস দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে বঙ্কিমচন্দ্র ২৮শে জুন ১৮৫৬ সালে ট্রান্সফারের জন্য দরখাস্ত করেন। হুগলী কলেজের তদানীন্তন অস্থায়ী অধ্যক্ষ থোয়েটস সাহেব দরখাস্ত প্রেরণের সময় মন্তব্য করেছিলেন, 'Bunkim Chunder is a youth of good character and acquirements.'। পরবর্তী জুলাই মাসের ১২ তারিখে বঙ্কিমচন্দ্র হুগলী কলেজ ত্যাগ করেন এবং আইন পড়ার জন্য কলকাতায় এসে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। আগেই বলা হয়েছে যে তিনি দুই বছরের জন্য মাসিক কুড়ি টাকা বৃত্তি পেয়েছিলেন। এই বৃত্তির টাকা থেকে প্রেসিডেন্সি কলেজের আইন বিভাগে তাঁর তিন বছরের জন্য ১৩ টাকা হারে বেতন এবং নগদ দুই টাকা করে টিউশন ফি দেবার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বঙ্কিমচন্দ্রের ভ্রাতুষ্পুত্র শচীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বঙ্কিম জীবনীতে (৩য় সং, পৃষ্ঠা: ৭৭) লিখেছেন, "১৮৫৭ খ্ৰীস্টাব্দের মধ্যভাগে বঙ্কিমচন্দ্র হুগলী কলেজের পাঠ সমাপ্ত করিয়া কলিকাতায় চলিয়া গেলেন।" উক্ত গ্রন্থের ৭৪ নম্বর পৃষ্ঠাতেও এই একই উক্তি রয়েছে। কিন্তু উভয়ক্ষেত্রেই সালটি ভুল। আরও অনেকেই এই একই ভুল করেছেন।
                              
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের বাংলা সাহিত্যে হাতেখড়ি যাঁদের হাত ধরে হয়েছিল, তাঁদের নাম পৃথকভাবে উল্লেখ করা দরকার। যখন তিনি হুগলী কলেজে পড়তেন তখন সেখানে ছয়জন পণ্ডিত বাংলার অধ্যাপনা করতেন। এঁদের মধ্যে সুপারিন্টেডিং পণ্ডিত অভয়চরণ তর্কপঞ্চানন কেবলমাত্র কলেজ বিভাগে পড়াতেন। বাকি পাঁচজনের মধ্যে দু'জন - গোবিন্দচন্দ্র শিরোমণি ও ভগবচ্চন্দ্র রায় বিশারদ সিনিয়র ডিভিশনে ও বাকি তিনজন জুনিয়র ডিভিশনে পড়াতেন। বঙ্কিমচন্দ্র নিম্নতম পণ্ডিত গোবিন্দচন্দ্র গুপ্ত বিশারদ ও গোপালচন্দ্র বিদ্যানিধি - এই দুই জনের কাছে পড়েননি। তাঁর প্রথম শিক্ষক ছিলেন কাশীনাথ তর্কভূষণ। সিনিয়র ডিভিশনে উন্নীত হয়ে বঙ্কিমচন্দ্র প্রথমে ভগবচ্চন্দ্র রায় বিশারদের কাছে পড়েন। ইনি একজন প্রথিতনামা ব্যক্তি ছিলেন। ১৮৪০ সালে তাঁর রচিত 'সুখবোধ' বাংলা ব্যাকরণ দেশের সর্বত্র পড়া হত। সিনিয়র ডিভিশনে, তৃতীয় শ্রেণীর 'এ' সেকশনে বাংলা পাঠ্যপুস্তক ছিল মাত্র একটা - মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের 'প্রবোধচন্দ্রিকা' অনুবাদ-রচনাদির উপরেই বিশেষ জোর ছিল। দ্বিতীয় শ্রেণীতে রচনা ও অনুবাদ ছাড়া কোন আলাদা পাঠ্যপুস্তক ছিল না। প্রথম শ্রেণীতে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে বঙ্কিমচন্দ্র গোবিন্দচন্দ্র শিরোমণির কাছে পড়েছিলেন। তিনি কুমারহট্টের বাসিন্দা গঙ্গাধর তর্কবাগীশের পুত্র ছিলেন। সুপারিন্টেডিং পণ্ডিত অভয়চরণ তর্কপঞ্চানন কলেজ থেকে অবসর নেবার আগেই ৪ঠা নভেম্বর ১৮৫৪ সালে (৫৯-৬০ বছর বয়সে) হঠাৎ পরোলোকগমন করেন - হুগলী কলেজে তাঁর নিয়োগের তারিখ ছিল ২০শে আগস্ট ১৮৩৬ সাল। বঙ্কিমচন্দ্র কলেজে উঠে তাঁর কাছে পাঁচ মাস পড়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে সেই স্থানে ২৫শে জানুয়ারি ১৮৫৫ সাল থেকে গোবিন্দচন্দ্র শিরোমণি নিযুক্ত হন। সুতরাং বঙ্কিমচন্দ্রের হুগলীর শিক্ষকদের মধ্যে শিরোমণির সংস্পর্শই দীর্ঘতম (প্রায় তিন বছর)। শেষে উল্লেখ্য যে, সেই সময়ে সংস্কৃত কলেজ ছাড়া অন্য কোন বিদ্যালয়ে সংস্কৃত শিক্ষার কোন ব্যবস্থা ছিল না। বঙ্কিমচন্দ্র কলেজে কোথাও সংস্কৃত পড়েন নি। ভাটপাড়ার পণ্ডিতদের সাহায্যে নিজের বাড়িতেই তিনি সংস্কৃত পড়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনের পরে ৩০শে মার্চ ১৮৬৪ সালের সরকারি আদেশ অনুসারে একজন সংস্কৃতের সহকারী অধ্যাপকের পদ, হুগলী কলেজে দেড়শো টাকা বেতনে প্রথম সৃষ্টি হয়। এই পদে প্রথম স্থায়ী শিক্ষক গোপালচন্দ্র গুপ্তের নিয়োগের আগে শিরোমণি মহাশয় এক মাস (১৮৬৫ সালের মে-জুন মাস) অস্থায়ীভাবে কাজ করেছিলেন।
                                
১৮৫৭ সালে এন্ট্রান্স ও ১৮৫৮ সালে বি.এ পরীক্ষার প্রবর্তন হয়। ১৮৫৭ সালের এপ্রিল মাসে বঙ্কিমচন্দ্র প্রেসিডেন্সি কলেজের আইন বিভাগ থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দেন। এই পরীক্ষায় তিনি প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। সেই বছরই উত্তরপাড়া স্কুল থেকে হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, সংস্কৃত কলেজ থেকে কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য এবং হিন্দু স্কুল থেকে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও যোগেশচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ ব্যক্তিরাও এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। সেই বছর মোট ২৪৪ জন ছাত্র এন্ট্রান্স পরীক্ষা দেয়, তাঁদের মধ্যে ১১৫ জন প্রথম বিভাগে ও ৪৭ জন দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। তৃতীয় বিভাগ বলে তখন কিছু ছিল না। যাঁরা সর্বসাকুল্যে অর্ধেক বা তার বেশি নম্বর পেয়েছিল, তাঁরা প্রথম বিভাগে এবং যাঁরা ন্যূনতম এক-চতুর্থাংশ বা অর্ধেকের কম নম্বর পেয়েছিল তাঁরা দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিল।

১৮৫৭ সালের এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বাংলা-পাঠ্য ছিল - 'কৃত্তিবাসী রামায়ণ' ও 'মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়স্যঃ চরিত্রম্'; পরীক্ষার বিষয়গুলি পরীক্ষকদের নাম সমেত নীচে দেওয়া হল -

English, Greek and Latin: G. Smith, Esq., Principal, Doveton College.
Sanskrit, Bengali and Hindee: The Revd. K. M. Banerjee, Professor, Bishop's College.
History and Geography: E. B. Cowell, Esq., M. A., Professor, Presidency College.
Mathematics and Natural Philosophy: W. Masters, Few., Professor, Metropolitan College.
(University of Calcutta, Minutes for the year 1857, page: 124)
                               
প্রেসিডেন্সি কলেজে আইন পড়তে পড়তে পরের বছর, ১৮৫৮ সালে, বঙ্কিমচন্দ্র বি.এ পরীক্ষা দেবার সংকল্প করেন। ১৮৫৮ সালের এপ্রিল মাসের গোড়ার দিকে প্রথম বি.এ পরীক্ষা হয়। মোট ১০ জন ছাত্র বি.এ পরীক্ষা দিয়েছিলেন, এঁদের মধ্যে মাত্র দু'জন - বঙ্কিমচন্দ্র ও যদুনাথ বসু দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন। এঁরা দু'জনেই প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র ছিলেন - বঙ্কিমচন্দ্র আইন-বিভাগের ও যদুনাথ জেনারেল ডিপার্টমেন্টের। পরীক্ষা খুবই কঠিন হয়েছিল। বঙ্কিমচন্দ্র ও যদুনাথ, ছয়টি বিষয়ের মধ্যে পাঁচটিতে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু ষষ্ঠ বিষয়ে তাঁরা দু'জনেই সাত নম্বরের কম পেয়ে ফেল করেছিলেন। ১৮৫৮ সালের ২৪শে এপ্রিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের অধিবেশনে পরীক্ষকমণ্ডলীর সুপারিশ অনুযায়ী তাঁদের দুই জনকে সাত নম্বর 'গ্রেস' দিয়ে বি.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলে বিবেচিত করার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল।

বি.এ পরীক্ষায় ইংরেজি অবশ্যপাঠ্য বিষয় ছিল। বঙ্কিমচন্দ্রকে শেক্সপিয়রের 'ম্যাকবেথ', ড্রাইডেনের 'Cymon and Iphigenia', এডিসনের Essays প্রভৃতি পড়তে হয়েছিল। বাংলায় পাঠ্য ছিল - 'মহাভারত' (প্রথম তিন পর্ব), 'বত্রিশ সিংহাসন' ও 'পুরুষপরীক্ষা'। বি.এ পরীক্ষার বিষয়গুলো পরীক্ষকদের নাম সমেত নীচে দেওয়া হল -

English, Greek and Latin: W. Grapel, Esq., M. A., Presidency College.
Sanskrit, Bengali, Hindee and Oorya: Pundit Isserchunder Bidyasagar, Principal, Sanskrit College.
History and Geography: E. B. Cowell, Esq., M. A., Professor, Presidency College.
Mathematics and Natural Philosophy: The Revd. T. Smith, Professor, Free Church Institution.
Natural History and Physical Science: H. S. Smith, Esq., B.A., Professor, Civil Engineering College.
Menial and Moral Sciences: The Revd. A. Duff, D. D.
(University of Calcutta, Minutes for the year 1857, page: 125)

১১ই ডিসেম্বর ১৮৫৮ সালে সিন্ডিকেটের অধিবেশনে ভাইস-চ্যান্সেলর তাঁর বার্ষিক অতিভাষণ পাঠ করার পরে, প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও যদুনাথ বসুকে সর্বসমক্ষে উপস্থিত করেন। তারপরে উভয়কেই বি.এ উপাধি দেওয়া হয়।
                                
১৮৫৮ সালের এপ্রিল মাসে বি.এ পরীক্ষা দেবার পরে বঙ্কিমচন্দ্র পুনরায় প্রেসিডেন্সি কলেজে আইন পড়া চালু রাখেন। কলেজের 'হাজিরা বই' (Attendence Book) এর তথ্য থেকে জানা যায়, তিনি '3rd year law student' হিসেবে পরবর্তী ৭ই আগস্ট পর্যন্ত কলেজে হাজিরা দিয়েছিলেন। এরপরে বঙ্কিমকে আর কলেজে উপস্থিত হতে হয়নি - কারণ তিনি যশোরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হয়েছিলেন। চাকরি করতে করতেই তিনি ১৮৫৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি.এল পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এই পরীক্ষায় তিনি প্রথম বিভাগে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন। বি.এল পরীক্ষায় কি কি প্রশ্নপত্র ছিল, তাঁর একটা তালিকা ও পরীক্ষকদের নাম সমেত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮৬৮-৬৯ সালের ক্যালেন্ডার থেকে তুলে দেওয়া হল -

Jurisprudence: Mr. C. J. Wilkinson.
Personal Rights and Status: Mr. C. J. Wilkinson.
The Law of Contracts: Mr. C. J. Wilkinson.
Rights to Property: Mr. W. Jardine, M. A., L. L. M.
Procedure and Evidence: Mr. W. Jardine, M. A., L. L. M.
Criminal Law: Mr. W. Jardine, M. A., L. L. M.
                              
(তথ্যসূত্র:
১- বঙ্কিম-প্রসঙ্গ, সুরেশচন্দ্র সমাজপতি।
২- সঞ্জীবনী সুধা, সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
৩- 'বঙ্গদর্শন' পত্রিকার ১৩১৮ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ সংখ্যায় দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি প্রবন্ধ।
৪- General Report on Public Instruction in the Lower Provinces of the Bengal Presidency for the year 1 Oct. 1949 to 30 Sept. 1850.
৫- বঙ্কিম জীবনী, শচীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
৬- সাহিত্য সাধক চরিতমালা, শ্রী ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।)
                        

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ