নাপোলি এবং তাদের দেবতা "ম্যারাডোনা"।। কাজী ওয়াজেদ হোসেন

ইতালির পুরো দেশটির লোকজনই ফুটবল পাগল, ঠিক পাগল বলতে যা বুঝায় অনেকটা তাই ৷  নাপোলিতে (Napoli/Naples) রয়েছে এই পাগলামির ভিন্ন মাত্রা বা উচ্চ মাত্রা, ফুটবল তাদের জীবনের হাসি-কান্না আনন্দ-বেদনার অংশ, ফুটবল তাদের সংস্কৃতির অংশ৷ 

এমনিতর একটি শহরের দলটির হয়েই ম্যারাডোনা খেলেছিলেন ১৯৮৪ থেকে ১৯৯০, যেটা ছিল তার ফুটবল ক্যারিয়ারের স্বর্ণযুগ ; ঐ সাত মওসুমে নাপোলির জনগণকে উপহার দিয়েছিলেন ২টি লীগ চ্যাম্পিয়নশীপ শিরোপা, একটি সুপার কাপ, একটি ইউয়েফা কাপ (তখন আলাদা করে চ্যাম্পিয়নস লীগ ছিলনা); আর খেলোয়াড় "ম্যারাডোনা" নাপোলির জনসাধারণের কাছে হয়ে উঠেছিলেন জীবন্ত ইশ্বর ! 


ইতালির ধনকুবের Agnelli যিনি পুরো ইতালির শিল্প সম্রাজ্যের মালিক, সেই ক্ষমতাধর ব্যক্তিটি নিজে ম্যারাডোনাকে ব্ল্যাংক চেক দিয়ে তার দল Juventus-এ যেতে বলেছিলেন৷ ম্যারাডোনা সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছিলেন "আমি নিজেকে নাপোলিতানদের (নাপোলি বা ন্যাপলসের অধিবাসী) একজন ভাবি, ইতালিতে যতদিন খেলবো নাপোলির জার্সি গায়ে দিয়েই খেলবো" ৷

ম্যারাডোনা তার কথা রেখেছিলেন এবং নাপোলির জনগণের ভালবাসার মর্যাদা দিয়েছিলেন এভাবেই ৷ ম্যারাডোনাও ভালবেসে ফেলেছিলেন নাপোলিকে, নাপোলির মানুষকে এবং প্রমাণ করেছিলেন ভালবাসার কাছে অর্থ অনেক তুচ্ছ ! যতদিন ইতালিতে খেলেছেন, ততদিন নাপোলির ১০ নম্বর জার্সিটিই তিনি গায়ে রেখেছিলেন ; ম্যারাডোনা চলে যাওয়ার পরে নাপোলি আজও ঐ জার্সিটি কাউকে দেয়নি৷ 

নাপোলির লোকজন তাকে ভালবেসেছিল হৃদয় উজার করে, দিয়েছিল দেবতার সম্মান ৷ শুধু খেলোয়াড় হিসাবেই নয় মানুষ হিসেবে তারা ম্যারাডোনাকে মনে করতেন অনন্য, তার পাগলামী আচরণ, ড্রাগস স্ক্যান্ডাল, মাফিয়া সংস্পর্শ কিছুই স্পর্শ করেনি তাদের, বরং একটু পাগলাটে টাইপের নাপোলিতানরা তার পাগলামীর জন্যই হয়তো আরও বেশী ভালবাসতেন তাদের "দিয়েগো" কে, আর তাকে মনে করতেন ঘরের মানুষ।

শুধুই কি ভালবাসা ? ভক্তিও করতেন তাকে দেবতাতূল্য ৷ ম্যারাডোনা তাদের কাছে ছিলেন উপাস্য !

তাইতো নাপোলির ঘরে ঘরে ম্যারাডোনার অবয়ব শোভা পায় আজও, সেটা তারা করে ভালবাসা আর ভক্তি থেকেই ৷ 

নাপোলিতে যেদিন ম্যারাডোনার খেলা থাকতো, ম্যারাডোনার মাঠে প্রবেশের সময় স্টেডিয়াম আর টিভি সেটের সামনে বসে থাকা দর্শকের চিৎকারে পুরো শহর এবং আশেপাশের এলাকা নাকি কেঁপে উঠতো৷ আসলে নাপোলির মানুষ আজও মনে করে, ম্যারোডানা তাদের জীবনে যত আনন্দ উপহার দিয়েছে এত আনন্দ তাদের জীবনে কখনও আসেনি ৷ 

একটা সময় নাপোলি এবং আশেপাশের শহরে ম্যারাডোনার নামে ছেলে শিশুদের নাম রাখাটা ছিলো 'ট্রেন্ড', এখনও নাপোলির হাজার হাজার ছেলেদের নাম - "দিয়েগো" নয়তো "আরমান্দো", কেউ কেউ রেখে দিয়েছেন পুরো নামটাই ৷

ইতালিতে ১৯৯০ বিশ্বকাপ হচ্ছে, ইতালি - আর্জেন্টিনা মুখোমুখি আর্জেন্টিনার সাথে হারলেই ইতালির বিদায়, সেই অবস্থায়ও নাকি নাপোলির বহু সমর্থক ছিল ম্যারাডোনার পক্ষে৷ কারণ একটাই আর্জেন্টিনা হেরে গেলে ম্যারাডোনা দুঃখ পাবে, এটা তারা সইতে পারবে না৷ সে এক পাগলপড়া ভালবাসা, যে ভালবাসার কাছে কোন কিছুই যেন কিছু নয় !

উত্থান-পতনে ভরা ৬০ বছরে ম্যারাডোনার জীবনেও গৌরব হয়ে থেকেছে নাপোলি।

শহরের মেয়র এবং ক্লাবের মালিক ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছে "সান-পলো স্টেডিয়ামটির" নূতন নামকরণ হবে তাদের ফুটবল ইশ্বর ম্যারাডোনার নামে৷ যদিও আগে থেকেই রাস্তার নামকরণ, চত্বরের নাম রয়েছে তাদের এই ইশ্বরের নামে৷ প্রতিষ্ঠা হয়েছে যাদুঘর !

ম্যারাডোনার মৃত্যু সংবাদে পুরো শহর গতকাল থেকে শোকে স্তব্ধ৷ করোনা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাত থেকেই নাপোলিবাসীর ঢল নেমেছে স্টেডিয়ামে, লোক জড়ো হয়েছে তার বৃহৎ প্রতিকৃতির সামনে, কাঁদছে তার ভক্তরা ৷

তাদের সেই প্রাণের দেবতাটি আজ নেই !

অন্যলোকে যাওয়ার দিনে নাপোলির মানুষের আজ হৃদয় ভাঙা, রক্ত ঝরছে সেখানে।

আর ফিরে আসবে না কখনও তাদের সেই ভালবাসার মানুষটি !! 

নাপোলিতে ম্যারাডোনা যেন মানুষের ভালোবাসায় বাঁধা ; মৃত্যুর কী সাধ্য সে বাঁধন ছিঁড়ে ম্যারাডোনাকে নিয়ে যায় !!!


(ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা ছবিগুলো নাপোলি শহরের)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

নামহীন বলেছেন…
Thanks for reading this article; might also|you can even} get particular person chapter-wise sections or region-wise report versions like North America, MINT, BRICS, G7, Western / Eastern Europe, or Southeast Asia. Also, we 솔카지노 can to} serve you with custom-made research services as HTF MI holds a database repository that includes public organizations and Millions of Privately held corporations with experience across numerous Industry domains. Conclusive research in regards to the progress conspiracy of Online Gambling Game marketplace for forthcoming years. Offer come with 40x wagering requirement which must be met within 14 days. The UK developer of automated delivery methods will work with Lotte to build a network of robotic warehouses utilizing Ocado’s Smart Platform, as well as|in addition to} offering expertise for constructing on-line orders from Lotte’s shops. Ocado Group Plc surged after signing an exclusive take care of Lotte Shopping Co. to develop the South Korean retailer’s on-line grocery business.