প্রাচীণ কালের চুক্তিপত্র || তুষার মুখার্জী

বিষয়ঃ গয়না, বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ ও দত্তক চুক্তি পত্র।

বিবাহ হল পরিবার গঠনের সূচনা, আর পরিবার হল সংগঠিত সমাজের ভিত।

প্রতিটি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব বিবাহ প্রথা আছে। জনগোষ্ঠী ভিত্তিক বিভিন্নতা থাকলেও কয়েকটি প্রথা সব সমাজেই থাকে। তার মধ্যে কয়েকটি হল পারিবারিক অনুমোদন, সামাজিক অনুমোদন, ও নব বিবাহতদের যৌথজীবন পালনের প্রতিজ্ঞা।

কিন্তু মানুষ সহজ সরল প্রাণী নয়। তাদের মনে হাজার একটা ঘোর প্যাঁচ। তাই প্রতিজ্ঞা পালনে বাধ্য করার জন্য নানা পন্থার ব্যবস্থা করতে হয়েছে। কিছু ধর্মের লোকেদের তাদের দেবতার সামনে প্রতিজ্ঞা করতে হয়। যাতে তারা জানল যে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করলে দেবতা সেই অপরাধের যোগ্য শাস্তি দেবেন। কিছু সমাজে এই দেবতার সামনে প্রতিজ্ঞা মাত্রে সন্তুষ্ট না হয়ে লিখিত চুক্তিপত্রেরও ব্যবহার করছে। 

কবে থেকে লিখিত চুক্তি চালু হয়েছে? অবশ্যই লেখা চালু হবার পরে। প্রথমে বানিজ্যিক লেনদেনে সম্পত্তির বেচা কেনায় হাত পাকিয়ে তারপরে এনেছে বৈবাহিক চুক্তিপত্র। এবং যেহেতু মেসোপটেমিয়াতেই লেখা ও লিখিত বানিজ্যিক লেনদেনের চুক্তিপত্রের শুরু তাই স্বাভাবিক ভাবেই সেখানেই বিয়ের চুক্তিপত্রও শুরু হয়েছে।

মেসোপটেমিয়াতে ছেলে মেয়ের বিয়ের জন্য দায় নিত তাদের বাবা কখনো মা। সাধারনত ছেলে এবং মেয়ের বাবা আগে নিজেদের মধ্যে আর্থিক লেনদেন পাকা করেই বিয়ের পথে এগোতেন।

প্রেমের বিয়ে হতো না? হতো অবশ্যই হত। তবে শেষ অবধি ঐ বাবা মায়ের অনুমোদন ও আর্থিক লেনদেন থাকবেই।

সুমেরদের প্রেমের বিয়ের সেরা উপাখ্যান দেবী ইনান্না ও ডুমুজিদের প্রেম ও বিয়ে। ডুমুজিদের আগে দেবী আরেকজনের সাথে প্রেম পর্ব চালাচ্ছিলেন, কিন্তু ভাই উতুর (সূর্য দেবতা,)পরামর্শে আগের জনের সাথে ব্রেকআপ করে ডুমুজিদকে বিয়ে করেন। সেই ডুমুজিদের সাথে প্রেম পর্বে ডুমুজিদ ইনান্নাকে আশ্বস্ত করেন আগের কৃষক ছেলেটির চেয়ে তিনি অনেক ধনী, ফলে ইনান্নার মা বাবাকে অনেক বেশি বরপণ দিতে সক্ষম। 

সুমের সমাজে বিয়ের পরে মেয়ে যেত স্বামীর ঘরে। তবে সব সময় বিয়ের পরে পরেই স্বামীর ঘরে যাবার ব্যবস্থা থাকতো না। স্বামীর নিজের অর্থোপার্জনের ব্যবস্থা করার পরে এবং বেশির ভাগ সময়ে নিজের বাড়ি বানাবার পরেই কেবল স্ত্রীকে ঘরে আনত। ততদিন স্ত্রী তার বাবার কাছেই থাকত। তবে সব নিয়মের ব্যতিক্রম তো থাকবেই অবস্থা ভেদে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল মেয়ে কুমারী হতে হবে। বিয়ের সময় যে চুক্তি হত তাতে পাত্রের বাবার চাহিদা থাকত মেয়েকে কুমারী হতে হবে। এখন যদি পাত্র বহুদিন বেকার থাকাকালীন বাবার বাড়িতে কুমারী বধুটি আর কুমারী না থাকে, তবে সে মেয়েকে পাত্র গ্রহণ নাও করতে পারে। এবং সে অবস্থায় পাত্রীর বাবা কন্যাপণের টাকা ফেরৎ দিতে বাধ্য থাকবে। 

কণ্যাপণ ছিল। তখন মেয়ের বাবাকে মেয়ের দাম হিসাবে পণ দিতে হত। পরবর্তী কালে অবশ্য সেটা উল্টে গিয়ে ছেলেকে পণ দিতে হত। 

একাধিক বিবাহ হত কি? হত। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম স্ত্রীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হত। ক্ষতিপূরণ পাবার পরে প্রথমা স্ত্রী স্বাধীন। সে ইচ্ছে করলে বাবার কাছ চলে যেতে পারে। এবং পরে অন্য কাউকে বিয়েও করতে পারে। 

বিয়ে হলে বিবাহ বিচ্ছেদও হবেই। সে সুযোগ রাখা থাকত বিয়ের চুক্তিপত্রে। বিবাহ বিচ্ছেদে কার আর্থিক দায় কতটা থাকবে, তা অবস্থা ভেদে আলাদা হত।

সুমেরদের বিয়ের প্রাথমিক উদ্দেশ্য সন্তান উৎপাদন। স্ত্রী যদি সন্তানের জন্ম দিতে অক্ষম হয় তবে স্বামী বরপণের টাকা ফেরৎ পাবে। অন্য একটি পন্থা ছিল। স্ত্রী স্বামীকে যৌনদাসী দেবে। সন্তান উৎপাদনের জন্য।

তবে স্ত্রী যদি অসুস্থ হয় এমনকি দীর্ঘস্থায়ী রোগগ্রস্তও হয় তবে তার দেখাশোনা চিকিৎসার দায় স্বামীর উপর। একেবারে পঙ্গু অসুস্থ স্ত্রী থাকলে স্বামী আরেকটি বিয়ে করতে পারে তবে তখনও প্রথম স্ত্রী তার আগেকার মর্যদায় সংসারে থাকবে ও তার সব দায় দায়িত্ব স্বামীরই বজায় থাকবে।

চুক্তিগুলোতে সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় বোধহয় পাত্র পাত্রীর বাবার পরিচয় অনেক সময়েই তিন পুরুষ আগের থেকে বলা হয়েছে। সম্ভবত একই নাম অনেকের থাকতো। হয়ত তখনো বেশি নাম চালু হয় নি। তাই এই তিনপুরুষের নাম বলা। অথবা সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি জটিলতা সামলাবার জন্য। কারন দুই তিন পুরুষ পিছিয়েও সম্পত্তি বিবাদের বিচার হতো তখন।

এই চুক্তিপত্রগুলো কিন্তু আদৌ কাল্পনিক নয়। প্রতিটি চুক্তিপত্র মাটির ট্যাবলেটে কিউনিফর্ম লিপিতে লেখা ছিল। তারই ইংরেজী অনুবাদ থেকে এই চুক্তিপত্রগলো বেশ খানিকটা দুর্বল বাংলায় অনুবাদ করা হল। 

প্রসঙ্গত, এখনো বিভিন্ন বিষয়ে লেখা কয়েক লক্ষ চুক্তিপত্র অপঠিত পড়ে আছে।

ঃঃঃঃঃঃঃঃঃ

 বিয়ে হবে গয়না নেই এমন আবার হয় নাকি। নিদেন পক্ষে একটা আংটি। পাথর বসানো আংটি বানাতে দিলে সেটা কিন্তু একেবারে লম্বা সময়ের জন্য ম্যানুফ্যাকচারিং ডিফেক্টের জন্য গ্যারান্টি সহ পাওয়া যেত। গ্যারান্টি কার্ড মাটির তালে কিউনিফর্ম লিপিতে লেখা চুক্তিপত্র। নীচে থাকলো একটা তেমন গ্যারান্টি কার্ডের উদাহরণ।

• গয়নার গ্যারান্টি চুক্তি 

• এটা লেখা হয়েছে রাজা আর্টাজেরেক্সিস এর ৩৫ বৎসর রাজত্ব কালে, (৪২৯ সাধারন পূর্বাব্দ)। 

"বেল-আখা-ইড্ডিন এবং বেল-সুনু, বেল..... এর পুত্র, এবংবাজাজুর পুত্র খাতিন,  মুরাসুর পূত্র বেল-শুম-ইড্ডিনকে বলেছে যে সোনার আংটিতে যে এমারেল্ড পাথর বসানো হল তার জন্য গ্যারান্টি থাকল যে, আগামী কুড়ি বৎসরের মধ্যে পাথরটি আংটি থেকে খুলে যাবে না। কুড়ি বৎসরের আগে যদি খুলে যায়, তবে বেল-সুনু ও খাতিন বেল-শুম-ইড্ডিনকে দশ মিনা রূপা দেবে। নীচে সাত জন সাক্ষীর সাক্ষর আর চুক্তিপত্রের লেখকের নাম। তারিখঃ  নিপ্পুর, এলুল আট, আর্টাজেরেক্সিসের রাজত্বের এর ৩৫তম বৎসর।

॥বিয়ের চুক্তি॥ 

রাজা শামশু-ইলু-না। সময় ২২০০ সাধারন পূর্বাব্দ (বা ৪২০০  বৎসর আগের।)

এই বিয়ে হয়েছে আজ থেকে চার হাজার দুইশত বৎসর আগে। এই বিয়ের বিশেষত্ঃ হল, পাত্রী দাসী, বিয়ের ফলে সে দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবে। কাজেই বিবাহ বিচ্ছেদের সময় একটু অন্যরকম শর্ত প্রযোজ্য হবেঃ- 

স্বামী বিচ্ছেদ চাইলে স্ত্রীকে যতটা ক্ষতিপূরণ দিতে হত তার অর্থ মুল্য বলা আছে, কিন্তু স্ত্রী বিচ্ছেদ চাইলে তাকে হত্যা করা হবে। কারণ স্ত্রী ছিল দাসী। ফলত খুব স্বাভাবিক ভাবেই স্ত্রী কখনোই বিচ্ছেদ চাইবে না।

॥বিবাহ চুক্তিপত্র-১॥  রাজা শামশু-ইলু-না। সময় ২২০০ সাধারন পূর্বাব্দ।

দেবতা শামাশের পুরোহিতের কন্যা উজিবিতুম, তার কন্যা বেলিযুনু। বেলিযুনুর কন্যা বাসতুমকে, শামখাতুমের পুত্র রিমুম সঙ্গিনী ও স্ত্রী হিসাবে গ্রহন করছে। সেই বাবদ বাসতুম ....... সেকেল রূপা কণ্যাযৌতুক হিসাবে পাবে। এই অর্থে দাসী পাত্রী বাসতুম নিজের মুক্তি ক্রয় করবে। যদি স্ত্রী বাসতুম স্বামী রিমুমকে "তুমি আমার স্বামী নও" বলে ঘোষণা করে, তবে বাসতুমকে গলা টিপে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। আর যদি স্বামী রিমুম, ঘোষণা করে "তুমি আমার স্ত্রী নও" তবে রিমুমকে দশ সেকেল রূপা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। স্বামী স্ত্রী দেবতা শামাশ ও মারদুক এবং সিপারের রাজা শামশু-ইল-না র নামে শপথ নেবে।

॥বিয়ের চুক্তি-২॥ ৫৯১ সাধারণ পূর্বাব্দ, রাজা নেবুচাদনেজার-২য়, রাজত্ব কালের ত্রয়োদশ বৎসর। চুক্তি হয়েছে ব্যবিলনে। এই চুক্তি ও বিশেষ ধরনের। এখানে পাত্রীকে কিনে নেওয়া হচ্ছে।

 ॥বিবাহ চুক্তিপত্র-২॥ 

যামবুবুর পুত্র দাগিল-ইলি বাবুতুর পূত্র নেরগাল-ইদ্দিনের মেয়ে খাম্মাকে প্রস্তাব দিচ্ছে "আপনার মেয়ে লাতুবাসিন্নিকে আমার স্ত্রী হবার অনুমতি দিন।" খাম্মা সেই প্রস্তাব শুনে কন্যা লাতুবাসিন্নিকে দাগিল-ইল্লির স্ত্রী হতে অনুমতি দিলেন। দাগিল-ইল্লি হবু স্ত্রী লাতুবাসিন্নির মুল্য হিসাবে, অর্ধ মিনা রূপায় কেনা দাস আনা-এলি-বেল-আমুরকে খাম্মাকে দিল। দাগিল-ইলি দ্বিতীয় স্ত্রী ঘরে আনলে প্রথম স্ত্রীকে এক মিনা রূপা দিতে বাধ্য থাকবে। এবং লাতুবাসিন্নি সেই এক মিনারূপা নিয়ে বাপের বাড়ি, শুম-ইড্ডিনের বাড়ি ফিরে যাবে। শুম-ইড্ডিন হল সিন-দামাগুর ছেলে। সিন দামাগু হল ইশি-এতিরের ছেলে।

বিয়ের তৃতীয় চুক্তি পত্রে দেখা গেল ৫৯১ সাধারণ পূর্বাব্দের কনে-পণের বদলে চালু হয়ে গেছে বরপণ। এবং তার মুল্য বেশ বড় রকমের। এই আমুল পরিবর্তনে সময় লেগেছে মাত্র ৪২ বৎসর। তবে এর সাথে আমাদের মাথায় রাখতে হবে, হয়ত ভিন্ন ভিন্ন জাতির মধ্যে এই প্রথা আলাদা ছিল। যেমন বর্তমান ভারতেও ভিন্ন ভিন্ন প্রথা এখনো চলছে।  

 ॥বিয়ের চুক্তি-৩ ॥ সময়ঃ ৫৪৯ সাধারনাব্দ। সম্রাট নাবোনিদাসের রাজত্বের ষষ্ঠ বৎসর।

আরাদ-নেরগালের পুত্র বেল আখি-ইড্ডিন। বেল-আখি-ইড্ডিনের পুত্র নবু-নাডিন-আখি। নবু নাডিন-আখি মুসাল্লিমু-র পূত্র শুম-উকিনকে প্রস্তাব দেয় "তোমার মেয়ে, কুমারী, ইনা-এসাগ্গিল-বানাত কে আমার ছেলে উবাল্লিত-সু-গুলার স্ত্রী হিসাবে দাও।" শুম-উকিন সেই প্রস্তাবে সায় দিয়ে তার কুমারী কন্যা ইনা-এসাগ্গিল-বানাতকে নবু নাডিন-আখির ছেলে উবাল্লিত-সু-গুলাকে দিল। বরপণ হিসাবে নবু-নাডিন-আখিকে এক মিনা রূপা, ও দাসী লাতুবাসিন্নি, ইনা-সিল্লি-বিতি-নাখাত, টাসলি-মু ও ঘরের আসবাব পত্র দেওয়া হল। এ ছাড়া শুম-উকিন বরপণের অতিরিক্ত আর্থিক মুল্য আরো ১ মিনা রূপার বদলে, নবু-নাডিন-আখিকে দাস নানা-কিশিরাত ও এক মিনা রূপার দুই তৃতীয়াংশ দিয়ে বরপণের পূর্ণমুল্য হিসাবে দিল। বাকি থাকা এক মিনার এক তৃতীংশ শুম-উকিন নবু-নাডিন-আখিকে পরে দিয়ে দেবে।

 বিয়ের চুক্তি হলে বিচ্ছেদেরও চুক্তি থাকবেই।

॥বিবাহ বিচ্ছেদ চুক্তি॥ সম্রাট নবোনিদাসের রাজত্বের তৃতীয় বর্ষ। ৫৫২ সাধারন পূর্বাব্দ। 

সামাশ-বালাৎসু-ইকবির পুত্র নাঈদ-মারদুক, স্বেচ্ছায় তার স্ত্রী রমুয়া ও পুত্র আরাদ বুনিনিকে প্রতিদিন চার গা খাদ্য, তিন গা পাণীয় ছাড়াও বৎসরে ১৫ মানা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ, এক পাই তিল, এক পাই লবন, তাদের ভাঁড়ার ঘরে পৌঁছে দেবে। নাঈদ-মারদুক এই পরিমান বাড়াবে না। যদি স্ত্রী মারাও যায় তাহলেও এই ব্যবস্থা রদ হবে না। সিপারের পুরোহিত মুসেজিব-মারদুকের কার্যালয়ে এই চুক্তি সম্পন্ন হল।

বোঝাই যাচ্ছে, এই বিবাহ বিচ্ছেদ একেবারে আদালতে গিয়ে আইনি বিচ্ছেদ।

বিয়ে মানেই পরিবার সন্তান সন্ততি। সেকালে কিন্তু বিয়ের মুল উদ্দেশ্যই ছিল সন্তান উৎপাদন। আমরা জানি তেমন আকাঙ্খা এখনও থাকে প্রতিটি বিবাহিত দম্পতির। তবু বাস্তবে তা সব সময় হয় না। মানুষের শরীর কখনো সর্বাংশে নিখুঁত হয় না। তাই সব দম্পতির সন্তান কামনা পূর্ণও হয় না। সেটা এখন যেমন সত্যি, চার হাজার বৎসর আগেও তা তেমনি সত্যি ছিল।ফলে এখন যেমন সন্তানহীন দম্পতি দত্তক নেন, চার হাজার বৎসর আগেও দত্তক নেবার প্রথা প্রচলিত ছিল। আর এটাও আমরা জানি সুমেরদের থেকে শুরু করে মেসোপটেমিয়ার সব কাজই লিখিত হত। তারা লিখিত চুক্তি আর আইনের প্রবল ভক্ত। ফলে বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদের যেমন আইন ছিল তেমনি সন্তান দত্তক নেবারও আইন ছিল। 

এই লেখায় আইনের বদলে চুক্তি নিয়ে আলোচনা। তাই সন্তান দত্তক নেবার চুক্তি পত্র দেখব। এই চুক্তি শুধু দত্তক নিলাম বলেই ক্ষান্ত হবে না, সাথে থাকে ভবিষ্যতের ঝামেলার সমাধানের কথাও। 

যদি শিশুটির তার পালক পিতাকে পছন্দ না হয় অথবা পালক পিতারই দত্তক নেওয়া পুত্রকে ঘিরে দেখা শ্বপ্ন ভঙ্গ হয় তখন কি হবে সেসব সমাধান ঘিরেই তৈরী চুক্তি। 

সময় আনুমানিক চার হাজার বৎসর আগেকার। সোজ সাপটা চুক্তির ভাষা।

॥দত্তক চুক্তি॥

ইবনি-সামাস দত্তক নিয়েছেন আরাদ-ইশকারাকে। যদি পালিত পুত্র আরাদ ইশকারা কখনো পালক পিতা ইবনি-সামাসকে বলে "আপনি আমার পিতা নন", তবে পালক পিতা তার পালিত পুত্রকে শেকলে বেঁধে অর্থের বিনিময়ে বিক্রী করে দেবে। আবার যদি পালক পিতা ইবনি-সামাস পালিত পুত্র আরাদ-ইশকারাকে বলে "তুমি আমার পুত্র নও" তবে আরাদ-ইশকারাকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে হবে, ঘরের কোন আসবাব সে নিতে পারবে না। কিন্তু তাহলেও সে তার সন্তান হয়েই থাকবে এবং পালক পিতার মৃত্যুর পরে সে সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবে।

এই আইন বলে একবার দত্তক নিলে আইনত তাকে আর ত্যাগ করা সম্ভব না। রেগে গিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার বেশি কিছু করার নেই। কিন্তু দত্তক নেওয়া পুত্রের জন্য তেমন কোন পাকা ব্যবস্থা নেই। সম্ভবত দত্তক নেবার সময় বয়স কম থাকে বলেই শিশুর মতামতের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয় নি। তবে পালিত হলেও পিতাকে সম্মান করার দায় তার উপর সব সময়ই থাকবে। পালক পিতাকে অস্বীকার করে সেই সম্মান ক্ষুণ্ণ করলে তার জন্য বরাদ্দ থাকবে দাসের জীবন। অর্থাৎ তাকে কঠোর ভাবে সাবধান করে দেওয়া হল মাত্র।



তথ্যসুত্রঃ 1. Ancient History Sourcebook: A Collection of Contracts from Mesopotamia, c. 2300 - 428 BCE--- Fordham University

2. Everyday Life in Babylonia and Assyria. By H W F Saggs. (1965)

ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে নেওয়া। কোনরকম বানিজ্যিক ব্যবহার নিষিদ্ধ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

Aurobindo Banerjee বলেছেন…
প্রাচীন, না প্রাচীণ?