ইতিহাসে ও শাস্ত্রে হিন্দুসমাজের বিবাহ ।। রানা চক্রবর্তী



হিন্দুকে যে বিশেষ গণ্ডীর মধ্যে বিবাহ করতে হবে, সেটা স্থির হয়ে যায় তাঁর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে। কেননা হিন্দুসমাজব্যবস্থায় প্রত্যেক হিন্দুকে তাঁর নিজ জাতির মধ্যেই বিবাহ করতে হয়। এক কথায়, হিন্দুসমাজব্যবস্থায় জাতিই হচ্ছে অন্তর্বিবাহের গোষ্ঠীস্বরূপ। তবে, নিজ জাতির মধ্যে যে কোন পুরুষ যে কোন স্ত্রীলোককে অবাধে বিবাহ করতে পারে না। জাতিসমূহ অনেক ক্ষেত্রেই শাখা ও উপশাখায় বিভক্ত এবং এই শাখা-উপশাখাগুলি আবার বিবাহের গণ্ডী নির্ধারণ করে দেয়। যেমন - উত্তর ভারতে ব্রাহ্মণগণ আটটি শাখায় বিভক্ত, ‘পঞ্চগৌড়’, ‘পঞ্চদ্রবিড়’, ‘সারস্বত’, ‘পুষ্করণ’, ‘শ্রীমালী’, ‘ছন্ততি’, ‘শাকদ্বীপী’ ও ‘উদীচ্য’। এগুলি প্রত্যেকেই অন্তর্বিবাহের গোষ্ঠী হিসাবে কাজ করে। তার মানে, এক শাখার স্ত্রী-পুরুষের বিবাহ অন্য শাখাব স্ত্রী-পুরুষের সঙ্গে হয় না। অনেক ক্ষেত্রে আবার বিবাহের গোষ্ঠীগুলিকে আরও সংকীর্ণ করা হয়েছে শাখাগুলিকে উপশাখায বিভক্ত করে। যেমন, উত্তর ভারতের ব্রাহ্মণদের মধ্যে ‘ছন্ততি শাখা’ ছয়টি উ য় বিভক্ত; যথা - ‘সারস্বত’, ‘গুর্জরগড়’, ‘খাণ্ডেলবাল’, ‘দধীচ’, ‘শিকওয়াল’ ও ‘পারিখ’। এদের প্রত্যেকটিই অন্তর্বিবাহকারী উপদল। অনুরূপভাবে বঙ্গদেশের ব্রাহ্মণরা প্রধানতঃ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত - ‘রাঢ়ী’, ‘বারেন্দ্র’ ও ‘বৈদিক’। বৈদিকরা আবার দুই শ্রেণীতে বিভক্ত - ‘পাশ্চাত্য’ ও ‘দাক্ষিণাত্য’। এ ছাড়া বঙ্গদেশে ‘শাকদ্বীপী ব্রাহ্মণ’ও আছে। এগুলি সবই অন্তর্বিবাহকারী গোষ্ঠী। বঙ্গদেশের কায়স্থদের মধ্যেও তিন শ্রেণী আছে - ‘রাঢ়ী’, ‘বারেন্দ্র’ ও ‘বঙ্গজ’। রাঢ়ীরা আবার দুই শ্রেণীতে বিভক্ত - ‘উত্তর রাঢ়ী’ ও ‘দক্ষিণ রাঢ়ী’। সদগোপদের মধ্যেও অনুরূপভাবে দুই বিভাগ আছে - ‘পূর্বকুল’ ও ‘পশ্চিমকুল’। বলাবাহুল্য, কিছুকাল আগে পর্যন্ত উপরোক্ত শ্রেণীসমূহ সবই অস্তবিবাহের গোষ্ঠী হিসাবে কার্যকর ছিল। তার মানে এক শ্রেণীর সঙ্গে অপর শ্রেণীর কোন বৈবাহিক আদানপ্রদান ঘটতো না। তবে বর্তমানে গণতান্ত্রিক চিন্তাধারার প্রভাবে এ সকল নিষেধমূলক বাধা ক্রমশঃ শিথিল হয়ে যাচ্ছে।

বঙ্গদেশের নিম্নশ্রেণীর জাতিসমূহের মধ্যেও নানা শাখাউপশাখা পরিদৃষ্ট হয়। যেমন, ‘বাগদী’রা নয়টি শাখায় বিভক্ত। এই শাখাগুলি হচ্ছে ‘তেঁতুলিয়া’, ‘কাসাইকুলিয়া’, ‘ডুলিয়া’, ‘ওঝা’, ‘মেছুয়া’, ‘গুলি মাঝি’, ‘দণ্ড মাঝি’, ‘কুসমেতিয়া’ ও ‘মল্লমেতিয়া’ (‘মাতিয়া’ বা ‘মাতিয়াল’)। এই শাখাগুলি সবই অন্তর্বিবাহের গোষ্ঠী হিসাবে কার্য করে। প্রতি শাখার মধ্যে অনেকগুলি করে উপশাখা আছে। সেগুলি বহির্বিবাহের গোষ্ঠী। ‘বাউরি’দের মধ্যেও নয়টি শাখা আছে। যেমন, ‘মল্লভুমিয়া’, ‘শিখরিয়া’ বা ‘গোবরিয়া’, ‘পঞ্চকোটি’, ‘মোলা’ বা ‘মুল’, ‘ধুলিয়া’ বা ‘ধুলো’, ‘মলুয়া’, ‘ঝাটিয়া’ বা ‘ঝেটিয়া’, ‘কাঠুরিয়া’ ও ‘পাথুরিয়া’। তবে বাগদীদের সঙ্গে বাউরিদের প্রভেদ এই যে, বাউরিদের মধ্যে এই সকল শাখা অন্তর্বিবাহ ও বহির্বিবাহ এই উভয় হিসাবেই কার্যকর। তাঁদের মধ্যে এ সম্বন্ধে কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই।
                                 ©️রানা©️
বিবাহ সম্পর্কে দক্ষিণ ভারতেও শ্রেণীগত অনেক বাধা আছে। তামিলনাড়ুর ব্রাহ্মণরা ধর্মগত সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে বিভক্ত। আইয়াররা শৈবভক্ত ও আয়াঙ্গাররা বিষ্ণুভক্ত। এর প্রত্যেকটি সেখানে অন্তর্বিবাহের গোষ্ঠী হিসাবে কাজ করে। আবার কোন কোন জায়গায় এই উভয় শ্রেণীর তামিল ব্রাহ্মণদের মধ্যে বিবাহে আঞ্চলিক বাধাও আছে। এই সকল আঞ্চলিক বাধার মূল ভিত্তি হচ্ছে, স্ত্রী-পুরুষকে নিজ নিজ অঞ্চলে বা গ্রামে বিবাহ করতে হবে। যদিও বর্তমানে এই বিধি অনেক পরিমাণে শিথিল হয়েছে, তথাপি দুই তিন পুরুষ আগে পর্যন্ত এই ধরণের বিবাহ বিশেষ কঠোরতার সঙ্গে পালিত হতো।

কিন্তু হিন্দুসমাজে অবাধ বিবাহের আরও প্রতিবন্ধকতা আছে। উপরে যে অন্তর্বিবাহের গোষ্ঠীগুলির কথা বলা হয়েছে, সেগুলির মধ্যে অবাধ বিবাহ নিয়মিত হয় ‘গোত্রপ্রবর’ ও ‘সপিণ্ডবিধি’ দ্বারা। স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে বিবাহ কখনও সগোত্রে বা সমপ্রবরে হয় না। আবার সপিণ্ডের সহিতও বিবাহ নিষিদ্ধ। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অংশে আরও অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। তাদের মধ্যে উল্লেখ করা যেতে পারে ‘গাএী’, ‘পর্যায়’, ‘শাখা’, ‘বেদ’ ও ‘মাতা’। তবে সপিণ্ডবিধিই হচ্ছে প্রধানতম অন্তরায়। এই সকল বাধা নিষেধের ফলে বিবাহের গণ্ডী এমনভাবে সংকীর্ণ হয়েছে যে, অতীতে একবার এই সম্পর্কে গণনা করে দেখা গিয়েছিল যে উত্তর ভারতে মাত্র সপিণ্ডবিধির নিষেধ মানতে গেলে ২,১২১ জন আত্মীয়কে বিবাহের জন্য পরিহার করতে হবে। এই কারণে সপিণ্ডবিধিকে এখন তিনপুরুষের মধ্যে নিবদ্ধ করা হয়েছে। আবার যেখানে কৌলীন্যপ্রথা প্রচলিত অাছে সেখানে বিবাহের গণ্ডী ‘মেল বন্ধন’, ‘থাক’ ও ‘পটটি বন্ধন’ দ্বারা আরও সীমিত হয়ে গেছে।

দক্ষিণ ভারতে বাঞ্ছনীয় বিবাহ প্রচলিত থাকার দরুন, সপিণ্ডবিধি অনেক পরিমাণে শিথিল হয়ে গেছে। বাঞ্ছনীয় বিবাহ সাধারণতঃ মামা-ভাগ্নীর মধ্যে বা মামাতো বোন কিংবা পিসতুতো বোনের সঙ্গে হয়। তবে যেখানে মামা-ভাগ্নীর মধ্যে বিবাহ প্রচলিত আছে সেখানে এরূপ বিবাহ সম্বন্ধে একটা বিশেষ বিধি-নিষেধ লক্ষ্য করা যায়। সেখানে বিবাহ মাত্র বড় বোনের মেয়ের সঙ্গেই হয়, ছোট বোনের মেয়ের সঙ্গে হয় না। মারাঠাদেশে এরূপ বিবাহ মাত্র পিতৃকেন্দ্রিক জাতিসমূহের মধ্যেই দেখা যায়, মাতৃকেন্দ্রিক জাতিসমূহের মধ্যে এটা নিষিদ্ধ।

ভাইবোনের মধ্যে বিবাহ মাত্র পিসতুতো বোন বা মামাতো বোনের সঙ্গেই হয়। তার মানে, এক ক্ষেত্রে বিবাহ হয় মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে আর অপর ক্ষেত্রে বিবাহ হয় মামাতো বোনের সঙ্গে। মাসতুতো বোনের সঙ্গে বিবাহ যদিও দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতে সাধারণ ভাবে নিষিদ্ধ তথাপি এর প্রচলন দেখতে পাওয়া যায় অন্ধ্রপ্রদেশের ‘কোমতি’ ও ‘কুরুব’ জাতিদ্বয়ের মধ্যে। কর্ণাটকের কোন কোন জাতির মধ্যেও এর প্রচলন আছে। কর্ণাটক রাজ্যে ‘দশস্থ ব্রাহ্মণ’রাও ভাগ্নী ও মামাতো বোনকে বিবাহ করে।
                        
যদিও উত্তর ভারতে ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহ সাধারণভাবে প্রচলিত নেই তথাপি অনুমান করা যেতে পারে যে এক সময় এর ব্যাপকতা ছিল। বৌদ্ধ ও জৈন সাহিত্যে এর বহু উল্লেখ আছে। বর্তমানে ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহ রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, কাথিয়াবার, মহারাষ্ট্র ও উড়িষ্যার কোন কোন জাতির মধ্যে প্রচলিত থাকতে দেখা যায়। রাজপুতদের মধ্যে মামাতো বোনের সঙ্গে বিবাহ বাধ্যতামূলক না হলেও এরূপ বিবাহ প্রায়ই সংঘটিত হতে দেখা যায়। রাজস্থান, কাথিয়াবাব ও গুজরাটের রাজন্যবর্গের মধ্যে এরূপ বিবাহের অনেক নিদর্শন আছে। যোধপুরের রাজপরিবারে পিসতুতো বোনের সঙ্গে বিবাহের দৃষ্টান্তও আছে, মামাতো বোনের সঙ্গে নেই। তার মানে, মামাতো বোনের সঙ্গে বিবাহ এক্ষেত্রে অনুমোদিত নয়। কিন্তু ‘কাথি’, ‘আহির’ ও ‘গাধব’ চারণদের মধ্যে মামাতো বোনের সঙ্গে বিবাহের কোন বাধা নেই! মহারাষ্ট্রের ‘কুনবী’দের মধ্যে কোন কোন শাখা ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহ অনুমোদন করে কিন্তু অপর কতিপয় শাখা তা করে না। মধ্যমহারাষ্ট্রের মারাঠাদের মধ্যে কোন কোন সম্প্রদায়ের লোক মাত্র মামাতো বোনের সঙ্গে বিবাহ অনুমোদন করে কিন্তু ওই স্থানের দক্ষিণে অবস্থিত লোকেরা মামাতো ও পিসতুতো উভয় শ্রেণীর বোনের সঙ্গেই বিবাহ মঞ্জুর করে।

উত্তর প্রদেশের তিহড়ি গাড়ওয়ালের ব্রাহ্মণদের মধ্যে বিবাহের একটা বৈচিত্র্য আছে। তিহড়ি গাড়ওয়ালের ব্রাহ্মণরা দুটি শাখায় বিভক্ত - ‘বিশুদ্ধ ব্রাহ্মণ’ ও ‘মিশ্র ব্রাহ্মণ’। বিশুদ্ধ ব্রাহ্মণরা আর্যত্ব দাবী কবে আর মিশ্র ব্রাহ্মণরা উদ্ভূত হয়েছে বিশুদ্ধ ব্রাহ্মণ ও ‘খস জাতি’র সংমিশ্রণে। এই কারণে মিশ্র ব্রাহ্মণদের ‘খস ব্রাহ্মণ’ নামে অভিহিত করা হয়। বিশুদ্ধ ব্রাহ্মণরা দুই উপশাখায় বিভক্ত - ‘সরোলা’ ও ‘যাঁরা সরোলা নয়’। শ্রেণী হিসাবে সরোলা সম্প্রদায় অন্তর্বিবাহের গোষ্ঠী। কিন্তু সম্প্রদায় হিসাবে এঁরা এত ক্ষুদ্র যে বিবাহের জন্য এঁদের পাত্রী সংগ্রহ করা খুব মুশকিল হয়। এই কারণে সরোলা ব্রাহ্মণরা প্রায়ই খস জাতির মেয়ে বিবাহ করেন। এছাড়া সরোলা ব্রাহ্মণরা অনেক সময় বাধ্য হন যাঁরা সরোলা নন তাঁদের মেয়েকে বিয়ে কবতে। এখানে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে, এইরূপ বিবাহের পর সরোলা ব্রাহ্মণের মর্যাদাচু্যতি ঘটে না কিন্তু এই বিবাহেব ফলে যে সন্তান উৎপন্ন হয় সে তাঁর পিতার মর্যাদা পায় না। তাঁকে বলা হয় ‘গাঙ্গেরি’।

এত সব বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও হিন্দুসমাজের বিধান ছিল যে, বিবাহ সকলকে করতেই হবে। কেননা বিবাহ না করলে পুত্র আসবে কোথা থেকে, যে পুত্র পূর্বপুরুষদের স্বর্গে যাবার পথ পরিষ্কার করে দেবে। এই কারণে, হিন্দুসমাজে বিবাহ ছিল বাধ্যতামূলক। বিবাহ ব্যাপারে হিন্দুসমাজে সকলেরই যোগ্যতা আছে। তা সে কানা, খোঁড়া, পঙ্গু বা আর যা কিছুই হোক না কেন। বিবাহের যোগ্যতা সম্পর্কে হিন্দুসমাজের এই দৃষ্টিভঙ্গী, আধুনিককালের আদালত কর্তৃকও সমর্থিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, যে যাঁর যত খুশী, তত বিবাহ করতে পারত। বঙ্গদেশের কুলীন ব্রাহ্মণরা তো বস্তা বেঁধে বিবাহ করতেন! এরূপ শোনা যায় যে, এক একজন কুলীন ব্রাহ্মণ ২০০-৩০০টা পর্যন্ত বিবাহ করতেন। আজকের দিনে হিন্দু অবশ্য তাঁর এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের হিন্দু বিবাহ আইন অনুসারে এক স্ত্রী জীবিত থাকতে পুনরায় বিবাহ করা দণ্ডনীয় অপরাধ। আবার আর্থিক কারণে বা অন্য কোন কারণে আজকাল তো অনেকে বিবাহই করছেন না, সারাজীবনই আইবুড়ো থেকে যাচ্ছেন।

মোটকথা, কিছুকাল আগে পর্যন্ত হিন্দুসমাজে বিবাহ ছিল সর্বজনীন ব্যাপার। এটা ছিল একটা ধর্মীয় সংস্কার এবং সকল হিন্দুকেই ওই সংস্কার অবশ্য পালন করতে হত। তবে হিন্দুসমাজে বিবাহ নিজেদের স্ব স্ব নির্বাচনের উপর নির্ভর করত না। পিতা-মাতা বা অভিভাবকরাই বিবাহ স্থির করতেন। এখনও অবধি কিছুটা হলেও এই নিয়মই বলবৎ আছে। তবে উদারপন্থী মাতাপিতা আজকাল অনেক ক্ষেত্রে ছেলেকে স্বাধীনতা দিয়েছেন আগে থাকতে মেয়েকে দেখে এসে পছন্দ করবার।
                           
আজকালকার দিনে অনেক ক্ষেত্রে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন মারফত পাত্র ও পাত্রীপক্ষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু আগেকার দিনে মধ্যস্থতা করবার জন্য ঘটকের সাহায্য নেওয়া হতো। বৈদিকযুগে এঁদের ‘দিবিস্তু’ বা ‘শম্ভাল’ বলা হতো। পরবর্তীকালে তাঁরা ‘ঘটক’ নামে পরিচিত হয়েছিল। এর জন্য ঘটকদের প্রতি পরিবারের ‘কুলপঞ্জী’ রাখতে হত। কুলপঞ্জীগুলোয় থাকত পাত্রপাত্রী ও তাঁদের পূর্বপুরুষদের বংশতালিকা। কুলপঞ্জীর বিশেষ করে প্রয়োজন হতো, বিবাহে নিষিদ্ধ সপিণ্ড পরিহার করবার জন্য।

ঘটকরা সাধারণতঃ কোন বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে পাত্রের পিতা কিংবা কোন জ্যেষ্ঠ আত্মীয়ের নিকট উপস্থিত হতেন। যদি পাত্রপক্ষ প্রস্তাবিত সম্বন্ধ মঞ্জুর করতেন তা হলে যোটকবিচারের জন্য পাত্রীর ঠিকুজি চেয়ে পাঠানো হতো।

হিন্দুসমাজে মাত্র জাতি, শাখা, গোত্র প্রবর ও সপিণ্ডই যে অবাধ বিবাহের অন্তরায় হিসাবে কাজ করতো, তা নয়। এ সম্পর্কে জ্যোতিষের প্রভাবও কম ছিল না। হিন্দু কর্মবাদী, সে অদৃষ্টে বিশ্বাস রাখে এবং সেই কারণে জ্যোতিষের উপরও তাঁর আস্থা খুব কম ছিল না। বিবাহ সম্পর্কে ‘যোটকবিচার’ই জ্যোতিষের প্রধান অঙ্গ। বর ও কন্যার জন্মরাশি থেকে যে শুভাশুভ বিচার করা হয় তাকে ‘যোটকবিচার’ বলা হয়। যোটকবিচার আট রকমের - ‘বর্ণকুট’, ‘বগুকুট’, ‘তারাকুট’, ‘যোনিকুট’, ‘গণকুট’, ‘গ্রহমৈত্রীকুট’, ‘রাশিকুট’ ও ‘ত্রিনাড়ীকুট’। প্রতি কুটের গুণানুযায়ী তার মূল্যায়ন করা হয় এক একটি সংখ্যা দিয়ে। ‘ত্রিনাড়ীকুটের ৮’, ‘রাশিকুটের ৭’, ‘গ্রহমৈত্রীকুটের ৬’, ‘যোনিকুটের ৪’, ‘তারাকুটের ৩’, ‘বগুকুটের ২’, ‘বর্ণকুটের ১’, মোট ৩৬ গুণ। সবরকম কুটের সমষ্টি অর্ধেকের বেশী হলে গুণাধিক্যহেতু বিবাহে মিলন শুভ হয় নতুবা অশুভতাহেতু সে পাত্রী পরিত্যক্ত হয়।
                           
বিবাহের জন্য ভারতের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে, ভিন্ন ভিন্ন মাস ব্যবস্থিত আছে। বঙ্গদেশে বিবাহের জন্য ‘বৈশাখ’, ‘জ্যৈষ্ঠ’, ‘আষাঢ়’, ‘শ্রাবণ’, ‘অগ্রহায়ণ’, ‘মাঘ’ ও ‘ফাল্গুন’ মাস প্রশস্ত। বিবাহ পঞ্জিকার সব বৎসরেই হয়। কেবল গুজরাটে বিবাহ সব বৎসরে হয় না। সেখানে মাত্র বিশেষ বৎসরে বিবাহ হয় এবং এই বিশেষ বৎসর বহু বৎসরের ব্যবধানে আসে। সেই কারণে ওইরূপ সময় গুজরাটে বিবাহের মরসুম লেগে যায়। তখন সকলেই বয়স নির্বিশেষে ছেলেমেয়ের বিবাহ দেবার জন্য পাগল হয়ে ওঠেন। এমন কি, পাছে গর্ভস্থ পুত্রকন্যার বিবাহ পরে ফসকে যায় সেই কারণে গর্ভবতী মেয়েরাও গর্ভস্থ পুত্রকন্যার পক্ষ হয়ে নিজেরাই বিবাহের সমস্ত আচার অনুষ্ঠান পালন করেন। এর ফলে অনেক অনুচিত ও অশোভনীয় বিবাহ হয়। যেমন - বৃদ্ধের সহিত শিশুকন্যার বা বৃদ্ধার সহিত শিশুপুত্রের বিবাহ। এরূপ ক্ষেত্রে সাধারণতঃ ওই শিশুপুত্র বা শিশুকন্যা, যখন বিবাহের প্রকৃত বয়স প্রাপ্ত হয় তখন প্রথম বিবাহের বিচ্ছেদ ঘটিয়ে সে বিনা অনুষ্ঠানে ও পুরোহিতের সাহায্য ব্যতিরেকে নূতন করে বিবাহ করতে পারে। এরূপ বিবাহকে ‘নানতারা’ বলা হয়।

অতীতে পাত্রী যদি কোষ্ঠী-ঠিকুজির ফাঁড়া কাটিয়ে উঠতে পারতেন তাহলে অভিভাবকরা পাত্রের অভিভাবকদের সঙ্গে বিবাহের কথাবার্তায় প্রবৃত্ত হতেন। এই কথাবার্তার মূল উদ্দেশ্য ছিল, বিবাহের বরপণ নির্ণয় করা। তবে পাত্রপক্ষ যদি আগে থাকতেই আভাস পেতেন যে, কন্যাপক্ষ তাঁদের মনোমত পণ দিতে অক্ষম, তাহলে কন্যাপক্ষকে সাফ জবাব দিয়ে দেওয়া হত যে কোষ্ঠীর মিল নেই। উচ্চ শ্রেণীর হিন্দুরা বরের জন্য পণ চাইতেন আর নিম্নশ্রেণীর হিন্দুরা পণ চাইতেন কন্যার জন্য। বরের পণের কোন সীমা ছিলনা। কিন্তু মেয়ের পণের জন্য সাধারণত ১০০ থেকে ৫০০ টাকা চাওয়া হত। এই প্রথা এখনও ভারতের অনেক জায়গায় প্রচলিত আছে। উত্তর ভারতের সর্বত্রই নিম্নশ্রেণীর হিন্দুরা পণ ব্যতিরেকে কখনও মেয়ের বিয়ে দেন না। মেয়ের কি মূল্য হবে সেটা সাধারণতঃ মেয়ের বয়সের উপর নির্ভর করে। মেয়ের বয়স যত কম হয়, কন্যাপণ তত কম হয়। আবার কুমারীর ক্ষেত্রে কন্যাপণ বেশী, বিধবার পক্ষে কম। বরপণের ক্ষেত্রে বরের পরিবারের সামাজিক মর্যাদা ও বরের শিক্ষা-দীক্ষা ও উপার্জনশীলতার উপর এর তারতম্য নির্ভর করে। সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বরপণ প্রথা নিম্নশ্রেণীর জাতিসমূহের মধ্যেও সংক্রামিত হচ্ছে। এর কারণ তাঁদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ও উচ্চবর্ণকে অনুকরণ করার প্রচেষ্টা বাড়ছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যেতে পারে যে বিহারের ‘যাদব মহাতো’দের মধ্যে কন্যাপণ নেওয়াই প্রথাগত রীতি। কিন্তু বর্তমানে যে জায়গায় বর লেখাপড়া শিখেছে সে জায়গায় কন্যাপণের পরিবর্তে বরপণ চাওয়া হচ্ছে। অর্থনীতির যোগান-চাহিদা বিধি যে বিবাহ ক্ষেত্রেও কার্যকরী, এটা তারই প্রমাণ ।
                              
পাশ্চাত্য দেশে বিবাহের অব্যবহিত পরেই যৌনসঙ্গম দ্বারা সিদ্ধ-বিবাহকে পূর্ণাঙ্গতা দেওয়া হয়। ভারতে বাল্যবিবাহ প্রচলিত থাকার দরুন এটা স্থগিত রাখা হত। এই কারণে কন্যা বিবাহের পর পিতৃগৃহেই থাকতো এবং আর একটা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে তবেই তাঁকে স্বামীগৃহে পাঠানো হতো। ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে এই অনুষ্ঠানের ভিন্ন ভিন্ন নাম ছিল। যেমন - ‘গৌণ’, ‘গর্ভাধান’, ‘দ্বিরাগমন’, ‘ডোলি’, ‘রূকষতি’ ইত্যাদি। সাধারণতঃ প্রথম ঋতুসঞ্চারের সময়ই এই অনুষ্ঠান নিম্পন্ন হতো। অনেক জায়গায় একে দ্বিতীয় বিবাহ বা ‘ফলবিয়া’ (‘ফল বিবাহ’) বলা হতো। সাধারণতঃ প্রথম রজদর্শনের ষোল দিনের মধ্যে প্রথম চারদিন বাদ দিয়ে যে কোন যুগ্মদিনে এই অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হত। আগেকার দিনে এই উপলক্ষে বৃদ্ধিশ্রদ্ধাদিরও ব্যবস্থা ছিল। তবে তার প্রচলন এখন আর নেই। বস্তুত বর্তমান সময়ে সমগ্র অনুষ্ঠানটিই বঙ্গদেশ থেকে তিরোহিত হয়েছে। কিন্তু ৫০/৬০ বছর আগে পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে উৎসবের আড়ম্বর দেখা যেতো। স্বামী-স্ত্রী মিলিত হয়ে ‘নব পুষ্পোৎসবে’ সূর্যকে অৰ্ঘদান করতেন। স্বামী পুত্রলাভের উদ্দেশ্যে গর্ভের মঙ্গল কামনা করে বৈদিক মন্ত্রপাঠও করতেন। বধূকে রজদর্শনের দিন থেকে নানারকম নিয়মনিষ্ঠ ও সংযত হয়ে গৃহের নিভৃতস্থানে থাকতে হতো ও নির্দিষ্ট দিনে একটি পুঁটলিতে নানারকম ফল বেঁধে তাঁকে দেওয়া হতো একটি প্রস্তর খণ্ডকে সন্তান কল্পনা করে প্রসবের অভিনয়ও করা হতো। মেয়েরাই সাধারণতঃ এই উৎসবে যোগদান করতেন। এই উপলক্ষে নাচগানও অনুষ্ঠিত হতো এবং তার মধ্যে অনেক সময় শালীনতার অভাবও দেখতে পাওয়া যেতো। বঙ্গদেশ থেকে যদিও এই প্রথার তিরোভাব ঘটেছে তা হলেও বিহারের নিম্নশ্রেণীর মধ্যে ‘গৌণা’ এখনও প্রচলিত আছে। বিহারে এটা ব্যয়-সাপেক্ষ অনুষ্ঠান। তবে মনে হয় বাল্যবিবাহের প্রচলন উঠে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘গৌণা’ প্রথারও অবসান ঘটবে।

বিগত ৫০ বছরের মধ্যে বাল্যবিবাহের প্রচলন ভারতে অনেক পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। ১৯২১ সালের আদমসুমারী অনুসারে ভারতে ১০ বছরের কম বয়স্ক ৮,৫৮,০৮৯ জন বিবাহিত বালক ও ২২,৩৫,১৫০ জন বিবাহিত বালিকা ছিলেন। আর ১০ থেকে ১৫ বৎসর বয়স্ক ২৩,৪৪,০৬৬ জন বিবাহিত বালক ও ৬৩,৩০,২০৭ জন বিবাহিতা বালিকা ছিলেন। কিন্তু ১৯৫১ সালে ১০ বৎসরের কম বয়স্ক একজনও বিবাহিত বা বালিকা ছিল না এবং ১০ থেকে ১৫ বৎসর বয়স্ক বিবাহিত বালকের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে দাড়িয়েছিল ১৭,৩৪,০০০ জন ও বালিকার সংখ্যা ৪৪,২৬,০০০ জন। বর্তমান পরিসংখ্যান অনুসারে এটা দশ হাজারের নীচে। যেহেতু বাল্যবিবাহ এখন দণ্ডনীয় অপরাধ তাই যাই হয় সেটা খুবই লুকিয়ে হয়। এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, গত ৫০ বছরের মধ্যে বাল্যবিবাহ অনেক পরিমাণে কমে গিয়েছে। একথা এখানে বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, বাল্যবিবাহ কোনদিন মালাবার উপকুলে প্রচলিত ছিল না। উত্তর প্রদেশ, বিহার, ওড়িষ্যা ও বঙ্গদেশে এর যেরূপ প্রচলন ছিল, সেরূপভাবে দাক্ষিণাত্যের অন্যত্র প্রচলন ছিল না। বাল্যবিবাহের কারণ নির্দেশ করতে গিয়ে রিসলী বলেছিলেন যে কৌলীন্যপ্রথা থেকে এটা উদ্ভূত হয়েছিল। তাঁর মতে কৌলীন্যপ্রথা যে সমাজে প্রচলিত ছিল সে সমাজে যোগ্য পাত্রের দুষ্প্রাপ্যতার জন্য কন্যার পিতামাতা যত অল্পবয়সে পারত কন্যার বিবাহ দিত। তবে আসামের কোন কোন উপজাতির মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় যে এর কারণ হচ্ছে কন্যার দুষ্প্রাপ্যতা। যে সমাজে নারী অপেক্ষা পুরুষের সংখ্যা বেশী সে সমাজে সকলেই চেষ্টা করে বিয়েটা যত তাড়াতাড়ি পারে শেষ করে ফেলতে, পাছে কন্যার অভাবে বিয়েটা ফসকে যায়। তবে হিন্দুসমাজে সাধারণভাবে বাল্যবিবাহের ব্যাপকতার কারণ মনে হয় এ সম্বন্ধে স্মৃতির অনুশাসন।

বাল্যবিবাহ এখন আইনদ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। ১৯২৯ সালে প্রণীত বাল্যবিবাহ নিয়ন্ত্রণ আইন দ্বারা, বিবাহের নূ্যনতম বয়স মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৫ ও ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৮ বৎসর নির্দিষ্ট হয়েছিল, পরে এটা পরিবর্তন করে মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ ও ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আদমসুমারীর পরিসংখ্যান থেকে প্রকাশ পায় যে বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয় নি। এ ছাড়া আর একদিকেও আইনদ্বারা বিবাহের সংস্কার করা হয়েছে। সেটা হচ্ছে উচ্চশ্রেণীর মধ্যে বিধবাবিবাহ বৈধকরণ।
                           
নিম্নশ্রেণীর মধ্যে বিধবাবিবাহ অবশ্য বরাবরই প্রচলিত আছে। উত্তর ভারত ও বিহারে এরূপ বিবাহকে ‘সাগাই’, ‘খরাও’, ‘করেওয়া’, ‘সাঙ্গা’ ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়। এছাড়া, আগেই বলা হয়েছে যে উত্তর ভারতের অনেক জায়গায় ‘দেবরণ প্রথা’ও প্রচলিত আছে। এসব ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠভ্রাতার মৃত্যুর পর কনিষ্ঠভ্রাতা বিধবা ভ্রাতৃজায়াকে বিবাহ করেন। অবশ্য উচ্চবর্ণের মধ্যে কোথাও দেবরণ প্রচলন নেই। এর প্রচলন আছে নিম্নশ্রেণীর মধ্যে। স্মৃতিশাস্ত্রে এর নিষেধ থাকা হেতু উচ্চবর্ণের হিন্দুর এর অনুমোদন করেন না। উত্তর ভারত ছাড়া ওড়িষ্যা, গুজরাট ও কাথিয়াবারে অনেক নিম্নজাতির মধ্যে দেবরণ প্রথা প্রচলিত আছে। সেই কারণে, গুজরাটের উচ্চজাতি সমূহের মধ্যে ‘দেবর’ শব্দ অতি অশ্লীল গালি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মহারাষ্ট্রেও ‘কুনবি গোষ্ঠী’র কোন কোন জাতির মধ্যে দেবরণ-এর প্রচলন দেখা যায়।

উত্তর ভারতে গাড়বালদেব মধ্যে দু’রকমের দেবরণ প্রথার প্রচলন দেখতে পাওয়া যায়। এক ক্ষেত্রে বিধবা তাঁর মৃত স্বামীর গৃহেই বসবাস চালিয়ে যেতে থাকেন এবং তাঁর সম্মতি নিয়ে দেবর যৌনমিলনেব জন্য তাঁর গৃহে আগমন করেন। অপর ক্ষেত্রে, বিধবা তাঁর দেবরের গৃহে গিয়ে তাঁর অন্ততব স্ত্রীরূপে চিবস্থায়ীভাবে বাস করেন। এরূপ মিলনের ফলে যে সন্তান হয় তা বৈধ বলেই বিবেচিত হয়। এই প্রথা ‘নিম্নগোষ্ঠীর ব্রাহ্মণ’, ‘রাজপুত’ ও ‘খস’দের মধ্যেও প্রচলিত আছে। খসদের মধ্যে বিধবাকে বিবাহ কবে বিধবার গৃহেই দেবরের বাস করার রীতি প্রচলিত আছে। খসদের মধ্যে এরূপ ব্যক্তিকে ‘কঠেলা’ বা ‘টাকওয়া’ বলা হয়। এরূপ মিলনের ফলে যে সন্তান উৎপন্ন হয়, তাঁকে ‘ঝটেলা’ বলা হয়। যে ক্ষেত্রে বিধবা তাঁর দ্বিতীয় স্বামীর গৃহে বাস করেন, সে ক্ষেত্রে প্রথম স্বামীর ঔরসজাত সন্তান যদি বিপিতার গৃহে গিয়ে মাতার সঙ্গে একত্র বাস করে তাহলে সে তাঁর প্রকৃত পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয় কিন্তু তাঁর বৈমাত্রেয় ভ্রাতাদের সঙ্গে সমানভাবে বিপিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়।
                                
হিন্দুসমাজে উচ্চবর্ণের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ অসম্ভব ব্যাপার ছিল। তার কারণ, হিন্দুর দৃষ্টি-ভঙ্গীতে বিবাহ ‘চুক্তি’ বিশেষ নয়। এটা হচ্ছে একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং বিশুদ্ধিকরণের জন্য দ্বিজাতির মধ্যে যে দশবিধ সংস্কার আছে, বিবাহ তার মধ্যে শেষ ও চরম সংস্কার। এই সংস্কার দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৫৬ সালে হিন্দুবিবাহ আইন প্রণীত হবার পূর্ব পর্যন্ত স্বামী দ্বিতীয়বার দারপরিগ্রহ করতে পারতেন। কিন্তু সে কারণে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হতো না। এক কথায় সনাতন হিন্দুসমাজে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক কখনও প্রত্যাহৃত হবার অবকাশ ছিল না, তবে স্ত্রী ব্যভিচারিণী হলে তাঁকে সমাজ থেকে বহিস্কৃত করে দেওয়া হত এবং স্ত্রী হিসাবে তিনি তাঁর পূর্বমর্যাদা হারাতেন। কিন্তু উত্তর ভারতের নিম্নজাতির মধ্যে ও দক্ষিণ ভারতের কোন কোন উচ্চ ও নিম্নজাতির মধ্যে, বিশেষ করে যেখানে ‘সম্বন্ধম’ প্রথার বিবাহ প্রচলিত আছে সেখানে বিবাহ-বিচ্ছেদ কঠিন ব্যাপার নয়। উত্তর ভারতের জৌনসর বাওয়ার অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ প্রচলিত আছে। সেখানে একে ‘ছুট’ বলা হয়। মুখের কথায় বা লিখিতভাবে যে কোন সময় যে কোন স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে পারে, যে পরবর্তী পুরুষ তাঁকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করবেন তিনি প্রথম স্বামীকে দ্বিগুণ ‘জিওধন’ বা কন্যাপণ দিতে প্রস্তুত থাকে। উত্তরাখণ্ড রাজ্যের দেরাদুনের চাকরত তহশীলে পূর্বস্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন স্ত্রীলোককে বিবাহ করতে হলে পাত্র কর্তৃক কন্যার পিতাকে বিবাহের আনুষ্ঠানিক ব্যয় বাবদ ‘জিওধন’ দেবার প্রথা প্রচলিত আছে। তিহড়ি গাড়ওয়াল অঞ্চলের ডোম জাতির মধ্যেও বিবাহ-বিচ্ছেদ প্রথা প্রচলিত আছে। সেখানে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের সম্মতি অনুসারে বিবাহ সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে। তবে কোন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারণ ব্যতিরেকে আজকাল বিবাহ-বিচ্ছেদ সচরাচর ঘটে না।

অনেক জায়গায় আবার বিবাহ-বিচ্ছেদের ফলে স্ত্রীলোকের পদমর্যাদা বেড়ে যায়। দক্ষিণ ভারতের কুরুবদের মধ্যে যে স্ত্রীলোক সাতবার স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে সে স্ত্রীলোকের পদমর্যাদা আচার অঙ্গুষ্ঠানের ব্যাপারে অনেক উচ্চ। বিবাহের আচার-অনুষ্ঠানের ব্যাপারে এরূপ স্ত্রীলোক সাধারণতঃ নেতৃস্থান অধিকার করেন। মধ্য প্রদেশেও অনেক জাতির মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ প্রথা প্রচলিত আছে। সেখানে প্রথম স্বামী কন্যাপণ ফেরত পেলেই স্ত্রীকে অনুমতি দেন অপরের সঙ্গে চলে যেতে এবং তাঁকে বিবাহ করতে। তারপর পঞ্চায়েতকে ভোজন করিয়ে দিলেই বিবাহ-বিচ্ছেদ ও নতুন বিবাহ অনুমোদিত হয়। হোশঙ্গাবাদের রাজপুতবংশীয় যাদব নামে এক উচ্চ জাতির মধ্যে কোন কোন নারী তাঁর সমগ্র জীবনকালের মধ্যে নয়-দশবার পর্যন্ত বিবাহ বন্ধন বিচ্ছিন্ন করতে পারেন। বিহারের নিম্নজাতিসমূহের মধ্যেও বিবাহ-বিচ্ছেদ প্রথা প্রচলিত আছে। এক কথায়, সমগ্র ভারতেই নিম্নশ্রেণীর কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণীর অস্ত্যজ জাতিসমূহের মধ্যে বিবাহের সম্পর্ক খুব সহজভাবেই বিচ্ছিন্ন করা যায়। ১৯৫৬ সালে প্রণীত হিন্দুবিবাহ আইন দ্বারা হিন্দুদের মধ্যে আদালতের সাহায্যে ক্ষেত্রবিশেষে বিবাহ-বিচ্ছেদ সহজ হয়ে গেছে।
                              
কেরালার মাতৃকেন্দ্রিক ক্ষত্রিয় ‘নায়ারজাতি’র মেয়েদের সঙ্গে পিতৃকেন্দ্রিক ‘নাম্বুদ্র ব্রাহ্মণ’দের এক বিচিত্র দাম্পত্যবন্ধন দেখা যায়। নাম্বুদ্রী ব্রাহ্মণদের সঙ্গে উত্তর ভারতের ব্রাহ্মণদের এক বৈশিষ্ট্যমূলক পার্থক্য এই যে, সামাজিক প্রথানুযায়ী নাম্বুদ্রী ব্রাহ্মণদের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পুত্রদ্বয়ই নিজ জাতির মধ্যে বিবাহ করতে পারেন, অপর পুত্রেরা তা পারেন না। তাঁরা মাতৃকেন্দ্রিক ক্ষত্রিয় নায়ার জাতির স্ত্রীলোকদের সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন করেন। এরূপ সম্পর্ককে ‘সম্বন্ধম’ বলা হয়। নায়ারদের মধ্যে গোষ্ঠীকে ‘তারবার’ বলা হয়। কোন এক বিশেষ তারবারভুক্ত নায়ার-রমণীর সহিত কোন নাম্বুদ্র ব্রাহ্মণপুত্রের যে ‘সম্বন্ধম’ সম্পর্ক স্থাপিত হয় সেই সম্পর্কবলে সেই নায়ার-রমণীকে গর্ভবতী করবার অধিকার তাঁর থাকে। তবে নায়ারদের মধ্যে যে সাধারণ নিয়মানুগ বিবাহ প্রচলিত নেই, এমন নয়। সাধারণ নিয়মানুগ বিবাহপ্রথাও তাঁদের মধ্যে প্রচলিত আছে। তবে এরূপ বিবাহ সাময়িক ও বিকল্প বিবাহ মাত্র। যৌবনারম্ভের সঙ্গে সঙ্গে নায়ার-কুমারীদের নিজ জাতিভুক্ত কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠীভুক্ত পুরুষের সঙ্গে বিবাহ হয়। পরে এই বিবাহের বিচ্ছেদ ঘটিয়ে, নায়ার-রমণী যে কোন নাম্বুদ্র ব্রাহ্মণের সঙ্গে দাম্পত্যসম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন। ‘সম্বন্ধম’ সম্পর্ক অবিনশ্বর নয়। অনেক সময় কোন কোন নায়ার-রমণীকে পরপর ১০১২ জন নাম্বুদ্র ব্রাহ্মণের সঙ্গে ‘সম্বন্ধম’ স্থাপন করতে দেখা যায়। নাম্বুদ্রী ব্রাহ্মণ কখনও তাঁর নায়ার স্ত্রীর গৃহে গিয়ে বাস করেন না। নায়ার স্ত্রীও কখনও তাঁর নাম্বুদ্র স্বামীর ঘরে যায় না। নায়াররা মাতৃকেন্দ্রিক জাতি, সুতরাং বিবাহের পর কখনও স্বামীগৃহে যায় না। সাধারণতঃ নাম্বুদ্র স্বামী সন্ধ্যার পর যৌনমিলনের জন্য নায়ার-স্ত্রীর গৃহে আসে এবং মিলনান্তে পুনরায় নিজ পিতৃকেন্দ্রিক পরিবারের মধ্যে ফিরে যায়। অনেক সময় নায়ার-রমণী একইকালে একাধিক নাম্বুদ্রী ব্রাহ্মণের সঙ্গে ‘সম্বন্ধম’ সম্পর্ক স্থাপন করেন। এরূপ ক্ষেত্রে এরূপ আচরণ ‘বহুপতিক বিবাহের’ রূপ ধারণ করে। যে ক্ষেত্রে এই সম্পর্ক এইভাবে বহুপতিক বিবাহের রূপ ধারণ করে সে ক্ষেত্রে সকল স্বামীরই ওই নায়ার-রমণীর উপর সমান যৌনাধিকার থাকে। অতীতে একজন স্বামী এসে দ্বারদেশে যদি অপর স্বামীর ঢাল বা বর্শা দেখতে পেতেন, তাহলে তিনি প্রত্যাগমন করতেন ও পরবর্তী সন্ধ্যায় পুনরায় নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করতে আসতেন। এখন অবশ্য ঢাল-বর্শার যুগ নয়, তাই জুতোজোড়া দেখতে পেলেও একই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

আগেই বলা হয়েছে যে, নায়ার-পরিবার মাতৃকেন্দ্রিক। এ ধরনের পরিবার গঠিত হয় স্ত্রীলোক স্বয়ং ও তাঁর ভ্রাতা, ভগিনী ও তাঁদের সন্তানদের নিয়ে। কোন বিবাহিতা স্ত্রীলোকের স্বামী বা বিবাহিত পুরুষের স্ত্রী এই পরিবারের মধ্যে বাস করতেন না। আগে আরও বলা হয়েছে যে ‘সম্বন্ধম’ ব্যতীত নায়ারদের মধ্যে নিয়মানুগ সাধারণ বিবাহপ্রথাও প্রচলিত আছে। সেক্ষেত্রেও নায়ারস্বামী অন্যত্র বাস করেন এবং নাম্বুস্ত্রী ব্রাহ্মণদের মত তিনিও সন্ধ্যার পর স্ত্রীর সঙ্গে যৌনমিলনের জন্য স্ত্রীর গৃহে এসে উপস্থিত হন।
                              
হিন্দুদের মধ্যে বৃক্ষ বা জড়পদার্থের সঙ্গে বিকল্প বিবাহেরও প্রথা আছে। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন যে, বিবাহে অযুগ্ম সংখ্যা অত্যন্ত অশুভ। সেই কারণে কোন ব্যক্তি যখন তৃতীয়বার বিবাহ করতে প্রবৃত্ত হন তখন তিনি অযুগ্ম তৃতীয় বারের অশুভতা খণ্ডন করবার জন্য কোন বৃক্ষ বা জড়পদার্থের সঙ্গে বিকল্প বিবাহের পর নির্বাচিত কন্যাকে বিবাহ করেন। বিহারের কোন কোন জায়গায় অবিবাহিত ব্যক্তি যদি কোন বিধবাকে বিবাহ করতে মনস্থ করেন, তা হলে তিনি প্রথমে কোন শ্যাওড়া গাছের সঙ্গে বিকল্প বিবাহ সম্পন্ন করেন এবং পরে ওই বিধবাকে বিবাহ করেন। এরূপ ক্ষেত্রে কোন ‘শাখোটক বৃক্ষের’ (শ্যাওড়া গাছ) শাখা নামিয়ে তা পুষ্পমাল্যদ্বারা বরের হাতের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়। তারপর বিধবাকে সেখানে উপস্থিত করান হয়। বিধবা তখন বরের সঙ্গে মাল্যবিনিময় করেন এবং বরের দেওয়া মালা হাতে পড়েন। এই ভাবে শাখোটক বৃক্ষ বরের প্রথম স্ত্রী হয় এবং ঐ বিধবা তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রীরূপে পরিগণিত হন।

‘কোটা জাতি’র মধ্যে এরূপ বিশ্বাস বদ্ধমূল আছে যে, যদি কোন অবিবাহিত পুরুষ কোন বিধবাকে বিবাহ করে তবে মৃত্যুর পর তাঁকে প্রেত হয়ে থাকতে হয়। সেই কারণে কোন বিধবাকে বিবাহ করার আগে কোটা অবিবাহিত যুবক কোন ফুলকে বিকল্প বিবাহ করেন। ‘হালওয়াই জাতি’র মধ্যে এরূপ বিকল্প বিবাহ সিন্দুর-লিপ্ত কোন তলোয়ার বা লৌহখণ্ডের সঙ্গে হয়। বঙ্গদেশে ‘বাগদী জাতি’র মধ্যেও বিবাহ করবার আগে অবিবাহিত যুবক প্রথমে কোন মহুয়া গাছের সঙ্গে বিকল্প বিবাহ সম্পন্ন করেন। ‘খারওয়ার জাতি’র মধ্যে এরূপ বিকল্প বিবাহ যে শুধু পুরুষকেই করতে হয় তা নয়, বিধবাকেও করতে হয়। এক্ষেত্রে এরূপ বিবাহ আম্রবৃক্ষের সহিত নিম্পন্ন হয়। কিন্তু ছোটনাগপুরের ‘কুর্মি’দের মধ্যে পুরুষ ও বিধবাকে বিভিন্ন বৃক্ষকে বিবাহ করতে হয়। তাঁদের মধ্যে সাধারণতঃ বিধবার বিবাহ হয় মহুয়া গাছের সঙ্গে আর পুরুষদের বিবাহ হয় আম্রবৃক্ষের সঙ্গে। কুর্মিদের মধ্যে এরূপ বিবাহে আনুষ্ঠানিক আড়ম্বরের আধিক্য লক্ষিত হয়। এক্ষেত্রে বিধবা তাঁর ডান হাতে মহুয়া পাতা দিয়ে তৈরী বালা পড়ে সাতবার মহুয়া গাছটিকে প্রদক্ষিণ করেন। তাঁর ডান হাত ও কান মহুয়া গাছের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয় ও তাঁকে মহুয়া গাছের পাতা চিবুতে দেওয়া হয়। পুরুষের ক্ষেত্রে আমগাছটিকে নয়বার প্রদক্ষিণ করতে হয়। ‘মহিলি জাতি’র মধ্যেও অনুরূপ প্রথা ও অনুষ্ঠান প্রচলিত আছে।
                                 
আগেকার দিনে রজদর্শনের পূর্বে কন্যার বিবাহ না দিলে তাঁর পিতামাতাকে সামাজিক কলঙ্ক বহন করতে হতো। এরূপ কলঙ্কের হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য বিহারের ‘খগু জাতি’র অন্তর্ভুক্ত ‘গোনর’-উপশাখার লোকেরা তলোয়ারের সঙ্গে কন্যার বিকল্প বিবাহ দিতেন। কন্যার কোনরূপ বিকলাঙ্গতার জন্য বিবাহ হবে না এরূপ মনে হলেও কন্যার বিকল্প বিবাহ দেওয়া হত। প্রথম রজদর্শনের অব্যবহিত পূর্বে উড়িষ্যাতেও কন্যার বিবাহ দেওয়া হয় কোন পুষ্প, বৃক্ষ বা তীরের সঙ্গে। উড়িষ্যার চাষাজাতির মধ্যে এরূপ বিবাহে পুরোহিত ওই পুষ্প, বৃক্ষ বা তীর কুশরজ্জ্বর সাহায্যে কন্যার হাতের সঙ্গে বেঁধে দেন। প্রকৃত স্বামীর ন্যায় কন্যা সারাজীবন সেই পুষ্প, বৃক্ষ বা তীরকে গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন ও তার নাম উচ্চারণ করেন না। পরে যখন কোন লোকের সঙ্গে ওই কন্যার বিবাহ হয় তখন সেই বিবাহকে ‘দ্বিতীয়া বিবাহ’ বলা হয়। এঁদের মধ্যে বিধবার পুনরায় বিবাহকেও ‘দ্বিতীয়া বিবাহ’ বলা হয়। দ্বিতীয় বিবাহের এক বিচিত্র আনুষ্ঠানিক উপসঙ্গের কথা এখানে উল্লেখযোগ্য। দ্বিতীয় বিবাহ বরের উপস্থিতিতে না হয়ে তাঁর অনুপস্থিতিতে সম্পন্ন হয়। এরূপ বিবাহে সাধারণতঃ বরের ছোট ভাই এসে কনের হাতে বালা পরিয়ে দেন।

বঙ্গদেশে গণিকাদের মধ্যেও বিবাহ প্রচলিত আছে। এক্ষেত্রে হিন্দু গণিকাদের মধ্যে বিবাহ সাধারণত কোন জড়বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি বা ভাড়া করা বৈষ্ণব বা কোন গাছের সঙ্গে দেওয়া হত (এখনও কিছুক্ষেত্রে হয়)। মুসলমান গণিকারা এরূপ বিবাহ তলোয়ার বা ছুরিকার সঙ্গে করতেন (এখনও কিছুক্ষেত্রে করেন)। হিন্দু গণিকাদের ক্ষেত্রে ওই বৃক্ষকে যত্নসহকারে জল দিয়ে পালন করা হয় আর মুসলমান গণিকারা ওই তরবারী বা ছুরিকা সযত্নে কোন পেটিকার মধ্যে রক্ষা করেন। তাঁদের বিশ্বাস যে, কোনক্রমে এগুলি বিনষ্ট হলে কন্যা বিধবা হবেন।
                               
(তথ্যসূত্র:
১- ভারতের বিবাহের ইতিহাস, অতুল সুর, আনন্দ পাবলিশার্স।
২- The Vedic Wedding Book: Origin, Tradition & Practice; A.V. Srinivasan.
৩- Hindu Intercaste Marriage in India: Ancient and Modern, Haripada Chakraborti, Sharada Publishing House (১৯৯৯)।)
                          ©️রানা চক্রবর্তী©️

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

নামহীন বলেছেন…
That mentioned, certain you|ensure you|be positive to} select a reasonable player to put your money behind, or you might become victim to them making some pretty unhealthy choices. Throughout the session, feel free to talk to the dealer or different players at the desk, who should be pleased to reply whilst you gamble. The monitor can present what online players see on their screens. If you aren't prepared to appear on display screen, you'd do higher to take a SM카지노 seat at another position. Usually, a roulette desk has three separate cameras for an summary, shots of the desk, and the wheel, and the third one options the so-called picture in picture show.