পর্ব-"গো পাঁচালি"।। সত্যান্বেষী পৃথ্বীশ



গো-ভক্ষণ ভালো এমন উপদেশ আমরা বেদ এবং অন্যান্য গ্রন্থগুলিতে ভুরি ভুরি দেখতে পাই। 

অতিথিরা গো-মাংস বেশি খেতে পছন্দ করত বলে তাদের “গোঘ্ন” বলা হত।
মহাভারতের অনুশাসন পর্বে শ্রাদ্ধাদি কাজে অতিথিদের গো-মাংস ভক্ষন করালে পূর্বপুরুষ দ্বাদশ বৎসর স্বর্গসুখ পেতে পারে এমন উপদেশ পিতামহ ভীষ্ম দিয়েছিল যুধিষ্ঠিরকে।
বিরাট রাজার গোশালায় অজস্র গরু বলি দেওয়া হতো তার উল্লেখ পাওয়া যায়।
রামায়ন কাহিনীতে রাম যে গরুর মাংসের সাথে মদ খেতে ভালোবাসত তার উল্লেখ আছে। বনবাসকালে রাম তার পিতার কাছে আক্ষেপ করে বলেছিল যে- সে ১৪ বছর গো-মাংস খেতে পারবেনা, সোমরস পান করতে পারবে না এবং স্বর্ণ পালঙ্কে ঘুমাতে পারবেনা। 
শতপথ ব্রাহ্মণে গো-হত্যা এবং গো-মাংস খাওয়ার বিধান রয়েছে(১১১/১/২১); ঋকবৈদিক কালে আর্যরা গরু খেতো তার পরিষ্কার উল্লেখ পাওয়া যায়- “ ইন্দ্র বললো- তাদের খাওয়ার জন্য ২০টি ষাঁড় রান্না করা হয়েছে (ঋক:৮৬/১৪)।

এইভাবে ঋগ্বেদে অগ্নির উদ্দেশ্যে ঘোড়া, বলদ, ষাঁড়, দুগ্ধহীন গাই এবং ভেড়া বলি দেবার কথা উল্লেখ আছে। এইসময় আরো দেখা যায় যে- গরু বা ষাঁড়গুলিকে আর্যরা তরোয়াল বা কুড়ুল দিয়ে হত্যা করত। একটি বেঁটে ষাঁড় বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে, একটি চিতকপালী শিংওয়ালা গরু ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে, একটি কালো গরু পুষানের উদ্দেশ্যে, একটি লাল গরু রুদ্রের উদ্দেশ্যে বলি দেওয়া হতো। 
তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে “পঞ্চশারদীয়-সেবা” নামে একটি ভোজন অনুষ্ঠান পাওয়া যায় যেখানে যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ১৭টি ৫ বছরের নীচে গো-বৎস কেটে রান্না করে অতিথিদের পরিবেশন করা।
বাল্মীকি রামায়ণের আদি ও অযোধ্যাকাণ্ডে স্পষ্ট করে লেখা আছে- “রাম গো-মাংস ভক্ষণ করতেন”। বনবাসে যাবার পথে রাম, লক্ষ্মণ ও সীতা ভরদ্বাজ মুনির আশ্রমে উপস্থিত হলে মুনিবর বৃষ মাংস এবং ফলমূল দিয়ে তাদের ভোজনের ব্যবস্থা করেছিলেন (বাল্মীকি রামায়ণ:২/৫৪)।
ঋগ্বেদ সংহিতায় “বিবাহসূক্ত”-এ কন্যার বিবাহ উপলক্ষ্যে সমাগত অতিথি-অভ্যাগতদের গো-মাংস পরিবেশনের জন্য একাধিক গরু বলি দেওয়ার বিধান আছে (ঋগ্বেদ সংহিতা:১০/৮৫/১৩)।
চাণক্য তাঁর “অর্থশাস্ত্র”-এ, বলেছেন- গো-পালকেরা মাংসের জন্য ছাপ দেওয়া গো-মাংস কাঁচা অথবা শুকিয়ে বিক্রি করতে পারে (অর্থশাস্ত্র:২/২৯/১২৯)।
চরক বলছেন- গো-মাংস বাত, নাকফোলা, জ্বর, শুকনো কাশি, অত্যাগ্নি (অতিরিক্ত ক্ষুধা বা গরম), কৃশতা প্রভৃতি অসুখের প্রতিকারে বিশেষ উপকারী (চরকসংহিতা:১/২৭/৭৯)।
সুশ্রুতও একই সুরে বলেছেন- গো-মাংস পবিত্র এবং ঠান্ডা। হাঁপানি, সর্দিকাশি, দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, অতিক্ষুধা এবং বায়ু বিভ্রাটের নিরাময় করে (সুশ্রুতসংহিতা:১/৪৬/৪৭)।

স্বামী বিবেকানন্দ'তো পরিষ্কার বলেছেন ব্রাহ্মণরা গো-মাংস ভক্ষন করতো। তবে হঠাৎ কেন হিন্দুত্ববাদীরা এত গো-প্রেম দেখাতে শুরু করেছে বলতে পারবেন???

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ