মনসংযোগ করার কিছু পদ্ধতি ।। সর্নালী মন্ডল



মনসংযোগ কখন করতে হবে। যখন মন খুব অস্থির থাকে, তখন আমরা মনসংযোগ করতে পারি না। এরপরেই আমাদের মনে হয় concentration বা মনসংযোগের ব্যাঘাত ঘটছে।
এই মন অস্থিরতা কখন হয়? এটা মূলত অলস দেহ হলে যেমন কায়িক পরিশ্রম যত কম হয় তত শরীর বা মন অস্থির লাগে। কায়িক পরিশ্রম যত বেশি হয় তত মনসংযোগ বাড়ে।

এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে ছোট বা বড়োরা যারা পড়াশোনা করছে, বা যারা পড়াশোনা করছেন না, বিভিন্ন কাজে যুক্ত আছেন, নিয়মিতভাবে যদি ব্যায়াম করা যায়, সেক্ষেত্রে মনঃসংযোগটা বাড়ে।
ছোটদের ক্ষেত্রে নিয়মিত খেলাধুলার মাধ্যমে মনসংযোগ বাড়ে। 

এক্ষেত্রে মনসংযোগ না থাকার আরো একটা বিষয় আছে। মন যদি ভালো না থাকে, মন যদি বিক্ষিপ্ত থাকে, তখন সেক্ষেত্রে কিন্তু মনঃসংযোগের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। মন ভালো না থাকলে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারি, গল্প করতে পারি, কথাবার্তা বলতে পারি। এই যোগাযোগের মধ্যে দিয়ে মন অনেক ক্ষেত্রে ভালো হয়।

কোনো ক্রিয়েটিভিটি কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে বা টিভি পোগ্রাম বা কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা বা দেখা, বা কোথাও ঘুরতে যাওয়া বা কেনাকাটি করা- এসবের মধ্যে দিয়ে মনটা ভালো রাখা যায়। তখন সেক্ষেত্রে মনের অস্থিরতা কমে যাবে, মনসংযোগ বাড়বে।
অনেক সময় দেখা যায় মূলত স্টুডেন্ট বা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বাবা-মা-রা বলে বা বড়রা বলে যে বাইরে বেশি বেড়িও না-খেলো না, পড়ো। এই যে বিষয়গুলো এগুলো হলে কিন্তু তারা জোর করে একজায়গায় বসে থাকবে। বইটা নিয়ে আপনি বসিয়ে দিলে বসবে, কিন্তু মনটা বিক্ষিপ্ত থাকবে। সে তখন সেই বিষয়টার প্রতি মনঃসংযোগ করতে পারবে না। অর্থাৎ জোর করে কিছু চাপিয়ে দিলে কিন্তু মনসংযোগ থাকে না।
আবার যেমন দেখা যায় যে স্কুল থেকে ফিরে কেউ ফোন বা টিভি নিয়ে বসে গেলো বা আবার পড়তে বসে গেলো বা চলে গেলো টিউশনে। বাড়ি ফিরে আবার হয়তো ফোন ঘাঁটছে রিলাকসেশনের জন্য, তারপর আবার ফের বই পড়তে শুরু করে দিল। এভাবে একনাগাড়ে কাজের মধ্যে যদি থাকে, তখনো কিন্তু দেখা যাবে যে সে কাজগুলো একের পর এক করছে কিন্তু মনটা উপস্থিত থাকছে না কাজের প্রতি। 
এক্ষেত্রে যেটা করা যেতে পারে যে স্কুল থেকে ফিরে টিভি, ফোন বা বইপড়া এসবের বদলে কিছুক্ষণ সময় ব্রেক নেওয়া এবং সেই সময়ে খেলতে যাওয়া। তখন মাঠে খেলতে যেতে পারে। একটা খেলার পরিবেশ তৈরি করা যেতে পারে। তবে সেই খেলা মানে মোবাইলে বা কম্পিউটারে গেম খেলা নয়। একটা শরীরচর্চা মূলক খেলা। কায়িক পরিশ্রম যত বেশি হবে, তত মনঃসংযোগ বাড়বে।

এছাড়া মনসংযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি আছে। ছোট বড় সকলেই এই পদ্ধতি ফলো করতে পারেন।
বয়স্কদের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতিগুলো খুবভাবে কার্যকর হয়।

* যখন কারোর মনে হচ্ছে যে সে মনসংযোগ করতে পারছেন না, তখন ঘরের মধ্যে একটা জায়গায় চেয়ার বা সোফায় ৫ মিনিট বা ১৫ মিনিট বসে থাকতে হবে। তাকে এটাই ভাবতে হবে যে আমি এই চেয়ারে বসেই থাকবো শুধু, আমি কিছু ভাববো না। আমার চারপাশে কিছু বিষয় হয়তো ঘটছে, কিন্তু সেসব নিয়ে আমি কিছু ভাববো না। আমার চোখ আছে আমি দেখবো, কান আছে আমি শুনবো। কিন্তু সেই মুহূর্তে আমার ভাবনাচিন্তাগুলোকে নিয়ে ভাববো না। আমার কোনো দুঃশ্চিন্তা নেই, ভাবনা নেই। আমি শুধু বসে আছি। ব্যস।
এটা যারা করবেন তারা হয়তো ভাবছেন যে এটা কি করে সম্ভব! বসে থাকলে মনের মধ্যে কিছু না কিছু ভাবনাচিন্তা আসবে। যারা বড়ো বা বয়স্ক বা যারা সংসারী বা কর্মব্যস্ত মানুষ আছেন, তারা ভাবতে পারেন যে আমরা কর্মব্যস্ততার মধ্যে যদি বসে থাকি, তাহলে তো হাজার হাজার চিন্তা আসবে।
হ্যাঁ, একদমই তাই। আপনাদের ভাবনাটা সঠিক। কিন্তু তার মধ্যে দেখা যায় যে প্রথমের দিকে আমরা কোনোকিছুই ভালোভাবে করতে পারি না। চেষ্টা ও অভ্যাস দ্বারা আস্তে আস্তে বিষয়টা আত্মস্থ করতে হয়। ঠিক সেরকমভাবে প্রথমে দু মিনিট, তারপর পাঁচমিনিট, পনেরো মিনিট এভাবে আপনি সময়সীমা বাড়ান। এইভাবে আপনি দিনের মধ্যে দু থেকে তিনবার এটা করতে পারেন।

* দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হল আপনি যে চেয়ারে বসছেন তার সামনের পাঁচিলে একটি ঘড়ি টানিয়ে নিন। সেই চেয়ারে বসে আপনি ঘড়ির দিকে তাকালেন। আপনি সেকেন্ডের কাঁটাটিকে ঘুরতে দেখুন। সেকেন্ডের কাঁটাটি কিভাবে ঘুরছে সেটা লক্ষ্য করুন। মনের মধ্যে ঘুরতে থাকা চিন্তাভাবনাকে আমল দেবেন না। আপনার চারপাশে হয়তো অনেক কিছু ঘটবে। বাইরের গাড়ির আওয়াজ শুনতে পাবেন, কোলাহল শুনতে পাবেন। কিন্তু সেদিকে মনোনিবেশ করবেন না। আপনি শুধু ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটাটিকে ঘুরতে দেখুন। এইভাবে ৫ মিনিট থেকে সময় বাড়িয়ে ১৫ মিনিট পর্যন্ত এটা করুন।

* এরপরের পদ্ধতি হল বসে আপনার হাতটিকে মুষ্টিবদ্ধ করুন এবং আবার খুলুন। এইভাবে আপনি শুধু এইটাই করবেন। হাতের মুঠো বন্ধ করবেন এবং খুলবেন এবং আপনি এই দিকেই তাকিয়ে থাকবেন। আপনার সমস্ত মনসংযোগ মুঠো খোলা ও বন্ধ করার দিকে নিবদ্ধ করবেন। এইরকম পাঁচমিনিট ধরে করুন। দিনে এরকম দু থেকে তিনবার করুন। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি ভীষণ কার্যকরী একটি পদ্ধতি।


বেশিরভাগ পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে যেটা দেখা যায় যে তারা পড়ার দিকে বেশি জোর দেয়। লেখে না। পড়ার পাশাপাশি যেন তারা লেখে এটার দিকে সচেতন হন। যেসব পড়ুয়াদের মনে হচ্ছে যে বই খুলে পড়তে বসেও পড়তে পারছে না, তাদের তখন পড়ার পাশাপাশি লেখাটাও সমানভাবে করতে হবে।

যেসব পড়ুয়াদের মনসংযোগ খুবই কম, তাদের ক্ষেত্রে খাটে বসে না পড়াটাই ভালো।
খাটে বসে না পড়ে চেয়ার-টেবিল বা নীচে বসে পড়তে পারে।

আবার লিখতে গিয়ে অনেক সময় দেখা যায় যে স্পেলিং মিসটেক হচ্ছে, বানানগুলো ভুল হচ্ছে। সেক্ষেত্রে একই পড়া যখন সে বারবার লিখছে তখন আস্তে আস্তে এই স্পেলিং মিসটেক কমে যাবে এবং একই সঙ্গে তার মনসংযোগও বাড়বে।

আবার কিছু খেলা খেললেও মনসংযোগ বাড়ে। যেমন দাবা খেলা, জিগস পাজল, কার্ডবোর্ড গেম। আবার মোবাইলেও এমন কিছু গেম আছে যেটার মধ্য দিয়ে মনসংযোগ বাড়ে যেমন পাজল গেম ইত্যাদি।

আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে আমরা হয়তো কিছু জিনিস পড়েছি বা শুনেছি, কিন্তু মনে করতে পারছি না। তখন সেক্ষেত্রে হাল ছেড়ে না দিয়ে আমাদের চেষ্টা করতে হবে মনে করার।

মনসংযোগ বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন খেলা আছে, যেমন অন্তকশরী, মেমরি টেস্ট বা মেমরি গেম। একসাথে কেউ পাঁচটা শব্দ বললো, আর একজন সেই পাঁচটা শব্দের সঙ্গে আরও একটি শব্দ যোগ করে বললো। আর একজন সেই ছটা শব্দের সঙ্গে আরও একটি শব্দ যোগ করে বললো। এরকম করে অনেক খেলা আছে যেটার মধ্য দিয়ে মনসংযোগ বাড়ে।

মনসংযোগ বাড়ানোর এই পদ্ধতির মাধ্যমে একদিনেই মনসংযোগ আসবে না। দীর্ঘদিনের অভ্যাসের মাধ্যমে মনসংযোগ ফিরে আসবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ