কন্যাভ্রুণ হত্যা ও রাজস্থান ।। শিবাশীষ বসু


যারা ছুটিতে রাজস্থান বেড়াতে গিয়েছেন, জয়সলমীর নিশ্চয়ই মিস করেন নি। জয়সলমীরের মরুভূমি, সুর্যাস্ত, সোনার কেল্লা অথবা বিভিন্ন রাজা বা জমিদারদের দুর্দান্ত পাথরের কাজ করা হাভেলি দেখতে দেখতে কখনও কি আপনার মনে পড়েছে ওখানকার মেয়েদের বুকে জমে আছে কি অপরিসীম বেদনা, কান্না।

না বন্ধুরা, আমারও মনে পড়েনি বা বলা যায় বুঝতে পারিনি। বেড়াতে গিয়ে আর মানুষের মনের খবর কে নেয় বলুন? বন্ধুরা আজ সেই কাহিনী - না কাহিনী নয় নিদারুণ সত্যের মুখোমুখি করতে চলেছি আপনাদের।

কন্যাভ্রূণ হত্যা বা সদ্যোজাত শিশুকন্যা হত্যা রাজস্থানের এই অঞ্চলের অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। প্রায় প্রতিদিন এখানে মা-এর মরণ হয়। ২০১৩ তে জয়সলমীর জেলার ৪০টি গ্রামে ৫৪টি এই জাতীয় হত্যা লিপিবদ্ধ হয়েছে। মনে রাখুন বন্ধুরা আমি সরকারি হিসাবের কথা বলছি - মরুভুমির মধ্যে প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে কিভাবে সরকারি ডাটা পাওয়া যায়, নিশ্চয়ই আপনাদের বলে দিতে হবে না।

বেসরকারী তথ্য কি বলছে জানেন? শুনে চমকে উঠবেন না। প্রতিদিন রাজস্থানে ২৫০০ (আড়াই হাজার) কন্যাভ্রুন ও শিশুকন্যার মৃত্যু হয়। জানেন, কেন্দ্রীয় সরকারের 'জননী সুরক্ষা যোজনা'য় সরকারি হাসপাতালে প্রতিটি সদ্যোজাতর জন্য ১৪০০ টাকা করে দেওয়া হয়। জয়সলমীরের রাজপুত পুরুষরা কন্যার জন্মের পর টাকাটি হস্তগত করে স্ত্রী-কন্যা সমেত গ্রামে ফিরে যায়। তারপর? 

বন্ধুরা - তার আর পর নেই ......

মানুষ কতোটা নৃশংস হতে পারে জানেন? কন্যাভ্রুণ না হয় ওষুধ খাইয়ে পেটের মধ্যেই মারা গেল। কিন্তু যেগুলো জন্মে গেছে? বন্ধুরা অবাক হবেন না। 

সদ্যোজাত কন্যাকে স্রেফ বুকের দুধ না খাইয়ে মারা হয়। আরও নৃশংস পদ্ধতি চান? মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে একগামলা দুধের মধ্যে চুবিয়ে রেখে মারা হয় !

আরও চাই? 

মুখের মধ্যে বালি ঢুকিয়ে দিয়ে মারা হয় ! গরম জলে ডুবিয়ে দেওয়া হয় ! মুখে আফিম দিয়ে মারা হয় !

বন্ধুরা সহ্য করতে পারছেন না? চোখে জল আসছে? ওই মায়েরা কিন্তু কাঁদে না। ওদের কাঁদতে নেই ! ওরা রাজপুত রমনী না? নাকি ওদের বুকের মধ্যেও রক্তক্ষরণ হয়?
বিশ্বাস করতে পারছেন না তো? ভাবছেন বানিয়ে বানিয়ে কাহিনী ফেঁদেছি ! তা মশাই, আপনাদের জন্য রইলো হাতে গরম তথ্যসূত্রের সমাবেশ-

তাহলে কি বোঝা গেল? কন্যাভ্রুণ অথবা শিশুকন্যা হত্যা সতীদাহের মতো কোনও প্রথা নয় যাকে শাস্ত্রবাক্য দিয়ে জাস্টিফাই করবার প্রচেষ্টা হয়েছিল। আজ থেকে দেড়শো বছর আগে ব্রিটিশরা 'Female Infanticide Prevention Act, 1870' পাশ করেছিল এই বর্বর কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। কিন্তু এই ২০১৪ সালেও কেন্দ্রীয় সরকারকে 'বেটি বাঁচাও' স্লোগান তুলতে হয় আমাদের ভারতে !

এইখানেই জনমত গঠনের প্রয়োজনীয়তা। এইখানেই একজন রামমোহন অথবা একজন বিদ্যাসাগরের অবদান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ