মিশন বগালেক ও কেওক্রাডং পর্বতশৃঙ্গ || সব্যসাচী সরকার


৩১আগস্ট২০১৭

ময়মনসিংহ থেকে রাত ০৮:০০টায় যাত্রা শুরু ট্রেনে; পরেরদিন সকাল ০৭:৩০টায় চট্টগ্রাম পৌঁছুলাম; সেখান থেকে সিএনজি যোগে নতুন ব্রীজ, সেখান থেকে বাস যোগে সাতকানিয়া কেরানিরহাট, এরপর আবার সিএনজি যোগে বান্দরবন বাসস্টপ, অটো দিয়ে রোমা বাসস্টপে পৌঁছে সেখান থেকে বাস যোগে রোমা বাজার পৌঁছুলাম; বেলা বেড়ে ০৩:৩০টা হয়ে গেল, আমাদের গাইড নিয়ে গেলো থানাপাড়া 'লেক ভিউ রিসোর্ট'-এ রাত্রি যাপনের জন্য; চমৎকার পরিবেশ, নিরবতা, নিস্তব্ধতা আর জ্যোৎস্না রাত- সব মিলিয়ে ০১সেপ্টেম্বর এভাবেই কাটলো;

০২সেপ্টেম্বর২০১৭

সকাল হতেই নাস্তা করে চলে গেলাম রোমা বাজার আর্মি ক্যাম্পে, সেখানে গাইড'ই সব ফর্মালিটি শেষ করলো, সেখান থেকে প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধপত্র আর ব্যাগ যাতে না ভিজে তার জন্য পলিব্যাগ কিনে নিয়ে থানাপাড়া পুলিশ ক্যান্টিনে রিপোর্ট করে যাত্রা শুরু হলো বগালেক-এর উদ্দেশ্যে; গাইড বলেছিলো ১৬কিমি পাহাড়ি রাস্তা হাঁটতে হবে, যদিও রাস্তার কাজ চলছে, আমরা হাঁটা পথই বেছে নিলাম; প্রতিটি পদক্ষেপ সতর্ক ও রোমাঞ্চপূর্ণ ছিলো কিন্তু সময় আরো কঠিন করে তুলছিলো পরিস্থিতি, হাঁটার গতি মাঝেমধ্যে বেশ ধীর হয়ে পড়ছিলো, তবুও চলা থামানোর অবকাশ নেই; আমাদের যাত্রাপথ মূলত নিম্নরূপ ছিলো-
রোমা বাজার- রোমা বাজার ক্যাম্পে এন্ট্রি- থানাপাড়া ক্যান্টিন অব পুলিশ-এ এন্ট্রি- থানাপাড়া- মুনলাই পাড়া- ৯কিলো. দোকান- ১১কিলো পাহাড়- শৈরাতুনপাড়া- প্রফুং মগপাড়া- কমলাবাজার- বগালেক; পথিমধ্যে উপরোক্ত বিভিন্ন পাড়াগুলোতে বিরতি দিয়ে কিছু খেয়ে রওনা হচ্ছিলাম, বিশেষ করে কলা, চা, বিস্কুট ছিলো আর সাথে ছিলো পাহাড়ের ঝর্ণার জল, যার স্বাদ আজো ভুলতে পারিনি, বোতলজাত মিনারেল ওয়াটার এর ধারেকাছে নেই; গন্তব্যস্থানে পৌঁছে সেখানকার আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করে সিয়াম দিদির কটেজে উঠলাম, দুপুর আর রাতের খাবার সেখানেই খেলাম; লেকের পাড়ে সবথেকে সুন্দর কটেজটি পেয়েছিলাম, যেখান থেকে দিন ও রাতে লেকের অসাধারণ মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকন করতে পাচ্ছিলাম, আর লেকের বারান্দায় শুয়ে জ্যোৎস্না রাত উপভোগ করা, ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়, শুধু অনুভব করতে হয়; বলে রাখা সাপের উপদ্রব চরম ছিলো, তাই কার্বলিক এসিড কটেজে নিয়ে রাতে ঘুমাতে হয়েছে;


০৩আগস্ট২০১৭

সকালের নাস্তা সেড়ে কেওক্রাডং আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হলো, গাইড জানিয়েছিলো ১০কিমি হাঁটতে হবে, তবে এবার চ্যালেঞ্জটা একটু নয় বেশ কঠিন, কারণ গতদিন পুরো রাস্তা বৃষ্টিতে ভিজে যে ১৬কিমি পথ পাড়ি দিয়েছি সেখানে ৭০০ফুট উচ্চতা এরপর ১০০০ফুট উচ্চতা পাড়ি দিতে হয়েছে কিন্তু এখন এটি আরো বেড়ে যাবে যেখানে কোথাও ১০০০ফুট উচ্চতার বেশি এবং ৬৫ডিগ্রী পর্যন্ত খাড়া রয়েছে, আর বৃষ্টি যে এ পথকে আরো দূর্গম করে তুলবে সেটা নিয়ে কারো কোন দ্বিধা ছিলোনা, ৩বন্ধু আর গাইড মিলে বৃষ্টির মাঝেই যাত্রা শুরু করলাম, আমাদের এবারের যাত্রাপথ নিম্নরূপ ছিলো-
পাতাঝিরি ঝর্ণা- চিংড়ি ঝর্ণা- লুমতং পাড়া যাত্রী ছাউনি- দার্জিলিং পাড়া- কেওক্রাডং; সেখানে লাল মুন থন বম(লালা)-এর ব্যক্তিগত কটেজে উঠলাম, আমরাই ছিলেম সেদিন কেওক্রাডং-এর পর্যটক; সেখানে পাশেই আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করে সবথেকে ভালো কটেজটিতে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা হলো; দুপুর আর রাতের খাবার লালা'র কটেজেই খেলাম, আর কেওক্রাডং চূড়া হতে মেঘরাজের আনাগোনা, সূর্যাস্ত উপভোগ, রাতের মেঘনীল আকাশ, পাহাড়ে গায়ে মেঘের আলতো ছুঁয়ে যাওয়াআসা, নিজেকে সেই নিস্তব্ধ, আধুনিক সমাজব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় নতুনভাবে চেনা হলো, ৩১৭৩ফুট উচ্চতায় পৌঁছানোর আনন্দ টা নেহাত সব দুঃখকষ্ট, একাকিত্ব, ব্যর্থতাকে ছাপিয়ে গেলো, বুঝতে বাকি রইলোনা নিজের শারীরিক, মানসিক সামর্থ্য দূর্জয়কে জয় করার জন্য এখনো দিব্যি ঠিক আছে, প্রয়োজন একাগ্র মনোসংযোগ; এভাবে আমাদের দিন কেটে রাত হলো;

০৪আগস্ট২০১৭

সকাল বেলা নাস্তা করে ০৯:২৫-এ বের হলাম সেই পথে, টানা ২৬কিমি হেঁটে সন্ধ্যা ০৬:৩০টায় এসে রোমা বাজারে আমাদের রিসোর্ট-এ এসে পৌঁছুলাম; সেখানে নির্ভেজাল রাত কাটালাম নিশ্চিন্ত ও প্রশান্তি নিয়ে, আমরা পেড়েছি নিজের সামর্থ্যকে ছাড়িয়ে যেতে, এ নিয়েই দিনশেষ হলো;

০৫আগস্ট২০১৭

সকালের নাস্তা সেড়ে আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করে নৌপথে রওনা হলাম ৩বন্ধু, সাঙ্গু নদী পুরো বান্দরবন জুড়ে ছড়িয়ে আছে, সেই নদীপথে ফিরলাম, পথে আর্মি ক্যাম্পে চেকআউট হলো, ভালোভাবেই বান্দরবন এরপর চট্টগ্রাম, সর্বশেষ ময়মনসিংহ পৌঁছুলাম; সব ভালোমতো সম্পাদিত হলো এটিই সবথেকে বড় বিষয়; ভালোলাগার জায়গা ছিলো অনেক, স্মৃতি হয়ে রইবে অনেক দৃশ্য, কিছু ছবিতুলে বা ভিডিও করে ধারণ করার প্রয়াস ছিলো, আবার টান অনুভব করছি এমনি এক যাত্রার...!


ভ্রমণ অভিজ্ঞতা জাল বেশ জড়ানো, এখানে এ জাল খোলা নেহাত সহজ হবেনা, তবে কিছু বিষয় যা জানা হয়েছিলো এ যাত্রায় তা শেয়ার করার গুরুত্ব অনুধাবণ করছি; আমাদের লক্ষ্য ছিলো তাজিংডং, জাদিপাই ঝর্ণা, কিন্তু যাওয়ার পর জানলাম কিছুসময় আগে সেখান থেকে ২জন পর্যটক অপহরণ হয়, যদিও অনেকে বলেছে তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি, তাই আর্মি বেশিরভাগ পর্যটন এরিয়া বন্ধ রেখেছে, যদিও বিশেষ অনুমোদন সাপেক্ষে কোন কোন টিম যেতে পাচ্ছে, আমরাও সেটা দেখেছি, যাই হোক সেটা বাদ, পরবর্তীতে আমি আরো খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পাই যে অপহৃত ব্যক্তিদ্বয় উদ্ধার হয়েছিলো কিন্তু তা গোপন রাখা হয়েছে, এতে অনেক প্রশ্ন আসে মনে, কিন্তু মূল প্রশ্ন ছিলো যারা অপহৃত হয়েছিলো তাদের সাথে ঐ অপহরণকারীদের সাথে কি কোন ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিলো, কারণ এর আগে এমন ঘটনা ঘটলেও পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ করা হয়নি; আমরা সেখানে আর্মি'দের যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখেছি, স্থানীয়দের থেকেও ভালোবাসা পেয়েছি, কেওক্রাডং-এর উত্তরাধিকারী লাল মুন থন বম ওরফে লালা শোনালো তার জীবনের গল্প, সেই গল্পের ফাঁকেই রোহিঙ্গা নিয়ে কিছু জানালো, শুধু তাই নয় সেখানকার একজন আর্মি কর্মকর্তা নিজ থেকেই জানালো রোহিঙ্গা এবং মায়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী কতটা নৃশংসতা চালাচ্ছে, কেওক্রাডং-এর পাশের পাহাড়ি পাড়া পাসিং পাড়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে, যাদের সকল চাহিদা সরকার আর্মি'দের মাধ্যমে পূরণ করছে, আর্মি কর্মকর্তা আরো জানালো যতটা বলা হচ্ছে তার বেশিরভাগ সৃষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্তৃক, কারণ এরা মায়ানমার স্বাধীনতা পূর্ব হতে মায়ানমারের আরাকান রাজ্যসহ পুরো পার্বত্যচট্টগ্রাম নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টারত, এরজন্য তারা বারবার মায়ানমার প্রশাসনের উপর হামলা চালাচ্ছে, শুধু তাই নয় মধ্যপ্রাচ্যসহ, পাকিস্তান, তুরস্কের মতো দেশগুলো এদের অস্ত্র মদদ দিয়ে আসছে, আর আমেরিকা কালপ্রিট তো রয়েছেই; লালা ও আর্মি কর্মকর্তাসহ আরো যে কয়েকজনের আলোচনার মর্মার্থ লক্ষণীয়; বর্তমান যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার একটি প্রধান উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করা, বাংলাদেশ আজ দীর্ঘপ্রায় ৩০বছর যাবত এদের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা করে আসছে, কিন্তু এ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছে, যা আইসিস, তালেবান বা আলকায়েদা সহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠন গুলো করে আসছে; এরা স্বল্প শিক্ষিত ও দরিদ্র হওয়ায় জঙ্গি মদতদানকারী দেশগুলো এদের ভরণপোষণ দিচ্ছে, এদের আয়ের আরেক বৃহৎ উৎস হচ্ছে মাদকদ্রব্য, বিশেষকরে ইয়াবা; যদিও মায়ানমারে মাদকদ্রব্য আইন বেশ কড়া, সেখানে প্রত্যন্তপর্বত অঞ্চলে এর ইয়াবা প্রস্তুতকরণ সহ বাণিজ্য প্রসার করছে, আর রুট হিসেবে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত ব্যবহার করছে; আর পুশইন নিয়ে একটু বলি- লালা জানালো স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ তাদের ভোটার বৃদ্ধির জন্য এদেরকে পুশইন-এ সহযোগিতাসহ তাদের প্রথম জন্মনিবন্ধন ও পরে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদানের প্রক্রিয়া চালিয়ে আসছে বহুদিন যাবত; জাতিসংঘ হিসেবে ৩/৪লাখ রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে শোনা গেলেও এর পরিমাণ আরো বেশি, কারণ এটি চলমান প্রক্রিয়া; বাংলাদেশে আজো পাকিপন্থী বীজ রয়েছে, যারা সবসময় ভেবে আসছে চীন ভারত সমস্যা বাড়ুক, চীন ভারত দখল করুক, এতেই ইসলামি শাসন, খিলাফত প্রতিষ্ঠার পথা সহজতর হবে, তাই তারা বারবার মায়ানমার আর্মি'র উপর হামলা চালাচ্ছে, যার দরুণ আর্মি শক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে; অস্বীকার করার সুযোগ নেই মানবতাবিরোধী ঘটনা ঘটেছে, যার প্রতিবাদ জানানো ও বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া বাঞ্চনীয়, কিন্তু এরসাথে আরো অনেক বিষয় রয়েছে- যেমন এখন অব্দি মহিলা, বৃদ্ধ আর শিশু পুশইন হয়ে শরণার্থী শিবিরে এসেছে অথচ পুরুষ যারা আছে তারা বেশিরভাগ জঙ্গি কার্যক্রমে লিপ্ত, তারা আসেনি; তারাই শিশু, নারী, বৃদ্ধ নিধন করে তার ভিডিও আপলোড করে ছড়িয়ে দিচ্ছে, কারণ ভিডিও গুলি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে সামনে থেকে করা হয়েছে, আর মুখোশধারী বা কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা নরপশু জঙ্গি গুলো এ কাজ করে সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে যেন সবাই এটিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বনাম মায়ানমার আর্মি না ভেবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা মনে করে; এদিক দিয়ে আমাদের দেশে দালালের অভাব কোনকালেই ছিলোনা, তারা ৫০০০-১০০০০টাকার বিনিময়ে তাদের নদী পাড় করে এখানে নিয়ে আসছে, আর ইসলামী আইনের ধোঁয়াতুলে নিরীহ নারীদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে বিয়ের নাম করে উচ্চমূল্যে বিক্রি করছে, আর তাদের বিয়ে করা নৈতিক আর ঈমানী দায়িত্ব মনে করে কট্টরপন্থী আর জামাতপন্থি স্বল্পশিক্ষিত তরুনরা বিয়ে করার জন্য এগিয়ে আসছে, যেন দুনিয়া উদ্ধার করছে; হাস্যকর বিষয় হচ্ছে যখন মায়ানমারে এ সমস্যা সমাধান প্রয়োজন, সেখানে আমাদের দেশের উগ্র মৌলবাদী ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো এখানকার বৌদ্ধ সম্প্রদায় কে হুমকি দিচ্ছে মেরেফেলার, তাদের মঠ ভেঙে ফেলার; এতেই সমাধান খোঁজার অপচেষ্টা প্রমাণ করে আমরা কতভাবে উগ্রবাদে জড়িয়ে আছি;

প্রাসঙ্গিক স্বার্থে বলা আবশ্যক- মায়ানমার সমস্যা সমাধানকল্পে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া চালানো প্রয়োজন, আমাদের সামর্থ্য প্রচুর নয়, যে সকল মুসলিমপ্রধান দেশ রয়েছে তারা কেন এখন অব্দি কোন পদক্ষেপ নেয়নি, শুধু চোখের জলে গা ভাসিয়ে কাজ উদ্ধার করতে চায়, যে সৌদিআরব ইয়েমেন-এ বিমান হামলা চালিয়ে শিশু নারী হত্যা করা হয়েছিলো তখন মুসলিমবিশ্ব কি ভূমিকা রেখেছে, এতদিন যাবত রোহিঙ্গা সমস্যা চলছে তাদের ভূমিকা অস্ত্র সাপ্লাই আর জঙ্গি তৈরির জন্য মসজিদ মাদ্রাসা তৈরি করা ছাড়া আর কি ছিলো, বাংলাদেশকে মসজিদ মাদ্রাসা তৈরির জন্য কোটি টাকার অনুদান দিতে চায় কিন্তু নির্যাতিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে তাদের ভূমিকা কি, সরলীকরণ করা বাদ দিয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ করতে হবে যে আমাদের সামর্থ্যানুযায়ী ভূমিকা রাখতে হবে, সাম্প্রদায়িকতার ধোঁয়া তুলে দেশকে অস্থিতিশীল করে পার্বত্য শান্তি চুক্তি কে স্যাটেলারদের হাতে নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে দেশকে দ্বিখন্ডিত করার অপপ্রয়াস নিয়ে আমাদের সচেতন ভূমিকা আবশ্যক...!


কাদের জন্য এ ট্যূর?
শারীরিকভাবে সুস্থ, কষ্টসহিষ্ণু, রোমাঞ্চ প্রিয় ।

কিভাবে যাবেন?
বাসে অথবা ট্রেনে চট্টগ্রাম পৌঁছে সেখানে বদ্দেরহাট বা নতুন ব্রীজ বাসস্টপ হতে বান্দরবন সরাসরি বাস পাওয়া যায় (এছাড়া ঢাকা হতে সরাসরি বান্দরবন বাসেও যাওয়া যায়), চট্টগ্রাম হতে সরাসরি বাস না পেলে সাতকানিয়ার বাসে চড়ে সাতকানিয়া পৌঁছে সেখানে মোড় থেকে সিএনজি'তে বান্দরবন যাওয়া যায়; বান্দরবন পৌঁছে সেখান থেকে রোমা বাসস্টপ অটো দিয়ে পৌঁছে রোমা'র বাস ধরতে হবে, পরের যাত্রা শুরু হবে নিম্নরূপ-
রোমা বাজার- রোমা বাজার ক্যাম্পে এন্ট্রি- থানাপাড়া ক্যান্টিন অব পুলিশ-এ এন্ট্রি- থানাপাড়া- মুনলাই পাড়া- ১১ কিলো পাহাড়- শৈরাতুনপাড়া- প্রফুং মগপাড়া- কমলাবাজার- বগালেক আর্মি ক্যাম্পে এন্ট্রি- বগালেক- পাতাঝিরি ঝর্ণা- চিংড়ি ঝর্ণা- লুমতং পাড়া যাত্রী ছাউনি- দার্জিলিং পাড়া- কেওক্রাডং= মোট ২৬ কি.মি.;

কেন শারীরিকভাবে সুস্থতা প্রয়োজন?
কারণ হতে পারে রোমা বাজার হতে যাত্রা পুরোটিই হেঁটেই করতে হতে হবে, রোমা থেকে বগালেক ১৬ কি.মি.; এটি টানা চলতে হবে, রাত হয়ে গেলেও বগালেক ছাড়া অন্য কোথায় থাকা যাবেনা; বগালেক হতে কেওক্রাডং ১০ কি.মি. হেঁটেই করতে হবে, মাঝপথে কোথাও থাকা যাবেনা; যাওয়াআসা মিলিয়ে ৫২ কি.মি., রাস্তা কিছুটা ভালো হলে হয়তো ৭ কি.মি. রাস্তা বাইক বা চান্দের গাড়ি(জিপসদৃশ গাড়ি) করে যেতে পারবেন; তবে আশার কথা হলো ২০১৮ সাল নাগাদ রাস্তার কাজ সম্পন্ন হলে পুরো রাস্তা গাড়িতে যাওয়া যাবে;

রোমাঞ্চকর কেন?
বগালেক মূলত একটি বৃহৎ জলাধার, যার গভীরতা ১১৫ ফুট আর এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ১০৭৩ ফুট উচ্চতায়, অপরদিকে কেওক্রাডং পর্বতশৃঙ্গ ৩১৭৩ ফুট উচ্চতায়; এ যাত্রা পুরোটা করতে হবে স্থানীয় গাইডের তত্ত্বাবধানে, কারণ গাইড ছাড়া রোমা থেকে আপনি কোথাও যাওয়ার অনুমতি পাবেন না, এখানে নিরাপত্তা বিষয়ে আর্মি যথেষ্ট সজাগ, এটি পুরোটাই তাদের নিয়ন্ত্রণে; তাছাড়া আপনি যে কেওক্রাডং যাচ্ছেন তার থেকে মায়ানমার সীমান্ত ৬৫কি.মি. মতোন, বুঝতেই পাচ্ছেন; হেঁটে যাত্রার জন্য পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য কাছ থেকে দেখার সুযোগ হবে, ঝর্ণার জলপান করেই আপনাকে তৃষ্ণা মেটাতে হবে, অভিজ্ঞতা হবে সত্যিকার 'মিনারেল ওয়াটার' কাকে বলে, আর আমরা বোতলজাত কি জল পান করছি; সরু পথ, ঘন জঙ্গল, মাঝেমধ্যে হয়তো স্থানীয় আদিবাসীদের দোকান বা পাড়া পড়বে, সেখানে বিশ্রাম নিতে পারেন কিছুসময়, চা-বিস্কুট-পাহাড়ি কলা খেয়ে ক্ষুধা মেটাতে পারেন, দামী ব্রান্ডের সিগারেট না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, আবার হাঁটা শুরু হবে, পথিমধ্যে উচ্চতম পর্বতসারি, সবুজের সমারোহ, ঝিঁঝিপোকার টানা পাখা ঝাপটানো শব্দ এ পাহাড়ি নিস্তব্ধতাকে যেন ছাপিয়ে যাবে; কোথাও হাজার ফুট টানা উঠতে হবে, নামতেও হবে আরো হাজার ফুট, আবার হাজার ফুট উঠবেন বাঁশে ভর দিয়ে, মাঝেমধ্যে সাপের দেখা পেতেও পারেন, থেমে সরে যান, চলে গেলে আবার চলা শুরু, জল ও ঘাস যেখানে সেখানে জোঁক থাকার সম্ভাবনা যথেষ্ট, কিচ্ছু করার নাই, জোঁক ধরবে যখন দেখবেন লবণ থাকলে তা ব্যবহার করে পা হতে ছাড়াবেন, নয়তো এমনিই টেনে ছাড়াবেন, আর টের না পেলে রক্ত খেয়ে এমনিই পড়ে যাবে; চলা কিন্তু থামবেনা, প্রকৃতি কতটা সুন্দর হতে পারে যা আপনাকে বিমোহিত করে রাখবে, এভাবে কষ্ট করেই বগালেক ও এরপর কেওক্রাডং পৌঁছাবেন; বগালেক-এর ধারে বাঁশের মাচার ঘরে কার্বলিক এসিড নিয়ে সাপের ভয় নিয়ে রাত্রিযাপন, দূর্দান্ত তাই না; কেওক্রাডং পর্বতশৃঙ্গ চূড়ায় পৌঁছে যখন নিজেকে দেখবেন মেঘ আপনার নিচে ও উপরে তখন শুধু চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করবে- "আমি কেওক্রাডং পর্বতশৃঙ্গ জয় করেছি"; এ জয় আপনার মানসিকতাই পাল্টে দিবে, আপনার ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা হয়ে যাবে, সত্যি বলছি; আর ফেরার সময় সাথে নিয়ে ফিরবেন- বম আদিবাসীদের উলের হস্তশিল্প, একগাদা ছবি, আর অনেক স্মৃতি;


  • ট্যূর পরিকল্পনা কি হবে?
১মদিন ১৬ কি.মি. যাত্রা করে বগালেক, সেখানে রাতে কটেজে থাকবেন, পরেরদিন সকালে নাস্তা সেড়ে ১০ কি.মি. যাত্রা করে কেওক্রাডং, সেখানে শৃঙ্গচূড়ায় কটেজে থাকবেন; এর পরেরদিন টানা যাত্রা করে কোথাও না থেকে রোমা পৌঁছুবেন, কষ্ট হলে শুধু ১১ কিলোর পাহাড়ে উঠতে হবে, বাকী পথ শুধু নামবেন, কিন্তু এতে সময় বাঁচবে ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাবেন, সব ব্যবস্থা গাইড করে দিবে;

বি.দ্র.- রবি/এয়ারটেল ব্যতিত অন্যকোন মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না এখন অবধি...!


  • কি কি নেয়া দরকার?
প্যারাসিটামল, মেট্রোনিডাজল, রেনিডিন, লোরাটিডিন জাতীয় ট্যাবলেট; মুভ জাতীয় ক্রিম, নি-ক্যাপ ও এ্যাংলেট(দুপায়ের জন্য), ব্যান্ডেজ, স্যাভলন লিকুইড, ওডোমস ক্রিম, ছোট জলের বোতল, রেইনকোর্ট/ছাতা, ক্যাপ এবং চলার জন্য গ্রিপ আছে এমন কেডস্/বেল্ট দেয়া স্যান্ডেল (অবশ্যই হালকা যেন হয়); জুতো সেলাই করার ব্যবস্থা কোথাও নেই, তাই সাবধান;


  • খরচ কেমন হতে পারে?
রোমা'তে খাওয়া প্রতিবেলা ২০০৳ ও দিন প্রতি থাকা ৩০০৳; 
বগালেক-এ খাওয়া প্রতিবেলা ১৭০৳ ও দিন প্রতি থাকা ২০০৳;
কেওক্রাডং-এ খাওয়া প্রতিবেলা ২৫০৳ ও দিন প্রতি থাকা ৩০০৳ লাগতে পারে প্রত্যেকের; অবশ্য কমবেশি হতে পারে;
গাইডকে দিন প্রতি ১০০০৳ দিতে হবে, ওর বাকী সব খরচ পর্যটকদেরই বহন করতে হবে(থাকা, খাওয়া, নাস্তা, সিগারেট, চা এগুলো);

কিছু লক্ষ্যণীয় বিষয়-

● ব্যাগের ওজন যত কম হবে যাত্রা ততটাই সহজ হবে;
● ব্যাগে কোন অবৈধ বস্তু বহন করবেন না, আর্মি চেকপয়েন্ট-এ চেক হতে পারে;
● গাইডের সাথে যাওয়ার আগেই যোগাযোগ করে নিতে হবে, মনেরাখা দরকার গাইডের পারিশ্রমিক আলাদা কিন্তু ওর থাকাখাওয়া পর্যটকদের নিজেদের বহন করতে হবে, মনে করে নিতে হবে- ও আপনাদেরই একজন;
● গাইডকে সম্মান দিতে হবে এবং ওর নির্দেশনা অনুযায়ী চলার মানসিকতা রাখবেন, প্রয়োজনে আলোচনা করবেন, উনি একমাত্র অভিভাবক আপনাদের ওখানে, সম্পর্ক কেমন রাখবেন বুঝতেই পারছেন;
● বান্দরবন হতে রোমা যাওয়াআসা লঞ্চেও করা যায়, কিন্তু তা এড়িয়ে যাওয়া শ্রেয়, কারণ একাধিক চেকপোস্ট-এ চেক হতে পারে, সাধারণত স্থানীয়রা ছাড়া কেউ যাতায়াত করেনা, ঝামেলায় পড়তে পারেন এমন কিছুই করা যাবেনা;
● মোবাইল, ক্যামেরা, ল্যাপটপ রোমাবাজার ব্যতিত অন্যকোথাও চার্জ করার কোন ব্যবস্থা নেই, সেখানে সৌরবিদ্যূৎ ব্যবহৃত হয়, যা দিয়ে শুধু লাইট জ্বালানো হয়, আর কিছু নয়;
● আদিবাসীদের অনুমতি ছাড়া উনাদের কোন ছবি নেয়ার চেষ্টাও করবেনা না, প্রয়োজনে গাইডের সহযোগিতা নিবেন;

দেখুনই একবার প্রচেষ্টা করে, জীবনকে নতুনত্ব দেয়ার সুযোগ সবসময় আর সব বয়সে হয়ে উঠেনা, তবে কেন থেমে থাকা...!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ