বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের কী দৃষ্টিতে দেখা উচিত? || আশানুর রহমান খান


মিস্টার নু (বার্মা স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা) রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। সহসভাপতি ছিলেন মিস্টার এম এ রশিদ ( রোহিঙ্গা), ইউ থিন হান ছিলেন জেনারেল সেক্রেটারি এবং অং সান ( অং সান সুচীর বাবা) ছিলেন সাহিত্য সম্পাদক। ১৯৩৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাগাজিনে Hell Hound Turned loose আরটিক্যাল লেখা ও তা প্রকাশ করার দায়ে মিস্টার নু ও অং সানকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করে। বিক্ষোভ সারা বার্মা জুড়ে ছড়িয়ে পরে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলার সময় সাধারণ বার্মিজরা জাপানের সাথে যোগ দেয়। আর ব্রিটিশরা রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিয়ে গঠন করে V-Force। V-Force যুদ্ধে জাপানীদের প্রতিরোধ না করে সাধারণ বার্মিজদের উৎখাত করতে থাকে। ধর্ষণ, খুন, অগ্নিসংযোগ। ফলে মাত্র দুই বছরে এদের হাতে নিহত হয় ২২ হাজার বার্মিজ।

বার্মিজরা প্রতিশোধ নিতে গিয়ে খুন করে প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা। ১৯৪২ সালের শেষের দিকে জাপানীরা বার্মা আক্রমণ করলে তারা নির্বিচারে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করে আগের খুনের বদলা নিতে। ফলে প্রায় ২০-২৫ হাজার রোহিঙ্গা এ পাশে ব্রিটিশ বাংলায় এসে আশ্রয় নেয়।বিশ্বযুদ্ধ শেষে আরাকানের মুসলিমরা মুসলিম লীগ গঠন করে পাকিস্তানের সাথে একীভূত হওয়ার জন্য। জিন্নাহ তাদের প্রস্তাবে সারা দেয়নি।

১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীন হইলে তারা পুনরায় জিন্নাহর কাছে প্রস্তাব দেয় আরাকানকে পূর্বপাকিস্তানের অংশ হিসেবে মেনে নেওয়ার জন্য। জিন্নাহ রাজী হয়নি। ফলে, রোহিঙ্গারা জিহাদের ডাক দেয় আরাকানে। ১৯৬২ সাল পর্যন্ত চলা সে যুদ্ধে উভয় পক্ষের অনেক রক্তক্ষয় হয়। সেই বছরেই বার্মার অবিসাংবাদিত নেতা মিস্টার নুর কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয় সামরিক জান্তা এবং তাকে হত্যা করে। হত্যা করে অং সানকেও।

নতুন সামরিক প্রধান ক্ষমতা নিয়েই তাদেরকে অস্ত্র সমর্পণে বাধ্য করে। ১৯৭৮ সালে রোহিঙ্গা ও বার্মিজদের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধলে প্রায় ২ লাখ শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়, যারা আর কোনো দিন ফেরত যায়নি। ১৯৮২ সালে বার্মা সামরিক সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করে।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা সেই দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। দেশটিতে গত প্রায় ৫৪ বছর সামরিক সরকার ক্ষমতায় ছিল। ফলে তারা চায়না দ্বারা প্রভাবিত ছিল। মাত্র গণতন্ত্র এসেছে। এখন তারা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এক বিশেষ অবস্থানে আছে। তাই এই সমস্যা রাজনৈতিক ভাবেই সমাধান করা সম্ভব বা উচিত।

আজ অফিসে আমার এক কলিগ আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে আপনার মতামত কী? আমি উত্তরে তাকে বলেছি, অবশ্যই তাদেরকে আমি আমার সীমানায় ঢুকতে দিব না। আমার কথার সাথে কিছু যুক্তিও ছিল --

১) রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের কোনো অস্থায়ী সমস্যা না। চিরস্থায়ী সমস্যা। যার সমাধান আশ্রয় দিয়ে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে করতে হবে। এর জন্য জাতীসংঘ আছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আছে। আন্তর্জাতিক আদালত আছে।

২) এই দেশে সেই ১৯৭৮ সাল থেকে ২ লাখ শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে, যাদেরকে গত চল্লিশ বছরে কেউ ফেরত নেয়নি। যাদের সবাই ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত এবং কক্সবাজারকে যারা এখন নিজেদের রাজ্য মনে করে।

৩) সেই দুই লাখ এখন কম করে হলেও ১৫ লাখে গিয়ে ঠেকেছে। প্রতিটা পরিবারে ৭/৮ টা বাচ্চা।

৪) রোহিঙ্গাদের অনেকেই ইতিমধ্যে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়েছে।

৫) বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও রোহিঙ্গাদের জিহাদী আন্দোলন কখনই এক নয়। তাদেরকে আশ্রয় দিলে একদিন বাংলাদেশকে পাকিস্তানের পরিণতি বরণ করতে হবে।

৬) ঘনত্বের দিক দিয়ে এই দেশের জনসংখ্যা সবার উপরে। আমরা নিজেদের মানুষের খাদ্য দিতে পারছি না।

৭) যদি অস্থায়ী সমস্যা হইত এবং মিয়ানমার বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি বলত যে ছয় মাসের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে তবে আশ্রয়ের ব্যাপার বিবেচনা করা যেত।

৮) এ দেশে আশ্রয় নেওয়া অনেক রোহিঙ্গা জিহাদী সংগঠনের সাথে জড়িত। ইতিমধ্যে নানা গোয়েন্দা তথ্যে তার প্রমাণ মিলেছে। অনেকেই প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে মারাও গিয়েছে। অনেকেই সামরিক ট্রেনিং পর্যন্ত নিয়েছে।

৯) রোহিঙ্গারা যদি ভাল হইত তবে অবশ্যই বার্মাকেই তারা তাদের নিজেদের দেশ মনে করতো। যেমনটা যে কোনো ছোট সম্প্রদায় মনে করে। কিন্তু দেখুন গত ৮০ বছর ধরে তারা যুদ্ধে লীপ্ত।

১০) প্রতিটা দাঙ্গার পিছনে কারণ অনুসন্ধান করেন, দেখবেন কোনো না কোনো ভাবে এরাই আগে সন্ত্রাসী কাজ করেছে। ২০১২ সালে একজন বার্মিজ মেয়েকে রেইপ ও হত্যা করার মধ্যে দিয়ে দাঙ্গা শুরু হয়।

১১) ২০১৭ সালে তারা এক সঙ্গে ৩০ টা পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ করে। অবশ্যই তা যে কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লীপ্ত হওয়া।

১২) পোপ মিয়ানমার সফরে না করে বাংলাদেশ সফরে কেনো আসতেছে?

১৩) সংসারে যদি নিজের ছেলেও বেকার ও অকম্মা হয় তবে বাপ তাকে এক সময়ে গিয়ে বাসা থেকে বেড় করে দেয়। যা বাপ, তুই তোর নিজের মতো করে খা।

১৪) রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আমরা কতো দিন পালবো? কেউ বলতে পারবেন কী?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

X

Never Miss an Update!

Join my newsletter to get the latest posts from littlemag.in directly to your inbox.