ইসলাম ধর্মের অকথিত গল্প।। সুষুপ্ত পাঠক


একদিন নবী মুহাম্মদ ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সারগিয়াস বসে মদ পান করছিলেন। এক পর্যায়ে মুহাম্মদ মদে বেহুঁশ হয়ে পড়লে কথিত আছে একজন সৈনিক নবী মুহাম্মদের বন্ধু সারগিয়ানকে তরোয়াল দিয়ে হত্যা করে তরোয়ালটি মুহাম্মদের পাশে রেখে দেয়। মুহাম্মদের হুঁশ ফিরলে সৈনিকটি দাবী করে মুহাম্মদ উন্মত্ত অবস্থায় তার বন্ধুকে খুন করেছে। কিন্তু মুহাম্মদ নেশাগ্রস্থ থাকায় তিনি স্মরণ করতে পারছিলেন না সৈনিকটির দাবী সঠিক নাকি মিথ্যে কথা বলছে…। ধারণা করা হয় এসব কারণেই মদকে নিষিদ্ধ করতে কুরআনে আয়াত নাযিল করা হয়েছিলো। ১৯০৮ সালে নিউওয়র্ক টাইমসে এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিলো যেখানে বলা হয়েছিলো, ‘এটি একটি দু:খিত গল্প প্রকৃতপক্ষে। মোহাম্মদ ছিলেন একজন মাতাল, তিনি এমনকি তার ভাল বন্ধুকে মেরে ফেলেছিলেন কিনা তাও জানতেন না’। হত্যার ইতিহাসটি নিউয়র্ক টাইমস এভাবে লেখে, ‘The famous print of the year, 1508, is an illustration of the story of the Prophet Mohammed and the Monk Sergius. Mohammed, when in company with his friend Sergius, drank too much wine and fell asleep. Before he awakened a soldier killed Sergius and placed the sword in Mohammed's hand. When the prophet wakened the soldier and his companions told him that while drunk he had slain the monk. Therefore Mohammed forbade the drinking of wine by his followers.
নিউইয়র্ক টাইমসের সেই আর্টিকেল পড়ুন এখান থেকে- https://timesmachine.nytimes.com/timesmachine/1908/11/01/104765880.pdf

১৫০৮ সনে আঁকা মুহাম্মদ ও সারগিয়াসের কাহিনীর চিত্রটি আমি লেখার সঙ্গে দিয়েছি। ইসলামের এই কাহিনীটি এক সময় বহুল শ্রুত ছিলো। কিন্তু কালক্রমে ইসলামের এসমস্ত গল্পগুলোকে আড়াল করা হয়েছে। আমি জানি এখনি একদল বামাতী সৈনিক আমেরিকার কোন কাগজের বিশ্বস্ততা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা শুরু করবে। তাদের ভগ্নিপতি ইসলামিস্টরাও ‘ইহুদীনাসারাদের’ লেখা কোনভাবেই বিশ্বাস করবে না্। কারণ নাসারারা ইসলামের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত! তাই সহি হাদিস থেকে দেখাই নবী মুহাম্মদকে উহুদের যুদ্ধের সময়ও সাহাবীরা মদ দিয়ে তাকে আপ্যায়ন করেছিলো তার দলিল। সহি মুসলিম শরীফে আছে, ''We were with the Prophet of Allah, and He was thirsty, and a man said: O prophet of Allah, Do you want to drink wine? Prophet of Allah said: Yes.The Man went to get the wine. The Prophet of Allah said: Make it Intoxicated. And He (Muhamad) Drank (Muslim-3753).” 

মজাটা হচ্ছে এই হাদিসগুলো বাংলায় অনুবাদ করার সময় মদকে নির্জলা পানি বানিয়ে দিয়েছে। আপনারা বাংলা অনুবাদে দেখবেন সেখানে লেখা হয়েছে নবী তৃষ্ণার্ত্ব অবস্থায় পানি পান করতে চাইছেন। আরবী ‘khamra’ শব্দটিকে চাতুরীর সঙ্গে পানি অনুবাদ করলেও হাদিসে লেখা ‘khamra’ শব্দটি মদকে বুঝায়। হাদিসে ‘Nabeed’ শব্দটিও আছে যেটাকে ওয়াইন হিসেবে বুঝানো হয়। এই লুকোচুরি জোচ্চুরি কারণ ইসলামে মদ নিয়ে পরবর্তীকালে ট্যাবু সৃষ্টি হয় যার কারণে মদ নিষিদ্ধ হবার আগে যে স্বয়ং নবী মুহাম্মদ মদ পান করেছিলেন সেটাকেই এখন গোপন করতে হচ্ছে। হযরত আয়েশা বর্ণিত হাদিসে দেখা যাচ্ছে নবীকে সকালে ও রাত্রে আয়েশা মদ পরিবেশন করতেন। ‘There are many incidents, such as Aisha pours wine for the prophet of Allah in morning and at night (Muslim-Drinks-3745). 
Also Aisha brought wine tothe Prophet from inside the Mosque (Muslim-AlHayd-451). 

আগেই বলে রাখি প্রকাশনা ভেদে হাদিস নম্বর নাও মিলতে পারে। তাই মুসলিম শরীফে ‘পানীয় অধ্যায়’ থেকে মূল হাদিসগুলো খুঁজে নেওয়াই ভালো হবে। যাই হোক, মদ নিষিদ্ধ হয়েছিলো বেশ কয়েকটি কারণে তার অন্যতম মুহাম্মদের সেই বন্ধুর কাহিনী, আলীর মসজিদে মাতলামী ও হযরত উমারের মদের প্রতি বিরূপতার কারণে। উমার চেয়েছিলো কুরআনে যেন মদ নিষিদ্ধের আয়াত নাযিল হয়। তাই ঘটেছিলো। পরবর্তীকালে উমারের শাসনকালে উমার মদ বিষয়ে কঠরতা অবলম্বণ করেন। নিজের পুত্র মদ পান করায় কথিত আছে তাকে পিটিয়ে নিজ হাতে হত্যা করেন। ইসলামে মদের প্রতি এইরকম ট্যাবু সৃষ্টি সূচনা সম্ভবত উমারের শাসনকাল থেকেই। যদিও ইসলামী খিলাফতে মদ কোনকালেই বন্ধ হয়নি। নিষিদ্ধ হওয়াতে সেটা গোপনে আড়ালে আবডালে চলে গেছে। মুসলিম খলিফাদের মধ্যে মদপ্য সংখ্যায় নেহাত কম নয়। তবে সবটাই পর্দার আড়ালে। আবার প্রয়োজনে জনগণের সঙ্গে ইসলাম দিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে মদের প্রতি কঠরতা প্রদর্শন তারা করেছে। জনগণের মদ পানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নিজেরাই আকন্ঠ মদ পান করে। খিলাফতে রাশেদীনের খলিফারাই কেবল নয়, পরবর্তীকালের আধুনিক যুগের মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর শাসকরাই মদ নিয়ে চরম ভন্ডামীপূর্ণ রাজনীতিটা করেছেন। বাকীদের উদাহরণ না দিয়ে আমাদের উপমহাদেশের উদাহরণ দেই তাহলেই চলবে। পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্ট মাছ যেমন পানিতে থাকে তেমন করে মদে ডুবে থাকতেন। সে-ই তিনি পাকিস্তানে মদ নিষিদ্ধ করেছিলেন জনগণের কাছে সাচ্চা মুসলমান সাজতে। জনগণও এই মদপ্যকে সাচ্চা মুসলমান হিসেবে দেখতে চেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে মদ জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো মুসলমা্নদের জন্য। পাকিস্তান ও বাংলাদেশে মদ এরপর পুরোপুরি অন্ধকার জগতের হাতে চলে যায়। মদ ছাড়া বাংলাদেশের এখন কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে আনন্দই হয় না। হলুদের অনুষ্ঠানে মধ্যরাতে বীয়ার পান একটা রীতিতে পরিণত হয়েছে। এই মদকে কিনতে হয় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। কাজটি বেআইনি তাই সব সময় গোপনে সাড়তে হয়। মদ নিষিদ্ধ হওয়াতে পুলিশ প্রশাসন এটিকে তাদের ঘুষের একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পেরেছে। অবৈধ বিধায় মদ হয়ে উঠেছে চড়া মূল্যের। সমাজে মদের এই উচ্চমূল্য ও পুলিশের বাড়াবাড়িতে হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়ার মত মাদক তার জায়গা নিয়েছে। এগুলো তুলনামূলকভাবে সস্তা। গোটা মুসলিম বিশ্বই মদের উপর ভেসে থাকলেও সবখানেই মদ নিষিদ্ধ। অথচ মদকে কুরআন কোনভাবেই মন্দ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেনি। কুরআন তো মদ ও জুয়াকে মানুষের জন্য উপকারীও বলেছে। يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا وَيَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ قُلِ الْعَفْوَ كَذَلِكَ يُبيِّنُ اللّهُ لَكُمُ الآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ  [তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, এ দু’টোয় রয়েছে বড় পাপ ও মানুষের জন্য উপকার। আর তার পাপ তার উপকারিতার চেয়ে অধিক বড়। আর তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তারা কী ব্যয় করবে। বল, ‘যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত’। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর (২:২১৯)।]

অর্থ্যাৎ, মদ ও জুয়া আল্লার কাছে উপকারী হিসেবেও বিবেচিত হয়েছে। কিন্তু এই দুটি মাধ্যমকে শয়তান কাজে লাগিয়ে মানুষের ক্ষতি করতে সক্ষম হয়। মুহাম্মদ মাতাল হয়ে জানতেই পারেননি তিনি বন্ধু সারগিয়াসকে হত্যা করেছিলেন কিনা…। এটা মদের দোষ নাকি ভোক্তার পরিমিতি বোধের দোষ? ইসলামে মদকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে মদের কোন মন্দ দিকই দেখাতে পারেনি। বরং বেহস্তবাসীকে সুস্বাদু মদ দিয়ে আপ্যায়িত করার কথা বলা হয়েছে। মদ খারাপ হলে বেহেস্তে কেন সেটা খেতে দিবে? একই জিনিস পৃথিবীতে খেলেই বা সমস্যা কি? অবশ্য এমন করে খাওয়া উচিত নয় যাতে করে হুঁশই ছুটে যায়!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ