বিষয় : নারী খৎনা || নেজাম নুরুল


নাম হল নারী খৎনা। এটি কম বেশি পুরো পৃথিবীতেই প্রচলিত আছে, তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় আফ্রিকা ও মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে। পুরুষ খৎনার সাথেও সবাই পরিচিত। তবে এটি নারী খৎনার মত ভয়ঙ্কর ও ক্ষতিকর নয়। (DW.DE) এর এক নিউজে দেখলাম, এই অমানবিক প্রথা বন্ধের উদ্দেশ্যে একটি বিশ্বব্যাপি ক্যাম্পেইন শুরু করেছে জাতিসংঘ। তবে সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে নারী খৎনা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

স্ত্রী যৌনাঙ্গের আংশিক কিংবা পুরোপুরি অপসারণের পদ্ধতিকে নারী খৎনা বলে। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা এ পদ্ধতিকে চার ভাগে ভাগ করেছে। 

পদ্ধতি ১: মেয়েদের যৌনাঙ্গের রন্ধ্র ও জি-স্পটের পাশাপাশি সবচেয়ে স্পর্শকাতর স্থানটি হল ক্লাইটোরিস বা ভগাঙ্কুর। এটিই একমাত্র অঙ্গ যার যৌন অনুভূতি ছাড়া আর কোন শারীরিক কাজ নেই। মেয়েদের পুলক বা অর্গাজমের জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ পদ্ধতিতে মেয়েদের এই ভগাঙ্কুরের সম্পূর্ণ অগ্রভাগ বা লম্বালম্বি কেটে অপসারণ করা হয়। 

পদ্ধতি ২: এ পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ ভগাঙ্কুর অপসারণ করা হয়। সেই সাথে লেবিয়া মাইনরার আংশিক বা সম্পূর্ণ অপসারণ করা হয়।

পদ্ধতি ৩: এ পদ্ধতিটা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। এর বিবরণ প্রথম যখন পড়েছিলাম তখন আমার গাঁয়ের লোম খাড়া হয়ে গিয়েছিল। এতটাই অমানবিক এই পদ্ধতিটা। বহিরযৌনাঙ্গের বিশেষ অংশ অপসারণ বা পুরোটাই অপসারণ এবং যোনিদ্বারকে সেলাই করে চিকন করে ফেলা হয়। লেবিয়া মেজরার ভেতরের অংশসহ পুরো লেবিয়া মাইনরা কেটে ফেলা হয়। পরে লেবিয়া মেজরা সেলাই করে দেওয়া হয়। নড়াচড়া করতে না পারে তাই মেয়েটির পা দুই থেকে ছয় সপ্তাহ বেঁধে রাখা হয়। পিউবিস থেকে মলদ্বার পর্যন্ত মাংস প্রাচীর ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। প্রস্রাব ও রজঃস্রাবের রক্ত বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ভালভার নিচের দিকে একটি জায়গা খোলা রাখা হয়। বিস্তারিত জানতে নেটে Infibulation লিখে সার্চ দিতে পারেন। 

পদ্ধতি ৪: এ পদ্ধতিতে উপরোক্ত পদ্ধতিগুলোর মত কোন টিস্যু অপসারণ করা হয় না। এ পদ্ধতিতে যা পরে তা হল; ভগাঙ্কুরে সুচ ফোটানো, যৌনাঙ্গ পুড়িয়ে ফেলা বা ক্ষত সৃষ্টি করা এবং যোনিতে তৃণলতা প্রবেশ করানো যাতে রক্তপাত হয় এবং যোনিদ্বার চিকন হয়।

এই অমানবিক প্রথা মূলত মুসলিম, খ্রিস্টান ও সর্বপ্রাণবাদীদের মধ্যে প্রচলিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে দেখা যায় আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ২৯টি দেশে প্রতি বছর ১২ কোটি নারী খৎনার যেকোন একটি প্রক্রিয়ার শিকার হচ্ছে। এটি মূলত পুরুষদের যৌন সুখ বৃদ্ধি এবং নারীর কুমারীত্ব বজায় রাখাসহ বিভিন্ন সামাজিক ভ্রান্ত কারনে প্রচলিত। যার কোন উপকারীতা তো নেই বরং শারীরিক ভাবে মেয়েদের বিকৃত করে দেওয়া হচ্ছে।

 এই প্রথা দূরীকরনে সম্প্রতি এগিয়ে এসেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের সচিব বান কি মুন গত বৃহস্পতিবার কেনিয়ার রাজধানি নাইরোবিতে এর ক্যাম্পেইন বা প্রচারের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, “সতীত্বের প্রমাণ হিসেবে নারীর এই যৌনাঙ্গচ্ছেদ বন্ধে পুরুষদের মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে এবং যারা বন্ধ করবেন বা করতে সাহায্য করবেন তাদের প্রশংসা করতে হবে।“ তিনি আরো বলেন, “এই প্রজন্মেই এই ধারা বা রীতি বন্ধ করতে হবে এবং এই অভ্যাসের যেন এখানেই সমাপ্তি হয়। কেননা এর ফলে নারীদের জীবনে নরকের অশান্তি নেমে আসে।“ 

জানি না এই উদ্যোগ কতটুকু সফলতা অর্জন করতে পারবে। জাতিসংঘের এই উদ্যোগের সফলতা কামনা করছি।জঘন্য প্রথা বিলুপ্তি হোক। পৃথিবীর বুক থেকে সকল বৈষম্য দূর হোক এবং মানবতার জয় হোক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

X

Never Miss an Update!

Join my newsletter to get the latest posts from littlemag.in directly to your inbox.