রাষ্ট্র কি সত্যিই চায় ধর্ষণ বন্ধ হোক? || মনিশ রায় চৌধুরী

প্রতিদিন সংবাদপত্র খুললেই একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা আমাদের চোখে পড়ে।
প্রাসঙ্গিকভাবেই শুরু হয় ‘দুশ্চরিত্রা’ নারীর ছোট পোশাকের ‘তত্ত্বের’ চর্বিতচর্বন।
কিন্তু, শতাংশের বিচারে তা কতটুকু?
পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় আজও অধিকাংশ ধর্ষণের ঘটনাই (যার ভিতর ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স সর্বাধিক) আমাদের চোখের আড়ালে থেকে যায়।

যদিও বা অভিযোগ দায়ের হল।
শুরু হল ধর্ষকের রাজনৈতিক ‘রঙ’ বিচার।
শুরু হয় রাজনৈতিক ‘দাদা’দের হুমকি এবং বাড়ির লোকেদের চাকরির প্রলোভন।
এতকিছুর পরেও যদি ধর্ষক গ্রেপ্তার হয়, তখন শুরু হয় ‘অন্তহীন’ বিচারের প্রক্রিয়া।
সমাজের চাপে ধর্ষিতা আত্মহত্যা করে ফেলে তবু শেষ হয় না ‘কাজীর বিচার’।
অনন্ত  প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে 'বিচার' শেষ হলে সাজা নির্ধারিত হয় যাবজ্জীবন কারাদন্ড।
অর্থাৎ, একজন ধর্ষককে আমাদের ট্যাক্সের টাকায় খাইয়ে পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখার ব্যবস্থা করে রাষ্ট্র।
অনেকে বলেন, এটা নাকি তাকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া।
ব্যতিক্রমী কিছু ক্ষেত্রে আদালত ‘ভুল’ করে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করে।
তখন তথাকথিত মানবতাবাদীরা (যারা মূলত ফান্ডেড এন.জি.ও.) কাঁদুনি গাইতে শুরু করে “ধর্ষকও তো মানুষ, তারও তো বাঁচার অধিকার আছে”।
অনেকক্ষেত্রে, তাদেরই খরচে একজন বর্বর ধর্ষক উচ্চ আদালতে আবেদন করার সুযোগ পায়।
তাদেরই অর্থে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট এবং অবশেষে রাষ্ট্রপতির দোরগোড়ায় মামলা গড়াতে থাকে।
এত কিছু পর্ব পার হলে তবে তো একটা ‘ধনঞ্জয়’-এর ফাঁসি হয়।
এন.জি.ও. বাবুরা বলেন, মৃত্যুদন্ড দিলেই কী ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে?
সাম্প্রতিককালের বিতর্কিত তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া’জ ডটার’-এ নির্ভয়ার ধর্ষক মুকেশের মুখেও উঠে এসেছিল সেই একই কথা।
সে নির্বিকারভাবে বলেছিল যে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হলে এরপর ধর্ষণের প্রমাণ লোপাট করতে ধর্ষিতাকে খুনও করা হবে।
একজন খুনি ধর্ষকের স্পর্ধাটা ভেবে দেখুন।
বন্ধুরা মুক্ত মনে ভাবলেই দেখবেন ধর্ষকরা শ্রেণিগতভাবে ‘লুম্পেন’।
এরা লোভী, ভিতু ও সুযোগসন্ধানী হয়।
এদের প্রত্যেকেরই চূড়ান্তভাবে মৃত্যুভয় আছে।
তাই মৃত্যুভয় থাকলে তারা এমন অপরাধ করতে দশবার ভাববে।
নির্দ্বিধায় বলতে পারি প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনাকে নথিবদ্ধ করে বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা বন্ধ করতে পারলে ধর্ষণ কে শূন্যে পরিণত করা অবশ্যই সম্ভব।
কিন্তু, ধর্ষকরা জানে ভারতীয় বিচারব্যবস্থার সাথে চু-কিৎকিৎ খেলে ধর্ষণ করেও তারা বহাল তবিয়তেই বেঁচে থাকবে।
তাই কুছ পরোয়া নেই।
ধর্ষণ চলছে, চলবে।

অতএব প্রশ্ন উঠতেই পারে, রাষ্ট্র কি সত্যিই চায় ধর্ষণ বন্ধ হোক?
বিতর্কিত তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া’জ ডটার’ ভারতীয় বিচারব্যবস্থাকে সমস্র বিশ্বের সামনে বিরাট প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল।
সেজন্যই কি রাষ্ট্রের এই গাত্রদাহ?

'ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি' এবং 'হিউম্যানিস্টস অ্যাসোসিয়েশন' -র পক্ষ থেকে ভারত সরকারের কাছে নির্ভয়া কাণ্ড সহ সকল ধর্ষণের ঘটনাকে
দ্রুত আইনের আওতায় এনে অন্যান্য সভ্যদেশগুলির মতো একমাসের ভিতর ধর্ষণের মামলার বিচার সম্পন্ন করে ধর্ষককে মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত করার আবেদন জানাচ্ছি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

X

Never Miss an Update!

Join my newsletter to get the latest posts from littlemag.in directly to your inbox.