অযাচিত_বাক্যব্যয়...! পর্ব-♦অচ্ছুৎ_মানব♦।। সব্যসাচী সরকার


"তুই তো জানোয়ার, ছোটলোক, তোর ভাবনাচিন্তা শুনলেই বোঝা যায়, সারাক্ষণ শুধু ঝগড়া-বিবাদ, কথা বললেও দোষ, না বললেও দোষ, আরে তাহলে করবোটা কি, বল তুই, করবোটা কি?"-বিপরীত মনোবিদ্যার বিষয়টি Atiq Nisikto অডিও হতে আমরা সহজেই অনুধাবন করতে পাচ্ছি, আর প্রভাব সম্পর্কে আমরা অবগত; লিংকটি দিচ্ছি-
কোন বিষয়ে কোন মানুষকে যখন বারংবার নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় তখন মস্তিষ্ক সেই নিষিদ্ধ কর্মটি করতে স্বপ্রনোদিত হয়, অর্থাৎ নেতিবাচক বা সমাজে গ্রহণীয় না হওয়া বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের জানার বা সংযুক্ত হওয়ার একটি আগ্রহ প্রাবল্য দেখা যায় হরহামেশাই; যদি আমরা জানি সমাজ ও ব্যক্তি মানসিকতা পরিবর্তনশীল সময়ের সাথে সাথে, তাঁর সাথে দেখা যায় একটা সময় অতিক্রান্ত হলে অনেককিছু হয়তো একসময় গোপনীয় মনে করা হতো, বা পাপ বলে মনে করা হতো, বা নেতিবাচক মনে করা হতো, সেগুলো আজ অনেককিছু সর্বসম্মতভাবে গৃহীত না হলেও "ওপেন সিক্রেট" হিসেবে প্রচলিত; আমাদের মুক্তচিন্তার জগতে তেমনি ঘটে চলেছে নিয়মিতভাবে, তার সাথে সংযোজন করা হয়েছে এমনি একটি বিষয় যার মাঝের পার্থক্যটুকু আমাদের দৃষ্টির আড়ালে চলে গেছে; একটু সহজ করি- মানুষের ব্যক্তিসত্ত্বা ও তাঁর ভাববাচক বিষয়বস্তুর প্রকাশে যে সত্ত্বা- এ দুয়ের মাঝে পার্থক্যকারী একমাত্র বিধেয় হচ্ছে সময়; কিভাবে? মানুষ যা ভাবছে তা হয় লিখে নয়তো অন্যকোন সংরক্ষিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করছে, সেটি ঐ মানুষটির ঐ সময়ের সাথেই সাযুজ্যপূর্ণ, যা অপরিবর্তনীয়, যেমন লেখকের সৃজনশীল কর্মকান্ড বা প্রামাণ্যচিত্র; কিন্তু ব্যক্তি মানুষ সময়ের সাথে তাঁর বৈষয়িক পরিস্থিতিসৃষ্ট উদ্ভূত কার্যকারণ গুলো তাঁর ভাবনাচিন্তায় প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে হতে পারে সে তাঁর পূর্ব সৃষ্ট সৃষ্টি হতে আদর্শগত ভাবেই দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু তাঁর সৃষ্টির জন্য তাকে অবশ্যই স্বাভাবিক ভাবেই নন্দিত বা নিন্দিত করা যেতেই পারে; অর্থাৎ ঐ সৃষ্টির দায় তাঁর সৃষ্টিকর্তার; তাহলে বোঝা যায় যে, কোন মানুষের সৃজনশীল সত্ত্বা দিয়ে বিবেচ্য ও অনুসরণ করলে সৃজনের সঠিক যাচাই হবে, ব্যক্তিসত্ত্বা কখনোই সেই সৃজনশীল কর্মকে প্রভাবিত করবেনা অনুসরণকারী বা পাঠক বা দর্শককে; আমরা যদি জন বার্জার-এর "Ways Of Seeing" বইটি দেখি তবে সেখানে আমাদের শিল্পীর শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সাধারণের তা যাচাইমানের তারতম্য বোধগম্য হবে, "নগ্নতাই অশ্লীলতা নয়!" এ বাক্যখানার যথার্থ বিচার করার সুযোগ হবে; আবার এম.এন.নুরুল.হক-এর "মৃত্যু" বইটি পাঠককে মৃত্যু নিয়ে তথাকথিত ভাবনার ও ভ্রান্তিপাঠ চর্চার একটি বিশ্লেষণমুখী তথ্যভিত্তিক যাচাই পথ দর্শিত করাবে; আমাদের নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি আগ্রহ বেশি, হয়তো নয় এ কারণেই পুরোনো বস্তাপচা মতবাদে সৃষ্ট বিশ্বাসে বিশ্বাসীদের তা নিয়ে চিন্তার অন্ত নেই, কারণ হোক সে ৫০০০হাজার বছর পুরোনো বা ১৪৫০বছর পুরোনো মতবাদ, তা যে আজ প্রশ্নবিদ্ধ তা নিয়ে যে বিশাল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পটভূমির ভিত গড়ে উঠছে তাঁর ভিত্তিমূল আজ উৎপাটিত হওয়ার আতঙ্ক সদা বিরাজমান, কখন কে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়ে হাজার বছরের বিশ্বাসের ভিত গুঁড়ে বালির প্রাসাদের ন্যায় ভেঙে পড়ে, এতে চলমান প্রক্রিয়া যদি বাধাগ্রস্ত হয়, আর তাই সেই বিপরীত মনোবিদ্যার প্রভাবকে কাটানোর প্রক্রিয়া হিসেবে মানুষের ব্যক্তিসত্ত্বাকে প্রাধান্য দিয়ে তাঁর বিতর্কিত সমালোচনার ক্ষেত্র সৃষ্টির প্রয়াস চলছে; আর এজন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার নাম করে সৃজনশীল, প্রগতিশীল, মুক্তচিন্তায় আস্থাশীল মানুষদের বাক স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে; আর এর জন্য কারণ দেখানো হয়েছে "অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত"; আচ্ছা প্রশ্ন হচ্ছে- অনুভূতির সীমা কি নির্ধারণযোগ্য যে কতটা হলে তা আঘাতপ্রাপ্ত তা সুনিশ্চিত করা সম্ভব; যেমন বর্তমানে একজন রাষ্ট্রসেবকের অভিমান প্রসূত বক্তব্যের রেশ ধরেই বলি- কোন কাজ সঠিকভাবে সম্পাদিত করার লক্ষ্যে কত অর্থ বাড়তি প্রদান করা হলে তা ঘুষ বলে গণ্য হবেনা, বা তা বকশিস হিসেবে প্রদর্শিত হবে, এর কি কোন সীমা নির্ধারণ সম্ভব, হতেও পারে, আমাদের বাঙালিদের পক্ষে যেহেতু চাঁদে মানুষের ছবি দেখা সম্ভব, খাদ্যের মাঝে অলৌকিক অক্ষর সনাক্ত করা সম্ভব, সম্মানহানির নাম করে মানুষ হত্যা সম্ভব, রাগের বশবর্তী হয়ে একটি শব্দ ৩বার উচ্চারিত হলে সারাজীবনের সঙ্গীকে ছুঁড়ে ফেলা গর্বোজ্জ্বল বিষয়, সর্বশ্রেষ্ঠ'র শ্রেষ্ঠত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার জন্য হত্যা জায়েজ, যৌনসম্পর্ক স্থাপনে কোন সম্পর্কের নৈতিকতার ধার ধারেনা, হাজার কোটি টাকার দূর্নীতি কোন বিষয়ই না, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি স্বাভাবিক বিষয়, ভেজালপণ্য কিনে হয় ধন্য টাইপের সমাজব্যবস্থায় হয়তো সম্ভব; সবই সম্ভব; যা অপরাধ, যা অন্যায়, যা অনৈতিক, অসংযম, যা অযাচিত তারই পুনরাবৃত্তি আমাদের বিপরীত মনোবিদ্যারই চর্চাক্ষেত্রই দেখায় না; ছোট্ট শিশুর ক্ষেত্রে এর প্রভাবকে যেমন ইতিবাচকতায় পরিবর্তন করা সম্ভব, কৈশোর হডে পরবর্তী সময়ে এ পরিবর্তন অনেক দুষ্কর; যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম'র জন্য ভয়ঙ্কর এক সমাজব্যবস্থার মাঝে ফেলে দেবে, যেখানে প্রশ্ন ফাঁস করে পরীক্ষা দেয়া, বা উন্মুক্তভাবে সিগারেট, মাদকদ্রব্য সেবনকে স্বাভাবিকতা, অবাধ যৌনতাকে প্রলুব্ধ করা সহ, নৈতিক যে অধঃপতনে নিয়ে যাবে তা ঠেকানো দায় হবে; পাঠ্যপুস্তকের প্রতি অনাগ্রহতা ক্রমবর্ধমান, তার বহির্ভূত বইয়ের প্রতি আগ্রহ প্রকাশনা সংস্থার হৃষ্টপুষ্ট অবস্থা দেখে ভালো মনে হলে অভ্যন্তরীণ অবস্থা কতটা নাজুক তা নতুন প্রজন্মের শর্টকার্ট পথে সেলিব্রেটি হওয়ার চর্চা দেখলেই বোঝা যায়; আমি হয়তো দূর্বল মস্তিষ্কজাত বলেই তালযন্ত্র শিখতে গিয়ে এক ত্রিতাল'কে নিয়ে সাধারণ কিছু জ্ঞান নিতে ১বছরের উপর সময় লেগেছে, আর বইপড়ার কথা বললে সময় সেরম লাগে; রণদীপম বসু'র "নাস্তিক্য ও বিবিধপ্রসঙ্গ" বইটিতে  মানুষের মনোজগতের বৈচিত্র্যময়তা, সাথে বৈষয়িক স্বার্থে মুখের মুখোশ গ্রহণ বর্তমান আলোচনাকে বেশ প্রভাবিত করবে, লেখক সত্ত্বা ও ব্যক্তিসত্ত্বার বিশ্লেষণ স্পষ্টতর হবে পাঠকের; এছাড়া প্রবীর ঘোষ-এর "মনের নিয়ন্ত্রনে যোগ-মেডিটেশন" বইটিতে মানসিকতা কিভাবে পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে, কিভাবে বৈজ্ঞানিক পন্থায় তা হতে উত্তরণ সম্ভব তা নিয়ে যুক্তিযুক্ত আলোচনাও রয়েছে; এছাড়া প্রবোধ সান্যাল-এর "দেবাতাত্মা হিমালয়" ভ্রমণ কাহিনী একজন মানুষের অনুসন্ধিৎসু মানসিকতার অনুপ্রেরণাও যুগাবে; শুরু করেছিলাম কিছু অভিমানের কথা ও বিপরীত মনোবিদ্যা দিয়ে, "না" শব্দটির মাহাত্ম্যকথা নিশ্চয় সবারই কিছুটা উপলব্ধ, তাই "না" করার ক্ষমতার যৌক্তিক প্রয়োগ শেখা আমাদের জন্য জরুরি, স্বার্থের জন্য সব মেনে নেয়ার অনৈতিক চর্চা হতে বেড়িয়ে আসাও জরুরি, সত্যকে টিকতে হয়না কারণ তা স্বমহিমায় উদ্ভাসিত, কিন্তু মিথ্যেকে অনেককিছু করতে হয়ে টিকে থাকতে হলে, আর এর জন্য "না" বলার ক্ষমতা অর্জনও আবশ্যিক; নয়তো আমার মতো অচ্ছুৎ মানুষ হিসেবেই গণ্য হবেন একসময়, আমি এতে গর্বিত- কারণ "চার্বাক" সম্প্রদায় অচ্ছুৎ'ই ছিলো তৎকালীন সমাজব্যবস্থা  ও সমাজবাদীদের চোখে, আমি তাদেরই অনুসারী...!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ