একটি জ্বলন্ত ঘটনা


==================================
" মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় দলিত সংগঠনগুলির বিক্ষোভ ফলে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে। ".... বি.বি.সি.

প্রাথমিকভাবে কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী ও দলিত সংগঠনগুলির মধ্যে হিংসায় দলিত একজনের মৃত্যু হয় সোমবার। তারপরেই হাজারে হাজারে দলিত শ্রেণীর মানুষ মুম্বাই শহরের উপকণ্ঠ সহ মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন রাস্তায় নেমে পড়েছেন। মঙ্গলবার প্রায় দেড়শটি বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। বহু জায়গায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। ট্রেন ও বিমান পরিষেবাও বিঘ্নিত থেকেছে সারাদিন।
বুধবার মহারাষ্ট্রে রাজ্যব্যাপী বনধের ডাক দিয়েছেন দলিত নেতা প্রকাশ আম্বেডকার এবং আটটি দলিত সংগঠন।
এই ঘটনার শুরু পুণে শহর থেকে।
সোমবার দলিত সংগঠনগুলি পুণেতে এক বিশাল সমাবেশ করেছিল ২০০ বছর আগের এক যুদ্ধ জয়ের বিজয় দিবস পালন করতে। ভীমা কোরেগাঁও যুদ্ধ নামে পরিচিত ওই যুদ্ধে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনী পুণের ব্রাহ্মণ পেশোয়া রাজাদের পরাজিত করেছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাহিনীতে বেশীরভাগ সদস্যই ছিলেন 'মাহার' নামক দলিত শ্রেণীর মানুষ। ব্রাহ্মণ রাজাদের বিরুদ্ধে সেই যুদ্ধজয়কে দলিত সংগঠনগুলি এখন পালন করতে চাইছে হিন্দুত্ববাদী আর এস এস-এর মতাদর্শের বিরুদ্ধে জয় হিসাবে।
ওই সমাবেশে গুজরাতের দলিত নেতা জিগনেশ মেওয়ানী, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা উমর খালিদ সহ জাতীয় স্তরের দলিত নেতা নেত্রীরা হাজির ছিলেন।সেখান থেকেই একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা পাথর ছোঁড়েন - যার জেরে শুরু হয় হিংসা । ধীরে ধীরে তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের অন্যান্য এলাকাতেও। একদিকে মুখ্যমন্ত্রী দেভেন্দ্র ফাদনবীশ, অন্যদিকে দলিত নেতৃত্ব - দুই তরফেই শান্তি বজায় রাখার আবেদন করা হচ্ছে।

          -: নাড়িয়ে দিলো এক আলোচনার টেবিল :-
====================================
সুমিত্রা:  (বম্বে থেকে)এখানকার খেটে খাওয়া মানুষ, যারা অটো ট্রেনে কাজে যায় বহু দূর, তাদেরই একজন খুব রেগে বললো-- সরকারি বাস জ্বালিয়ে কার লাভ? বন্ধ খুব খারাপ জিনিস।... উত্তরে আমি বললাম... কেন বন্ধ ডাকলো কি জানো? বন্ধ তো ডাকাই হয় অসুবিধা সৃষ্টি করে জনতার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে। শিখিয়েছেন গান্ধীজি স্বয়ং। অসহযোগ। আমি আজ সবজি বেচবো না, আমি আজ অটো চালাব না,  কেন বন্ধ ডাকা হলো? কার কী বলার আছে?.... আমরা রেগে গেছি।   তার সুবিধা নেয় স্থানীয় অসামাজিক /রাজনৈতিক সুবিধাবাদী গুন্ডারা। সেটা শহরেই বেশি হয়। তাতে দলিত নেতার বন্ধ ডাকাটা মিথ্যে হয়ে যায় না।  আর যে কোটি টাকার অপচয় লোকসান ইত্যাদি হয়, তাতে তো গরীব দলিত দেরও ব্যক্তিগত লোকসান হয়। তা সত্বেও কেন তারা মিছিলে যোগদান করে। নিশ্চয়ই তাদের কিছু বলার আছে!   এবার বলো এই আমরা ওরা বিভাজন কী করে শুরু হলো? ঠিক 1st কী ঘটনাটা ঘটেছিল পুণের কাছে?  200 বছরের পুরনো একটা আদিবাসী উৎসব এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো কেন? আর কারাই বা এর বিরোধীতা করল? কে কি জানো বলতো......

অরিন্দম :   সব সংসদীয় দলই জল মাপছে। উদ্দেশ্য ভোট টানা। যদি সামলাতে না পারে, এর পিছনে মাওইস্টদের হাত আছে, বলা হবে। কিছু আর্টিকলটা পড়েছি ওই ভাব দেখা গেছে । এই বিক্ষোভ কে কি শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের সংগ্রাম বলা যাবে? এটা কি একটা বিক্ষোভ না আন্দোলন? আন্দোলন হলে তার নেতৃত্বের লক্ষ বা দর্শন কি? এই ধরণের বিক্ষোভ বা আন্দোলন অর্থনীতিবাদের চোরাবালিতে তলিয়ে যাবে না তো?    

রাণা :  ক্ষোভ ছিল। ক্ষোভ জমেছিল। তা এই ইস্যু নিয়ে উত্তাল হয়েছে। অন্য কিছু নিয়েও হতে পারত। দলিতরা নিজেদের বিচ্ছিন্ন ও নিরাপত্তাহীন ভাবছে।  কিন্তু বিষয়টা 'জাত' ভিত্তিক সংরক্ষণের 'মায়াজালে' না আটকে যায়।   

অরিন্দম : প্রশাসন 'বহিরাগত' তত্ব আমদানি করা শুরু করেছে। তবে এই বছর, এই গণবিক্ষোভের পিছনে, মোদি সরকারের 'নিম্নবর্গীয়' মানুষের উপর প্রবল সন্ত্রাস অনেক যুগের জমে থাকা ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে বলে আমার ধারণা।  

অনাবিল :  আমার মনেহয় ভারতের বিভিন্ন মেট্রো শহর গুলোতে যে বিশাল আর্থসামাজিক বৈষম্য, কেউ কারো কথা শুনতে চায়না।  আর সেই ছোট ছোট ক্ষোভের পুঞ্জীভূত আকার নেয় বিস্ফারণ।  সেই ক্ষোভকে মোভটিভেট বা ডাইভাট করে চলে কিছু মাধ্যম বা ব্যক্তি বিশেষ। সেখান থেকেই তৈরিহয় অচলাবস্থা। সেই সংঙ্গে মেট্রো শহর গুলোর দৈনন্দিন বিশাল অর্থনৈতিক প্রবাহকে আঘাত করে।  এই অবস্থায় কিন্তু  শহরতলী বা গ্রামীণ ভারতকে খুবই কম পড়তে হয়।   আবার,  মেট্রো শহরের কিছু স্বত:স্ফূর্ত নাগরিক জাগরণ এইসব সাময়িক অচলাবস্থাকে ছাপিয়ে সার্বিক নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের রূপ নেয়।  

রাণা  : তবে এইসব আন্দোলনগুলো হয় বুদবুদের মত মিলিয়ে যায় বা কোন রাজনৈতিক দলের কাছে মাথানত করে দেয়। রিজওয়ানুর বা নন্দীগ্রামের নাগরিক আন্দোলন এক বিশেষ রাজনৈতিক দল হাইজ্যাক করে নিল। 

সুমিত্রা:  ঠিক। তারই চেষ্টা হবে। আর এই সুযোগে দলিত বা minority ছাত্রনেতা যারা সরকারের পক্ষে বিপজ্জনক তারা গ্রেপ্তার হবে। 

অরিন্দম : হ্যাঁ। সরকার তথা রাষ্ট্র। শুধু সরকার বিরোধী হলে 'বিরোধী দলের সাহায্য' পেলেও পেতে পারে। কিন্তু এই যুগ-যুগান্তরের হেজিমনির বিরুদ্ধে গেলে...??? 

সুমিত্রা : একদম তাই। বহু তথাকথিত শিক্ষিত মানুষও দলমত নির্বিশেষে রুখে দাঁড়াবে। 

রাণা : যুগ যুগান্তুরের সংস্কারের বিরুদ্ধে গেলে দুটো ঘটনা হতে পারে, ১) কিছুটা পরিবর্তিত হল। যেমন দলিতদের মুখ্যমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি বা অন্য পদে বসানো হচ্ছে। জাতপাতের মাতলামো যেমন কিছুটা দূরীভূত হয়ছে। সেইরকম আরো পরিবর্তনের দিকে এগোবে। দলিতদের মানুষ হিসেবে আরো বেশি কিছু প্রাপ্তিযোগ ঘটবে, ২) মূলস্রোত এই আন্দোলনকে গিলে খেয়ে নিল। আর্যরা যেমন অনার্য সংস্কৃতিকে নিজের মত করে পরিমার্জিত করেছে।  

অনাবিল : ভারতীয় জনগোষ্ঠীর মানসিকতা বহু বিভেদ; যেমন  জাতপাত, ধর্ম, বর্ণ,  রাজনীতি, ভাষা, জীবনচর্চার এতো বৈষম্য ; যা একমাত্র আবেগ দিয়েই একত্রিত করা সম্ভব।  তার বহু উদাহরণ আছে, আমি আর দিলাম না।  সেই আবেগের অন্ধত্ব বা যৌক্তিকতাই এতো বড় ভারতের সাংস্কৃতিক উত্তরণ বা অবতরণ পথ হয়ে এসেছে।  এই আবেগের সঞ্চারণ এর উপর নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ ভারতের গঠন।

অরিন্দম : রাণা , আমরা অনার্য না বলে, যদি প্রাক-আর্য বলি? আর অনাবিল , তোর কি মনে হয় ভারত আদৌ একটা নেশন?

অনাবিল : না, কোন দিন ছিলনা।  ভবিষ্যৎ এও হবে না।  এবং আজব হলেও এটাই সত্যি  সংবিধানে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র ওই বলেছে। যুক্তরাষ্ট্র কাকে বলে সেটাই জনগণকে জানতে দেয়নি সেই অন্ধ আবেগ। 

অনাবিল : একদম ঠিক। প্রবল বৈষম্য জিইয়ে রেখে 'ঐক্য আর অখণ্ডতার' কীর্তন।   শ্রেণী-শ্রেণী চেতনা-শ্রেণী দ্বন্দ্ব-শ্রেণী-সংগ্রাম...বিপ্লব। কিন্তু কোনো কিছুই তো অনিবার্য ভাবে ঘটবে না। কোনো বিশেষ শ্রেণীতে জন্মালেই যে সেই শ্রেণী-চেতনা গড়ে উঠবে, তার কোনো মানে নেই, তাই না? আজকের প্রেক্ষাপটে শ্রেণীর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ জরুরি, ও পরিবর্তনশীল।

সুমিত্রা:  সেই। কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে ... সেটাকে নিয়ে তাত্বিক ব্যাখ্যা আর আলোচনা। কিন্তু কী করা উচিত , কী করলে এখন ভাল হয়.... সেটা কে ঠিক করবে? আমরা ভাল ভাল আইডিয়া দিতেই পারি, কিন্তু এই ভয়ঙ্কর অসাম্য আর দুর্নীতির মধ্যে .... 

অনাবিল  : আমি সেটাই বারবার বলছি সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষার দ্বন্দ্বই বড় হয়ে উঠেছে।

সুমিত্রা : কোনও নীতি implement করা দুরূহ। তাই আমাদের চিন্তা, চেতনা কে ছড়িয়ে দেওয়া, মানুষকে প্রভাবিত করা (কট্টর না হয়ে) ... এটাই এখন কাজ।  'gene' এর পাশাপাশি একটা নতুন ধারণা 'meme' .... বিষয়টা memetics। জিনবাহিত হয়ে যেমন শারীরিক বৈশিষ্ট ছড়িয়ে যায়। মীম বা ভাবনা চিন্তা তেমনি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে যায়। এর থেকে মৌলবাদ , আতংকবাদ, রাষ্ট্রদ্রোহিতা ইত্যাদি সবই ছড়াতে পারে আবার ছড়াতে পারে যুক্তিবাদও। ছড়াচ্ছেও

রাণা  : এক্কেবারে ঠিক। তত্ত্বকথা আপাতত বইয়ে থাক। মানুষের মানবিক সম্মান রক্ষাটুকু রক্ষা করা আশু কর্তব্য।  

সুমিত্রা : সত্যিকারের শিক্ষার অভাবে ভুলভাল চিন্তা এগিয়ে যাচ্ছে। কোনো পুরোনো ঘটনাকে যখন আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ব্যাখ্যা করা হয়, তখন আমাদের প্রেক্ষিত টা দেখতে অনেক সময় ভুল হয়। 200 বছর আগের ভিমা কোরেগাঁও এর ব্যাপারটা ওই যুগে দলিতদের কাছে হয়ত একটা গর্বের ব্যাপার ছিল। সেটাকে স্বাভাবিকতার সঙ্গে দেখা কেন সম্ভব হবেনা? তাতে বাগড়া দেওয়ার অধিকার তো কারুর নেই। 

অনাবিল : একজন মানুষ দলিত ভেবে খুশি হলে এবং সেই অবস্থানে অনড় থাকলে ,  তার উত্তরণ কি সম্ভব?  এটাই চরম দ্বান্দ্বিকতা তার কাছে!  যেটা দেখেছি ডাইনী নিয়ে আদিবাসী সমাজে। একটা চলতি হাওয়া আছে আদিবাসী সংস্কৃতি বজায় রাখার নামে আদিমবাসী করে রাখার প্রক্রিয়া। এইদেখে আমরা একটা কথাই মনে হয়, আমি বা আমরাও তো আদিবাসী(মানবজাতির)। আমরা কি আকাশ থেকে টপ করে পড়েছি ? 

অরিন্দম : ঠিক। আমরা তাই। বাঙালির নৃতাত্বিক ইতিহাস তাই বলে। বাংলায় এই যে মতুয়া মহাসঙ্ঘ...এরা কি 'নিপীড়িত'???

অনাবিল  : নিপীড়িত সংরক্ষণ একটা আজব জিনিস!

অরিন্দম : ঠিক। পদবি, পেশা, জাতি...সব মিলিয়ে একটা সুবিধাবাদী ককটেল। এরপর, বর্ডার গেম, ক্রিকেট...

অনাবিল : আমরা পাশের বাড়ীর বৃদ্ধকে খেপা বলে খাপাই সঙ্গে পাকিস্তানকে গালাগাল দিই কাশ্মীর নিয়ে কথা বলার জন্য।

রাণা : আমরা যে নামেই ডাকি বা যে নামেই তারা খুশি হোক, মোদ্দা কথা এটাই ধর্মের শৃঙ্খলা দেখিয়ে ভারতের আদিম অধিবাসীদের বঞ্চিত করা হয়েছে ও পদে পদে অপমানিত করা হয়েছে......

অনাবিল : এটা আগেই স্বীকার করেনিয়েছি ওনারা অত্যাচারিত।  তাই বলে সাংস্কৃতিক উত্তরণ এর প্রশ্ন এলেই দেখা যায়,  সেই অত্যাচারের সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখবার মগোজধোলাই!  এটা কেন?

সুমিত্রা : রানার কথার সূত্র ধরে বলতে পারি আর্যরা অনার্য সংস্কৃতি কে পরিমার্জিত করেছে কথাটা সম্পূর্ণ ঠিক কি? যতদূর জানি প্রাক আর্য যুগে নারীর অবস্থান প্রায় পুরুষের পাশাপাশি ছিল। নারীর অবমাননা, বধূ বা বিধবা হত্যা... এগুলো ছিলনা। এখনো দ্রাবিড়দের মধ্যে ঘোমটা দিয়ে মুখ নিচু করে  চলার প্রথা নেই। তাই মনে হয় ভাল খারাপ বেছে নিয়ে সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে।  খারাপকে খারাপ বলে মেনে নিতে হবে। সেই জন্যই তো লাগাতার সাংস্কৃতিক আন্দোলন এত জরুরি। 
ব্যক্তিজীবনেও প্রতিটি কর্মী মানুষ, পরিবর্তন কামী মানুষকে মনে রাখতে হবে, দোষ ত্রুটি নিয়েই মানুষ। অনেকের অনেকের খুঁত চোখে পড়বে। শহুরে মানুষের মধ্যে ভন্ডামী বেশি।
সকলেরই ছোট ছোট দোষ আছে, ছোট ছোট খুঁত, লোক দেখানো ভদ্রতা, ন্যাকা কথা, অযথা খরচ, সময় নেই, তাই শর্ট কাট এ খুশি করা, অপ্রয়োজনীয় উপহার, সম্পদ জাহির হয়তো। 
তবু ভালোবাসা কি নেই? সঠিক বন্ধু খুঁজে নেওয়া, খুঁজে চলা আজীবন.... বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে যারা । আছেই তো।
দরকারে সৎ মানুষের কদর করা, আপ্লুত খুশিতে নিজের জিনিস ভাগ করে নেওয়া... তাও আছে।
তাই থাকবে।
ঠিক থাকবে.....

পৃথিবী চলতে থাকবে তাদের নিয়েই নিজের নিয়মে... যে নিয়মে গুহামানুষেরা বিপদের সময় একজোট হত।
হাল ছেড়না বন্ধু।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ