জঙ্গলের গারদে আটকে থাকা আসাদ নূরকে খোলা চিঠি।।রাণা হাজরা


বেয়াদপি ছাড়তেই হবে

ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে ভাববেন যে শান্তিতে বাড়িতে ঘুমোবেন, তা কি আর হয়! কেউ কি কখনো শান্তি পেয়েছে? মুরগি আগে না, ডিম আগের বিতর্কের মত ধর্ম আগে না, রাষ্ট্র আগে সেই বিতর্কও সমানে চলতে থাকবে। ধর্ম ও রাষ্ট্র এই দুই বন্ধু সেই জন্মকাল থেকে পরষ্পরের হাত ধরে আছে। আপনাদের মত দিন দুয়েকের ছোকরা যদি ভাবেন যে সেই ধর্মের শিকড় উপড়ে ফেলবেন, তাহলে তো চিরসখা রাষ্ট্র আর আপনার গালে চুমু দেবে না। চোখ বন্ধ করে থাপ্পড়ই দেবে। আপনি যদি নিজের বন্ধুর কারণে জীবন দিতে এগোতে পারেন, তবে ধর্মের সম্মান রক্ষার্থে রাষ্ট্র এগোলে আপনার কি আর গালমন্দ করা সাজে?

রাষ্ট্র যখন সেই শৈশবে হামাগুড়ি দিচ্ছে, কাঠামো টিকবে কী টিকবে না তাই নিয়েই সংশয়, ধর্মই তো তখন পিতার মত সেই শিশুকে কোলে তুলে তার পরিচয় দিল। জানাল এ তো শিশু নয়, এ দেবশিশু। দেবতার পুত্রকে আঘাত করার সাহস আর কে পায়! সভ্যতার উষালগ্নে ধর্মই তো মানুষকে শিখিয়েছিল সব কিছুর নিয়ন্ত্রক পরম দয়ালু ঈশ্বর। দেবতার দয়ায় এক শতাংশ মানুষ ৯৯% সম্পদ ভোগ করবে, বাকিরা আধপেটা, নাপেটা হয়ে থাকবে। এমন সুন্দর জগতের নিয়ন্ত্রণকারী ঈশ্বরের পুত্রকে চটাবে কোন মানুষ!

ধর্মের পরিচয়ে গরিমান্বিত হয়ে রাষ্ট্র ধীরে ধীরে পা ফেলতে শুরু করল। মিশরে, গ্রিসে, সুমেরুতে এই বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হল। দুই বন্ধুত্বে কী গলাগলি! বন্ধুত্বের দৃঢ় বন্ধনে দুজনেই শক্তি বাড়াতে থাকল। মিশরে ফারাও না পুরোহিত কে বেশি শক্তিশালী ছিল, তা আজও চর্চার বিষয়। রোমান সাম্রাজ্যে পা রেখে দুই বন্ধু আরো জোটবদ্ধ হল। তাও সেই কত পুরনো কথা। তখনো সহস্রাব্দ শুরু হয়নি। মাঝখানে আবার ভারতে গৌতম বুদ্ধ এসে একটু যেন ধাক্কা মেরে দিয়েছিলেন। যে ঈশ্বরের উপরে ধর্ম ও রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে, তিনি তাঁর অস্তিত্বকে অস্বীকার করে দিলেন। ঈশ্বর না থাকলে ঈশ্বরের মুখপাত্র ধর্ম আর ঈশ্বরের পুত্র রাজাকেই কিসের দরকার। সে ঘোর সংকটের সময়। অবস্থা বেগতিক বুঝে দুই বন্ধুই তখন বৌদ্ধদের বাবা-বাছা করা শুরু করল। আর সঠিক সময় আসতেই দুজনে মিলে শুরু করল উদোম প্যাঁদানি। ভারত থেকে মারের চোটে বিকৃত মুখের বৌদ্ধধর্ম সাগর পাড়ি দিয়ে শ্রীলঙ্কা, মালয়, জাপানে গিয়ে ঠাঁই পেল। আর অবশিষ্টাংশ ভারতেই হিন্দু ধর্মের এক শাখার মত রূপ নিয়ে দুয়োরাণির মত জীবন পেল।

যিশু ধর্মকেই কিছুটা অন্যরূপে প্রকাশ করতে গিয়ে কী বিপত্তি। রাষ্ট্র ঘোর অনর্থ ভেবে যিশুকে ক্রুশে ঝুলিয়ে দিল। পরে যিশুর অনুগামীরা রাষ্ট্রকে আরো সংহত রূপ দিল। ধর্ম ও রাষ্ট্রের বন্ধুত্বের রঙ আরো একটু প্রগাঢ় হল। মুসলিম ধর্ম এসে দুই আত্মা এক হয়ে মিশে গেল।

হজরত মহম্মদ যুদ্ধ করেছেন আবার ধর্ম প্রচারও করেছেন। ওসামা বিন লাদেন কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক দিয়েছেন আবার ধর্মের রক্ষাকর্তাও হয়ে দাড়িয়েছেন। দুই বন্ধু মিলেমিশে চলতে চলতে ইসলাম ধর্মে এক হয়ে মিলে গেছে। দুজনকে আলাদা করে চেনার উপায় নেই।

ধর্ম ও রাষ্ট্রের কৈশোর দশায় কোপার্নিকাস নিজের মতবাদ অপ্রকাশিত রেখে চিরবিদায় নিয়েছিলেন। ব্রুনোকে দুই বন্ধু মিলে হত্যা করল। সক্রেটিসকে জোর করে অসত্য বলতে বাধ্য করা হল। এরকম উৎপীড়নের অসংখ্য উদাহরণ দুই বন্ধু মিলে রেখে গেছে। দুই আত্মা এক হয়ে গেলে সে হয়ে ওঠে অতীব ক্ষমতাশালী। এই দুই আত্মা এক প্রাণের কাছে অভিজিৎ, ওয়াশিকুর, নীলেরা রক্ষা পায়নি। আপনারা বলবেন ওদের তো ধর্মীয় উগ্রবাদীরা কোপ মেরেছে, রাষ্ট্রের এতে কি দোষ! ভুল ভেবেছেন। এক বন্ধু অন্যায় করেছে, আর এক বন্ধু অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র সেজেছে। তাই এতগুলো মৃত্যুর কোন বিচার রাষ্ট্র করেনি। ধর্ম আছে বলেই রাষ্ট্রীয় শোষণ বিনা বাধায় টিকে আছে। এত অনাচার, তবু তো কখনো রাষ্টের টিকিতেও হাত পড়েনি। সেই ধর্ম যে কবেই তাকে দেবশিশু বলে দিয়েছিলেন। এখন পিতৃসম সখাকে কেউ যদি চোখ রাঙায়, রাষ্ট্র তার সমস্ত শক্তির প্রয়োগ না করলে, রাষ্ট্রের পতন হতে দেরি হবে না। তাই যখন মৃত্যুতেও মৃত্যুঞ্জয়ীরা থমকে গেল না, রাষ্ট্র আইন নামক ব্যারিকেডের আড়ালে ধর্মকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করবে। ধর্মবিরোধী, ধর্মীয় অনুভূতি, সামাজিক বিশৃঙ্খলা বিভিন্ন ওজনদার শব্দের প্রয়োগে ধার্মিক অনাচারগুলোকে আইনি কবচের মাধ্যমে সুরক্ষা দেওয়া হবে।

আসাদ নূর আপনি যখন দেখবেন ইসলামীয় গ্রন্থগুলোতে বিভিন্ন অবৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মাধ্যমে সামাজিক অনুভূতিগুলোকে আঘাতের চেষ্টা হয়েছে, চুপ থাকার অভ্যেস করুন। মানবিক অনুভূতি নামক অনুভূতিগুলো থেকে শত যোজন দূরত্ব তৈরি করুন। আধুনিক সমাজে উত্তরণের চেষ্টা থেকে বিরত হউন। 

ডারউইন বিরোধী ধর্মের কোন অভিযোজন হয় না। এক দুহাজার বছর পুরনো তত্ত্ব আজও চিরসত্য। সূক্ষ্ম অনুভূতি মানুষের থাকে, পশুদের থাকে না। জঙ্গলের রাজত্বে মানুষ সাজার চেষ্টা করলে জঙ্গলের আইনই তো আপনাদের উপর প্রয়োগ হবে।

তবু জঙ্গলের রাজত্বে আমরা আসাদ নূরের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ