মোদী : ইমেজ।। অনাবিল সেনগুপ্ত



বিগত সাধারণ লোকসভা নির্বাচন (২০১৪) এর প্রেক্ষাপটে  কিছু  কিছু তথ্য ও কিছু বিশ্লেষণ  লিখব লিখব করে লেখা হয়ে উঠেনি কিম্বা এখুনিই লেখবার  উপযুক্ত  সময় হয়তো।

১) শত নেতায় বিভক্ত বিজেপির মোদীজীকে প্রমোট:-

লোকসভা পূর্বতন  বিজেপির নেতা কে, তাই নিয়ে ওই দলের অন্দরে বিশাল লড়াই চলছিল এটা মিডিয়ার দৌলতে সবাই জেনেছি। দেখেছি  কিভাবে  একটি রাজ্যের মুর্খ্যমন্ত্রী  নেতা নির্বাচিত হল।  

মোদীজী  শিল্প ( শিল্পপতি)  বন্ধু।  দীর্ঘ ৮ বছরের গুজরাট রাজত্বকালে  মোদী  শিল্প তথা শিল্পপতিদের জন্য  সমস্ত কিছু  (নিন্দুকেরা  বলে ২০০২ দাঙ্গা  দিয়ে শুরু)  করেছেন।  মনে পড়ে ২০০৯ এ  জমিহারা উদ্বাস্তু টাটাদের  গুজরাটে পুনর্বাসন দিলেন।

২)   ৬৭ বছরের বিশস্ত  কংগ্রেসে ভরসাহীন বনিককুল:-

১৯৪৭  সালে ইংরেজ  থেকে কংগ্রেসে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রধান এবং প্রথম শর্ত ছিল বণিকদলের আনুগত্য।  এই আনুগত্যতাই  বহু  ব্রিটিশ  কলোনীয়ার  হিংস্র আইন  আজও  তার দাপট নিয়ে বর্তমান।
কংগ্রেসে  নেতৃত্ব এর অভাব, করা ডিশিসন নেয়ার মত নেতা নেই,  পরিবাররেই আটকা পড়েছ।  শিল্পবান্ধব (শিল্পপতি)  করা আইন তৈরিতে বা  প্রশাসনিক  নিয়ন্ত্রণ  ধীরে ধীরে  অপারগ হয়ে উঠেছিল কংগ্রেস।

মনে পড়ে যায়  পরমাণু চুক্তি,  পেনশন বিল, বিমা বিল,  এফ.ডি.আই বিল  ইত্যাদি বিভিন্ন নীতি নির্ধারক বিল নিয়ে  টালমাটাল  অবস্থা।  বনিককুলের ভরসায় ছেদ।

৩)  কংগ্রেস এর কফিনে পেরেক :-

The Right to Fair Compensation and Transparency in Land Acquisition, Rehabilitation and Resettlement Act, 2013  আইন পাশ করে  ১২৫ বছরের  বনিককুলের  আনুগত্যে  জল ঢেলে দিয়েছিল। 

 ১৮৯৪ সালে তৈরিকৃত Land Acquisition Act 1894  যা শিল্পপতিদের ইচ্ছা অনুযায়ী জমির ব্যবস্থা এবং  কোন পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ছাড়াই।

এই  লুটেরা আইন প্রয়োগ করে  ক্ষমতা  হস্তান্তরের পরবর্তী  ৬৭ বছরে  কংগ্রেস সরকার তথা  ইন্ডিয়ান গর্ভ:মেন্ট  বহু জমি হস্তান্তর করেছে শিল্পপতিদের।  বহু  সাধারণ মানুষ  উদ্বাস্তু  হয়েছে বহুবার।

এক বিজনেস পরিসংখ্যান বলছে  ভারতের  শিল্প  জমির ৯০%  এই আইনের মাধ্যমে লুপ্ত। এবং  উদ্বাস্তু  মানুষরা শুধুই জাতীয়তাবাদের হাওয়া খেয়েছে। 

৪)  প্রতিরোধের ইতিহাস এবং  শিল্পপতিদের আশংকা :-

বহু  আন্দোলন হয়েছে  জমিকেন্দ্রিক। বা বলা বাহুল্য জমিই  মুলত  আন্দোলনের উৎস। তাই  আন্দোলনের ইতিহাস  আলোচনা  না করে লেখার প্রেক্ষাপটে আসি।

'লাঙ্গল যার জমি তার' ৬০ এর দশক আওয়াজ উঠেছিল।   যা নকশাল আন্দোলন নামে খ্যাত। তার দমনের ইতিহাস সুদূর বিস্তৃতি লাভ করেছিল। সেই আলোচনা না বাড়িয়ে এটা বলা যায় ওই আন্দোলনই ভারতের ইতিহাসের জমি আন্দোনের নয়া দিশা নির্দেশ করে।

১৮৯৪ সালের  আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগের বিরুদ্ধে  ২০০১ সালের পর আন্দোলন ঘোষিত হয়। শোষক-শাসক থেকে শিল্পপতিগন কম্পিত হল ভয়। সেই লুটেরা ভয়  থেকেই  চালালো চরম দমন বা 'রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস'।
উড়িষ্যার  টাটা কারখানার জন্য  ২১ জন নিরীহ  আদিবাসী খুন করলো সরকার। সেই রাষ্ট্রীয় খুন অব্যাহত  রইলো  নন্দীগ্রাম থেকে সিঙ্গুর।
চরম 'রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে'র  বিরুদ্ধে  আন্দোলিত হল  সংঘটিত সাধারণ মানুষ। বিস্তারিত না গিয়ে ওই আন্দোলন ৩৪ বছরের স্বঘোষিত কমিউনিস্ট দলের জমিই চলে গেল। 

শোষক শাষক থেকে শিল্পপতি  চরম অবরোধে পিছে হটলো।  এই আন্দোলন 'নবজাগরণ ২০০৭'  নামে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে।

এই 'নবজাগরণ ২০০৭' থেকে  লাভ এবং ক্ষতি  দুইই নিয়েছে   শিল্পপতিদের দালাল  রাজনৈতিক দলগুলি।  যেমন লাভ করেছে  অসংঘটিত টি.এম.সি. আর ক্ষতি করেছে  ৩৪ বছরের সংঘটিত  সি.পি.এম.।

ওই লাভের  অংশ নিতে  মৃত্যুপথযাত্রী  কংগ্রেস
 বাধ্য হল  The Right to Fair Compensation and Transparency in Land Acquisition, Rehabilitation and Resettlement Act, 2013 বিল পাশ করতে।

এরপরই  কংগ্রেস বধ  শুরু করলো  তাদের বিশস্ত শিল্পপতিগন 2013 তেই ।

৪)  মোদী  ইমেজ :- 

বিগত লোকসভা নির্বাচনে  শিল্পপতিকুল ঝাঁপিয়ে পড়ল  একটি  ইমেজ তৈরিতে যে ভবিষ্যৎ এ সুগম করবে তাদের শোষণের পথকে। ইমেজ তৈরির কারিগর মিডিয়া থেকেই জানা গেল মাত্র ৫০০০ কোটি সাদা টাকা ব্যয় করেছে বিজেপি।

খরচ সার্থক হয়েছে,  মানুষ ছেড়ে  ইমেজ তৈরি করতে পেরেছে  শিল্পপতির দল।
৫)  এবার  প্রোপেট নৃত্য :-

বিদেশ নীতি  থেকে জমি নীতি শিল্পবন্ধু (শিল্পপতি)  মোদীজী এখন  ব্যস্ত  শিল্পপতিদের সামাজিক সুরক্ষা দিতে। উদ্বাস্তু সর্বহারা শিল্পপতিদের যোগ্য পুনর্বাসন হিসাবে ক্ষমতায় আসার ৩ মাসের মুধ্যে  অর্ডিন্যান্স জারী  করে 'The Right to Fair Compensation and Transparency in Land Acquisition, Rehabilitation and Resettlement Act, 2013' বাতিল করলেন।

এখন ব্যস্ত  সরাসরি নতুন জমি বিল এনে  পূর্বতন Land Acquisition Act 1894 সালের থেকেও  ভয়ানক লুটেরা আইন প্রবর্তন করে  প্রভুকে ভরসা যুগাতে চান।
৬) সেফটি ভালব:-
গত কংগ্রেসি UPA সরকার কমনওয়েলথ গেমস,  কালোটাকা, 2G, কোল কেলেংকারিতে সর্বোচ্চ নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত জড়িয়েছিল।  ওই চরম দুর্নীতির বিরুদ্ধে  নাগরিক সমাজ আরেকবার গর্জে উঠেছিল। আন্নাজীর নেতৃত্বে  দুর্নীতির বিরুদ্ধে তথা  শাষক রাজনৈতিক নেতাদের  চরম বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল সাধারণ নাগরিক সমাজ। বিগত লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীদের প্রধান এবং মূল নির্বাচনী ইস্তাহারই ছিল দুর্নীতিমুক্ত  সরকার।  
প্রচারের ক্যারিশ্মায়  স্বচ্ছতার দূত মোদীজী এলেন প্রধানমন্ত্রী রূপে।  এই দুর্নীতির সিস্টেম বজায় রাখতে  শাষকের শোষনের  বিরুদ্ধে ওঠা ক্ষোভকে প্রশমিত করার জন্য মোদীজী আনিলেন 'স্বচ্ছ ভারত মিশন'। 
হ্যাঁ  শিকার করছি ভারতের সাধারণ মানুষের  প্রাতঃকৃত্যের মত দৈনন্দিন কাজের সুষ্ঠুভাবে করার জ্ঞান নেই।  তার জন্য সচেতনতা তৈরি অবশ্যকরণীয় কাজ।  কিন্তু মোদীজী পূর্ববর্তী নির্বাচনী ইস্তাহার কি ভুলে গেলেন?  না 'স্বচ্ছ ভারত মিশনের'  নামে ওই  চরম দুর্নীতি বিরুদ্ধে ওঠা নাগরিক সমাজের  আন্দোলনকে বা ক্ষোভের  দৃষ্টি ঘোরাতে এই 'সেফটি ভালব' ব্যবহার করলেন?? 
ভালো খারাপ আমি বলছি না,  পূর্বতন  সামাজিক (?) প্রকল্পগুলি যেমন এ.আর. জি,  সর্বশিক্ষা, মিডডে মিল ইত্যাদি প্রকল্প টাকা কমিয়েছে আবার ১৪% বাড়িয়েছে সামরিক খাত, ২০ হাজার কোটি টাকা গঙ্গা জলে দিচ্ছেন মোদীজী।  
কিন্তু  দুর্নীতি ঘুণ হাটাতে স্বচ্ছ মানসিকতা তৈরিতে আপনার প্রয়াসশূন্য কেন মোদীজী?? 
মানসিক স্বচ্ছতাই আনতে পারে প্রকৃত সামাজিক সচ্ছতা।  স্বচ্ছতার নামে দুর্নীতি বিরুদ্ধে সাধারণ নাগরিক সমাজের ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হচ্ছে  শোষনের সেফটি ভালব  দিয়ে তা আটকানো যাবে না।

ইতিহাস বিস্মিত  না হয়ে  পূর্ববর্তী 'নবজাগরণ'কে  এগিয়ে  নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিতেই হবে।  না হলে  সাধারণ মানুষের 'ঘটি বাটি চাটি' হতে বেশী দেরী নেই। 
গা ভাসানো রাজনীতির বাইরে এসে সুস্থ মুক্তোচিন্তার প্রসার করুন।
                 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ