দ্যা ডুয়েল অফ আলিপুর।। অরিন্দম চ্যার্টাজী


সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘লখনোর ডুয়েল’-ছোট গল্পটি অনেকেই পড়েছেন। গল্পটিকে আলিপুরের একটি ডুয়েলের ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত বলে মনে করা হয়। কলকাতায় ডুয়েল! তাও আবার আলিপুরে! কি হয়েছিল আলিপুরে, কারা মুখোমুখি হয়েছিল সেই ডুয়েলে? একসময়ের সাহেব পাড়া বলে পরিচিত আলিপুরের আনাচেকানাচে আছে অনেক ইতিহাস, যেগুলি হয়তো খুব বেশি প্রচারের আলো পায়নি। আসুন আরও একবার খুঁজে দেখি পুরনো কলকাতার ধুসর হয়ে যাওয়া ইতিহাসের কয়েকটি পাতা।

আধুনিক কলকাতার অন্যতম অভিজাত এলাকা আলিপুরকে যে রাস্তাগুলি জড়িয়ে রেখেছে তার মধ্যে বেলভেডিয়ার  রোড অন্যতম। আলিপুর চিড়িয়াখানার ঠিক সামনে থেকে শুরু হয়ে মহিলা সংসোধনাগার এবং জাতীয় গ্রন্থাগারের পাশ দিয়ে আলিপুর থানা, ট্রাফিক গার্ড ও ভবানী ভবনকে পাশে রেখে হর্টি কালচার পার্ক পেরিয়ে আলিপুর রোডে মিশেছে এই রাস্তা। ম্যাপে দেখলে রাস্তাটির চেহারার সাথে মাছ ধরার বড়শির চেহারার মিল পাওয়া যায়। এই রাস্তার নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রাক স্বাধীনতা যুগের ইতিহাস। যা সময়ের প্রভাবে বিবর্ন। এই ইতিহাস সেই সময়ের যখন ভারতের রাজধানী ছিল কলকাতা। আজকে যে বিরাট জায়গা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে জাতীয় গ্রন্থাগার সেই জায়গাটি ছিল তৎকালীন ভাইসরয় অব ইন্ডিয়া-এর বাড়ি, নাম বেলভেডিয়ার এস্টেট।

  ১৯১২ সালে কলকাতা থেকে দিল্লীতে রাজধানী চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ইংরেজ শাসিত ভারতের রাজনীতি আবর্তিত হতো এই ৩০ একর জায়গা জুড়ে বেলভেডিয়ার এস্টেটকে  ঘিরে।  

তবে এই বাড়ি কিন্তু ব্রিটিশরা তৈরি করেনি। যতদূর জানা যায় এই বাড়িটি  তৈরি করেছিলেন মির জাফর, সময় ১৭৬০ সালের শেষ লগ্ন। পরে তিনি বাড়িটি ওয়ারেন হেসটিনস উপহার হিসেবে দেন। বিরাট প্রাসাদ এবং সামনে সবুজ ঘাসের গালিচায় সাজানো বাগান। এই সবুজ গালিচাতেই ঘটেছিল একটি হাড় হিম করা ডুয়েল। যার একদিকে ছিলেন ওয়ারেন হেস্টিন্স অন্যদিকে ছিলেন তারই ল অফিসার ফিলিপ ফ্রান্সিস। দিনটি ছিল ১৭৮০ সালের ১৭ আগস্ট।

যতদূর জানা যায় এই লড়াইয়ের পিছনে কারণটি ছিল পুরোপুরি রাজনৈতিক মতানৈক্য এবং ব্রিটিশ রাজের অন্দরের অর্ন্তকলহ। ওয়ারেন হেস্টিন্স মনে করতেন মহারাজা নন্দকুমারকে তার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছিলেন তারই সহকর্মী ফিলিপ ফ্রান্সিস। অন্য একটি সূত্র থেকে জানা যায় অ্যাংলো-মারাঠা যুদ্ধ নিয়েই দুই ব্রিটিশ কর্তার বিরোধ হয়েছিল। রোমহর্ষক এই লড়াই ছিল একটি পিস্তল যুদ্ধ। যেখানে আহত হয়েছিলেন ফ্রান্সিস।

 তবে ব্রিটিশ কর্তাদের মধ্যে ডুয়েল কিন্তু এটাই একমাত্র নয়। পুরানো কলকাতার ইতিহাস ঘাঁটলে আরও জানা যায় বর্তমানে যেখানে আলিপুর ব্রিজ ঠিক তার বিপরীতে একটি মাঠে দুটি গাছের মাঝে নিয়মিত ডুয়েল লড়াইয়ের আয়োজন করা হতো। লর্ড ক্লাইভ নিজেও একাধিক বার নাকি এই ডুয়েল লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন। তবে বেলভেডিয়ার এস্টেটের লড়াই ছিল অন্যগুলির থেকে একেবারেই ভিন্ন মাত্রার। যা পাল্টে দিতে পারতো ভারতের রাজনিতীর গতিপ্রকৃতি।

এরপর বেশ কয়েকবার হাত বদল হয় বেলভেডিয়ার এস্টেট। বর্তমানে এর মূল অংশটির দায়িত্ব আর্কিওলজিকাল  সার্ভে অফ ইন্ডিয়া-এর। বাকি অংশটি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের আবাসন। জানা যায় কলকাতার বেলভেডিয়ার এস্টেটের নামে অস্ট্রেলিয়ায় নিজের পারিবারিক সম্পত্তির নাম করন করেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক কনসাল এবং ব্রিটিশ শাসিত ভারতের এক অ্যাডভোকেট জেনারেল, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক রবার্ট প্রিন্সেস। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ